রবিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৬:৩৫
“দুনিয়া চাইলে—তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ো; আখিরাত চাইলেও—তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ো”

আল্লামা তাবাতাবায়ী (রহ.) নাজাফে অবস্থানকালে তাঁর জীবনের এক গভীর তাৎপর্যপূর্ণ ও স্মরণীয় ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি এই ঘটনাকে তাঁর আধ্যাত্মিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে উল্লেখ করেন। আল্লামা তাবাতাবায়ী (রহ.)-এর ভাষ্য অনুযায়ী, হাজী মির্জা আলী আকা কাজির সঙ্গে সেই ভাগ্যনির্ধারক সাক্ষাৎই ছিল তাঁর আত্মিক রূপান্তরের সূচনাবিন্দু। আত্মশুদ্ধি ও তাহাজ্জুদ নামাজ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর উপদেশ তাঁর ইলম, দার্শনিক ও ইরফানি সাধনার পথে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দেয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আল্লামা তাবাতাবায়ী (রহ.) বলেন— (ইরাকের ধর্মীয় নগরী) নাজাফে অবস্থানকালে এক সময় আমি একটি ভাড়াবাড়িতে বসবাস করছিলাম। তখনো আমি কোনো আনুষ্ঠানিক দারস বা পাঠচক্রে অংশগ্রহণ শুরু করিনি। একদিন হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। আমি দরজা খুলতেই এক মহান আলেম ঘরে প্রবেশ করলেন। তাঁর চেহারায় ছিল এক ধরনের অপার্থিব নূর ও আধ্যাত্মিক দীপ্তি। কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর তিনি প্রসিদ্ধ কবি হাতেফ ইসফাহানির একটি কবিতার অংশ আবৃত্তি করলেন—

“তোমার জন্য উৎসর্গিত হৃদয় ও প্রাণ,

তোমার পথে নিবেদিত সবকিছু—এই ও সেই।

এরপর তিনি গভীর স্নেহভরা কণ্ঠে বললেন—“যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে নাজাফে আসে, তার জন্য কেবল পাঠ্য জ্ঞান অর্জনই যথেষ্ট নয়; বরং জ্ঞানের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধি, আত্মসংযম ও নফসের পরিশুদ্ধতার প্রতিও মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য।”

এই মহান আলেম ছিলেন হাজী মির্জা আলী আকা কাজী। আল্লামা তাবাতাবায়ী (রহ.) বলেন, সেই প্রথম সাক্ষাৎই আমার জীবনের গতিপথ আমূল পরিবর্তন করে দেয় এবং আমাকে আত্মিক সাধনার এক নতুন পথে পরিচালিত করে।

কিছু সময় পর ‘সম্ভাব্য সত্তা’ (মুমকিনুল উজুদ) ও ‘অবশ্যসত্তা’ (ওয়াজিবুল উজুদ)-এর পারস্পরিক সম্পর্ক আমার কাছে জটিল ও অস্পষ্ট হয়ে ওঠে। যদিও আমি জানতাম যে ওয়াজিবুল উজুদ অপরিহার্য সত্তা এবং মুমকিনুল উজুদ সম্ভাব্য সত্তা, কিন্তু এই দুই সত্তার সম্পর্কের প্রকৃত স্বরূপ তখনো আমার কাছে স্পষ্ট হচ্ছিল না। অবশেষে একদিন হাফিজের একটি গজল পাঠ করার মাধ্যমে বিষয়টি আমার অন্তরে উন্মোচিত হয়। আমি উপলব্ধি করি যে সম্ভব সত্তা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল, তাঁর দয়ায় টিকে আছে এবং বান্দাদের প্রতি আল্লাহর আকর্ষণ তাঁর অসীম রহমত থেকেই উৎসারিত।

আরেকদিন এক ঘটনা ঘটে—মরহুম উস্তাদ হাজী মির্জা আলী আকা কাজী আমার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি হঠাৎ থেমে আমার কাঁধে স্নেহভরে হাত রাখলেন এবং বললেন— “বৎস! যদি দুনিয়া চাও—তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করো; আর যদি আখিরাত চাও—তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করো।”

আল্লামা তাবাতাবায়ী (রহ.) বলেন, এই সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর বাক্যটি আমার হৃদয়ে এমনভাবে প্রোথিত হয়ে যায় যে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমি তাঁর সান্নিধ্য ও আধ্যাত্মিক পথ থেকে বিচ্ছিন্ন হইনি। তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক, যোগাযোগ এবং পত্রালাপ আজীবন অব্যাহত ছিল এবং আমি সর্বদা নিজেকে তাঁর শিষ্য ও পথনির্দেশনার আলোয় পরিচালিত করেছি।

গ্রন্থ: পাসদারানে হারিমে ইশ্‌ক, রচয়িতা: আয়াতুল্লাহ সাআদাত পরওয়ার (রহ.)

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha