হাওজা নিউজ এজেন্সি: নাহজুল বালাগার ৬৪ হিকমতে বলা হয়েছে,
أَهْلُ الدُّنْیَا كَرَكْبٍ يُسَارُ بِهِمْ، وَ هُمْ نِيَام
দুনিয়ার মানুষ সেই কাফেলার মতো, যাদের চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে, অথচ তারা ঘুমিয়ে আছে।
ব্যাখ্যা: ইমাম আলী (আ.)-এর এই সংক্ষিপ্ত অথচ গভীরতাপূর্ণ বাণীতে দুনিয়ার গাফিল ও ভোগবিলাসে মগ্ন মানুষদের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, এই শ্রেণির মানুষ যেন এমন একটি কাফেলার যাত্রী, যারা গন্তব্যের দিকে চলেছে, অথচ ঘুমিয়ে আছে এবং সচেতন নয়।
এই দুনিয়া আসলে আখিরাতের পথে একটি যাত্রা। এই পথে আমাদের জিন্দেগির মুহূর্তগুলোই হলো রসদ ও পাথেয় সংগ্রহের সময়। কিন্তু যারা এই জীবনকে শুধুই দুনিয়ার উপভোগের জন্য ব্যয় করে, তারা যেন ঘুমন্ত যাত্রী—যাদের কেউ (যেমন উটচালক) গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তারা নিজেরাই জানে না কোথায় যাচ্ছে।
এই যাত্রার শেষ বিন্দু হলো মৃত্যু। তখনই মানুষ ঘুম ভেঙে দেখে সে কতটা খালি হাতে এসেছে। এই প্রসঙ্গে বিখ্যাত হাদীসে এসেছে:
“মানুষ ঘুমন্ত, যখন তারা মারা যায়, তখন জেগে ওঠে।” [বিহারুল আনওয়ার, খন্ড- ৪, পৃষ্ঠা- ৪৩]
অন্যত্র ব্যাখ্যা করেছে এভাবে যে, মানুষ আসলে এমন এক ব্যবসায়ী, যে অস্থায়ী দুনিয়ায় একটি সীমিত মেয়াদের বাজারে প্রবেশ করে। তার পুঁজি হলো সময়—দিন, রাত ও জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত। কিন্তু যদি সে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়, অর্থাৎ গাফিল ও অক্রিয় থাকে—তবে সে পুঁজি হারিয়ে ফেলে, আর লাভের পরিবর্তে শুধু অনুশোচনাই অর্জন করে।
এক কবির কথায়:
“পুঁজি হারালাম, কোনো বাণিজ্যও হলো না—
দুঃখ ও হতাশা ছাড়া কিছুই কিনতে পারলাম না!”
মূল উৎস ও সূত্র: এই বক্তব্যটি নাহজুল বালাগার ৬৪ নম্বর হিকমত থেকে গৃহিত এবং একই মর্মে ইমাম আলী (আ.)-এর অন্য একটি বাণীতেও উল্লেখ আছে—তিনি তাঁর পুত্র ইমাম হাসান (আ.)-কে বলেন, “জেনে রেখো, যে ব্যক্তি দিন ও রাতকে নিজের বাহন বানায়, সে বাহ্যিকভাবে অচল থাকলেও তা তাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।"
এই দুটি বাণী একত্রে 'تمام نهجالبلاغه'-তে ইমাম হাসানের প্রতি ইমাম আলীর অসিয়তনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ইমাম আলী (আ.)-এর এই হিকমত আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সময় অবহেলার কিছু নয়। প্রতিটি মুহূর্ত আখিরাতের পথে একটি সিঁড়ি। দুনিয়ায় গাফিল থাকা মানে, গন্তব্যে পৌঁছে শূন্য হাতে উপস্থিত হওয়া। এখনই সময় জাগ্রত হওয়ার, কারণ মৃত্যুর পরে জাগরণ আর কোনো কাজে আসবে না।
আপনার কমেন্ট