হাওজা এজেন্সি নিউজের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামী ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্রগুলোর পরিচালক আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আরাফি আজ সকালে গিলান প্রদেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন: তিনি গিলান প্রদেশের দীনি, আধ্যাত্মিক ও বিপ্লবী ইতিহাস এবং এখানকার মহান আলেমদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্মরণ করে বলেন, আমরা ঈদে গাদিরের প্রাক্কালে রয়েছি এবং এটা মনে রাখতে হবে যে, গাদির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তবে আমরা এমন একটি মতবাদের অনুসারী যারা মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের ওপর জোর দেয়।

আমাদের কাছে ‘ঐক্য’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

তিনি আরও বলেন, ইসলামী বিপ্লবের কথোপকথন এবং ইমাম (রহ.) ও রাহবরের (নেতা) উপরোক্ত জোর এই যে, আমাদের একটি সামগ্রিক ইসলামি পরিচয় থাকা উচিত এবং আমরা আমাদের বৈজ্ঞানিক ও জ্ঞানভিত্তিক সংলাপে ঐক্য ও সংহতি অর্জনের দিকে অগ্রসর হই। আমরা আহলে বাইতের (আ.) শিক্ষাকে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করি ও তার প্রতি দৃঢ়ভাবে প্রতিরক্ষা করি, তবে একইসঙ্গে মুসলিম ঐক্য আমাদের কাছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আরাফি বলেন, কখনও কখনও কেউ গাদিরকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করে যা ইসলামে বিভাজন সৃষ্টি করে — এই ধরনের ব্যাখ্যা আমরা গ্রহণ করি না। আবার অন্যদিকে এমন ব্যাখ্যাও রয়েছে যা গাদিরের প্রকৃত সত্যকে উপেক্ষা করে, এটিও আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

গাদির ও এর সংস্কৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা শক্তভাবে এর পক্ষে অবস্থান করি

তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে, গাদির ও এর সংস্কৃতি অত্যন্ত মূল্যবান ও অনন্য এবং আমরা এর পক্ষে শক্ত অবস্থান নিই, তবে এমনভাবে নয় যাতে তা ইসলামী বিশ্বে বিভেদ সৃষ্টি করে।

ইসলামী বিপ্লবের মূল শ্লোগান হচ্ছে উম্মাহর ঐক্য ও শত্রুর মোকাবিলা

খবরগানের উপ-সভাপতি আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন, ইসলামী বিপ্লবের মূল স্লোগান ছিল ইসলামি উম্মাহর পরিচয়ের প্রতিরক্ষা এবং ঐক্য রক্ষা করা, যাতে আমরা শত্রুদের মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের ধর্ম ও মতবাদের সুরক্ষা করতে পারি। তাই গাদির ও ‘নাহজুল বালাগা’র শিক্ষার জন্য কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি, আমরা ইসলামি বিশ্বে ঐক্যবদ্ধ কথোপকথনের ওপরও গুরুত্ব দিই।

মহান ব্যক্তিত্বদের নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়া দরকার

আরাফি আরও বলেন, গিলান প্রদেশে অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্ব ছিলেন ও আছেন, যারা দীনি, সাংস্কৃতিক, জাতীয় এবং একাডেমিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এগুলো গর্বের বিষয় এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের পরিচয় তুলে ধরা দরকার।

তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন সফরে বারবার বলেছি, যে প্রদেশ এগিয়ে যায় তা শিক্ষা, হাওজা (ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ের ওপর নির্ভর করে। তবে আমি সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিই সাধারণ শিক্ষাকে, কারণ সমাজের যেকোনো উন্নতির মূল ভিত্তি হলো একটি শক্তিশালী শিক্ষা ব্যবস্থা, যার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকা জরুরি।

বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির জন্য পরিকল্পিত রোডম্যাপ প্রয়োজন

তিনি আরও বলেন, যদি আমাদের বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ, পরিকল্পনা ও লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসূচি থাকে, তাহলে অবশ্যই সফলতা আসবে।

গিলান একটি আন্তর্জাতিক প্রদেশ

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গিলান একটি আন্তর্জাতিক প্রদেশ, যেখানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা সম্ভব। আমাদের ‘জামে আত-মুস্তাফা’ আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, এই ধরণের উদ্যোগ বাস্তবায়নযোগ্য এবং অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে রূপান্তরের জন্য একটি রোডম্যাপ ও পরিকল্পনা অপরিহার্য এবং এটি তখনই বাস্তবায়নযোগ্য যখন হাওজা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় থাকে। বিশেষ করে যদি এই রোডম্যাপ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে প্রভাব বিস্তার করতে চায়।

আমরা হাওজার মধ্যে একটি শক্তিশালী রূপান্তরের সাক্ষী হচ্ছি

আরাফি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাওজাহগুলোতে বৈচিত্র্যময় রূপান্তরমূলক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, বিশেষ করে ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার সেঞ্চুরি সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাওয়ার পর থেকে আমরা হাওজার মধ্যে একটি আরও শক্তিশালী রূপান্তরের সাক্ষী হচ্ছি। এছাড়াও, আমরা গিলানসহ বিভিন্ন প্রদেশের সম্পদকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারি।

শেষে তিনি বলেন: হাওজা কেবল দীনি ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাস রক্ষায় নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যার মোকাবিলায় আরও বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত। এবং আমাদের উচিত দ্বিগুণ প্রভাবশালী হওয়ার চেষ্টা করা।