রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫ - ১৩:১৮
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মূল রাজনৈতিক কারণ

ইসরায়েল নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যে একটি শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক(গ্রেটার ইসরাইল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে) হিসেবে দেখতে চায়, আর ইরান এই আধিপত্যবাদী মনোভাবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।

জনাব রাজা আলী, এম এ (বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়)
দ্বীনি শিক্ষা:আল হুজ্জাত মাদ্রাসা
সহযোগী সম্পাদক:আল হুজ্জাত পত্রিকা 
সহ সম্পাদক:আল হুজ্জাত একাডেমী 
সদস্য: আঞ্জুমান নাসেরানে মাহদী আঃ
ভালো লাগা: দ্বীনি চর্চা এবং কবিতা লেখা


প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম, জনাব রাজা, আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে সময় দেওয়ার জন্য। প্রথমেই জানতে চাই, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার এই দীর্ঘদিনের উত্তেজনার মূল রাজনৈতিক কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

রাজা আলী: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। ধন্যবাদ মজিদুল ইসলাম শাহ। আসলে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বিরোধ বহুস্তরবিশিষ্ট এবং দীর্ঘমেয়াদি। সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক কারণ হলো—ইসরায়েল নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যে একটি শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক(গ্রেটার ইসরাইল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে) হিসেবে দেখতে চায়, আর ইরান এই আধিপত্যবাদী মনোভাবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। ইরান সবসময় ফিলিস্তিনির জনগণ সহ অন্যান্য দের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং ইসরায়েলের নীতির কঠোর সমালোচনা করে আসছে।

প্রশ্ন: অনেকেই বলেন পারমাণবিক ইস্যুটি এই উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে। আপনি কি এতে একমত?

রেজা আলী: না । পারমাণবিক ইস্যু টি অজুহাত মাত্র।ইসরায়েলের পলিসি সম্পূর্ণ রূপে বাস্তবায়নের একমাত্র অন্তরায় ইরান।তাই ইসরাইল কোনো একটি অজুহাতে ইরানে হামলাকে বৈধ হিসাবে তুলে ধরতে চায়।ইরান বারবার বলেছে তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত। ইসরাইল তার ইন্টেলিজেন্স দ্বারা এটা হয়তো বুঝতে পারে। তবুও ইসরাইল ইরানকে বিশ্বাস করে না এই কারণে যে,তারা নিজেরাই বিশ্বাস ঘাতক ও মিথ্যাবাদী।বলা চলে , ইসরাইল ইরানের বিষয়ে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ক্যালকুলেশন করতে চায় না। ইরান পারমাণবিক শক্তিধর না হলেও ইরানের শক্ত রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেই ইসরাইল ইরানকে ধ্বংস করতে কিম্বা সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করতো।

প্রশ্ন: ইরান ইসরাইল দ্বন্দ্বকে কী শুধু ধর্মীয় বা আদর্শগত দ্বন্দ্ব হিসেবেও দেখা যায়?

রেজা আলী: না, শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই সংঘাতকে ব্যাখ্যা করলে তা অসম্পূর্ণ হবে। এটি একটি রাজনৈতিক, কৌশলগত ও ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। হ্যাঁ, ইরান একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র এবং ইসরায়েল একটি ইহুদি রাষ্ট্র, কিন্তু মূল সমস্যা এই পরিচয়ে নয়—বরং একে অপরের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত।

প্রশ্ন: এই উত্তেজনার প্রভাব মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের রাজনীতিতে কতটা পড়ছে?

রাজা আলী: অনেক বেশি। এই বিরোধের কারণে সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশে পরোক্ষ সংঘাত চলছে। পাশাপাশি, এই উত্তেজনা বিশ্বশান্তি ও জ্বালানির বাজারেও প্রভাব ফেলছে। যখনই এই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে, তখনই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পায় এবং কূটনৈতিক উদ্বেগ তৈরি হয়।

প্রশ্ন: এই সংকট সমাধানের কোনো সম্ভাবনা আপনি দেখেন?

রাজা আলী: সমাধান সব সময়ই সম্ভব, তবে তার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা প্রয়োজন। মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্রগুলো যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ করে এবং ইরান ও ইসরায়েল দু’পক্ষ সংলাপে প্রস্তুত হয়, ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্য তার ঘৃণ্য নীতি ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকে,তাহলে উত্তেজনা কমানো সম্ভব।

প্রশ্ন: চমৎকার বিশ্লেষণ দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জনাব রাজা আলী।
রাজা আলী: আপনাকেও ধন্যবাদ।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মজিদুল ইসলাম শাহ

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha