মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫ - ১৪:২৫
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ: সত্য-মিথ্যার লড়াই ও মুসলিম বিশ্বের নিস্ক্রিয়তা

বর্তমান সময়ে বিশ্ব রাজনীতির এক অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর অধ্যায় হচ্ছে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান সময়ে বিশ্ব রাজনীতির এক অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর অধ্যায় হচ্ছে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব। এটি কেবল দুটি রাষ্ট্রের সংঘাত নয়, বরং সত্য ও মিথ্যার, জালিম ও মজলুমের মধ্যে এক চিরন্তন লড়াইয়ের বহিঃপ্রকাশ। এই সংঘাতের পেছনে রয়েছে বহু রহস্য, ইতিহাস, এবং ভয়াবহ ষড়যন্ত্র, যা শুধুমাত্র ভূ-রাজনৈতিক আগ্রাসনের নয়, বরং আদর্শিক ও ধর্মীয় দিক থেকেও গভীর তাৎপর্য বহন করে।

জালিম ও মজলুমের পরিচয়

ইসরায়েল একটি রাষ্ট্র হিসেবে জন্মলাভ করেছিল ফিলিস্তিনি জনগণের জমি দখলের মাধ্যমে। তারপর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক গণহত্যা, ঘরবাড়ি ধ্বংস, মসজিদ অবমাননা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। এই সমস্ত অন্যায়ে সহায়তা করে যাচ্ছে কিছু প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশ, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আমেরিকা। তারা একদিকে মানবাধিকার ও শান্তির কথা বলে, অন্যদিকে নিজেরা যুদ্ধ উস্কে দিয়ে জালিমদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।

অন্যদিকে ইরান, দীর্ঘদিন ধরে এই জুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা শুধু ফিলিস্তিনের পক্ষ নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর পক্ষে সৎ সাহস নিয়ে কথা বলেছে। ইরান বিশ্বের একমাত্র দেশ, যারা প্রকাশ্যে ইসরায়েলের অস্তিত্ব অস্বীকার করে এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে অটল থাকে।

মুসলিম বিশ্ব: নিস্ক্রিয়তা ও বিভ্রান্তি

আজকের মুসলিম দেশগুলোর অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল ও বিভ্রান্তিকর। ইসলামের নামে চলা এই দেশগুলোর অধিকাংশই নিজের স্বার্থ, ক্ষমতা এবং পশ্চিমাদের খুশি করার জন্য নীতিগতভাবে জালিমদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। তারা কেবলমাত্র মুসলমান নামধারী, কিন্তু ইসলামের মূল আদর্শ—ন্যায়, প্রতিবাদ, ও আত্মত্যাগ—এর চর্চা করে না।

নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর জীবনদর্শন ছিল জালিমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং মজলুমের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু আজকের তথাকথিত মুসলিম রাষ্ট্রনেতারা এই নীতিকে বিস্মৃত হয়েছে। ফলে, তারা সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য নির্ধারণ করতে ব্যর্থ, বরং কখনও কখনও দুইটাকেই গ্রহণ করে নৈতিক দ্বৈততার চর্চা করছে। এই কারণেই মুসলিম বিশ্ব আজ নেতৃত্বহীন, ঐক্যহীন ও দুর্বল।

নেতৃত্ব: উন্নতির মূল চাবিকাঠি

কোনো জাতির উন্নতির জন্য একটি যোগ্য নেতৃত্ব অপরিহার্য। ইতিহাস প্রমাণ করেছে, যে জাতির সামনে একজন আদর্শবান নেতা থাকে, তারা অন্ধকারেও আলোর দিশা খুঁজে নিতে পারে। ইরান তার প্রমাণ। তাদের আজকের প্রতিরোধ, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, সামরিক শক্তি এবং আত্মবিশ্বাস সবকিছুর পেছনে রয়েছেন একজন মহান নেতা—আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই।

তিনি আহলে বাইতের শিক্ষার অনুসারী, যা শুধুমাত্র ধর্মীয় আদর্শ নয়, বরং ন্যায়, ত্যাগ, এবং মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। হযরত হুসাইন (আঃ)-এর আদর্শকে সামনে রেখে তিনি জাতিকে জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে ইরান কখনও মাথা নত করেনি, বরং মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শত বাধা, নিষেধাজ্ঞা ও ষড়যন্ত্রের পরও।

ষড়যন্ত্র ও প্রতিরোধ

আজ ইরানের এই অটলতা সহ্য করতে পারছে না এই যুগের ইয়াজিদ—ইসরায়েল ও আমেরিকা। তারা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, কখনো আক্রমণ, কখনো নিষেধাজ্ঞা, আবার কখনো অন্তর্ঘাতের মাধ্যমে ইরানের ভিত নড়িয়ে দিতে চায়। কারণ তারা জানে, ইরান শুধু একটি রাষ্ট্র নয়, এটি একটি আদর্শের নাম, যা জালিমদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস দেয়।

উপসংহার

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ কেবল একটি ভূরাজনৈতিক সংঘর্ষ নয়, এটি আদর্শ ও বিশ্বাসের লড়াই। একদিকে আছে অন্যায়, অত্যাচার ও ভণ্ডামি; আরেকদিকে আছে আত্মত্যাগ, ন্যায় ও সত্য। আজকের মুসলিম বিশ্বের উচিত এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের অবস্থান নির্ধারণ করা। যদি তারা সত্যিই ইসলামের অনুসারী হতে চায়, তবে তাদের উচিত হবে জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়া এবং সত্যের পক্ষে সাহসের সঙ্গে দাঁড়ানো।

শেষ কথা:
“যে জাতি নিজের আদর্শ ভুলে যায়, সে জাতি অন্যের পায়ের নিচে পিষ্ট হতে বাধ্য।”
ইরান আজ এই যুগের কারবালার ময়দানে দাঁড়িয়ে আছে, আর মুসলিম বিশ্বকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—তারা কি হযরত হুসাইনের পাশে থাকবে, নাকি ইয়াজিদের দরবারে মাথা নত করবে।

রিপোর্ট: হাসান রেজা 

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha