হাওজা নিউজ এজেন্সি: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, হাওজা নিউজ এজেন্সিকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই, প্রশ্ন হল? উম্মুল বানীন (সা.আ.)–এর পরিচয় ও ইসলামী ইতিহাসে তাঁর স্থান কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
আলী নাকি সাহেব: ওয়া আলাইকুম সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আপনাকেও ধন্যবাদ জানাই, দেখুন উম্মুল বানীন (সা.আ.) ইসলামী ইতিহাসের এক অনন্য ও মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি শুধু আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর স্ত্রীই নন, বরং চার বীর পুত্রের জননী। তাঁর নামই যেন সাহস, আনুগত্য ও ইমানের পরিচয়। বিশেষ করে হযরত আব্বাস (আ.)–এর মতো এক অতুলনীয় বীরের মা হওয়া তাঁর ব্যক্তিতকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। ইতিহাসে তিনি এমন এক নারী হিসেবে স্মরণীয়, যিনি পরিবারের পাশাপাশি উম্মাহর সততা ও আত্মত্যাগের প্রতীক।
হাওজা নিউজ এজেন্সি: বলা হয়, উম্মুল বানীন (সা.আ.)–এর চরিত্র হযরত আব্বাস (আ.)–এর গঠনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এ বিষয়ে আপনার মত কী?
আলী নাকি সাহেব:
হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে। একজন মায়ের কোলই সন্তানের প্রথম বিদ্যালয়। উম্মুল বানীন (সা.আ.) ছিলেন বীরত্ব, লজ্জাশীলতা, নৈতিকতা এবং আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থার জীবন্ত প্রতীক। তিনি ছোটবেলা থেকেই আব্বাস (আ.)–এর মধ্যে আনুগত্য, সাহস, বিনয় ও সত্যের পথে স্থিরতার চরিত্র রোপণ করেছিলেন।
আমরা দেখি, কারবালার দিনে আব্বাস (আ.)–এর যে অটল আনুগত্য, ভাইয়ের প্রতি যে শ্রদ্ধা, এবং দায়িত্ব পালনে যে দৃঢ়তা—এসবের পেছনে তাঁর মায়ের শিক্ষাই ছিল মূল ভিত্তি।
হাওজা নিউজ এজেন্সি: উম্মুল বানীন (সা.আ.) নিজেও ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও ধর্মপরায়ণ। তাঁর এই গুণগুলো পরিবারকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?
আলী নাকি সাহেব:
তিনি শুধু আলী (আ.)–এর ঘরের গৃহিণী ছিলেন না, বরং এক আদর্শ মা ও এক দৃঢ়চেতা মুমিনা। তাঁর চরিত্রের বিশেষত্ব হলো—তিনি নিজের সন্তানদের চেয়ে আল্লাহ ও রাসুলের ঘরানাকে অগ্রাধিকার দিতেন।
কারবালার বিপর্যয় ঘটে যখন তাঁকে তাঁর চার পুত্রের শাহাদাতের সংবাদ দেওয়া হয়, তিনি প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেন: “হুসাইন (আ.) কেমন আছেন?”
এটাই প্রমাণ করে যে তাঁর দৃষ্টিতে আল্লাহর হুজ্জত ও সত্যের পথ ব্যক্তিগত অনুভূতির চেয়ে বড় ছিল।
হাওজা নিউজ এজেন্সি: হযরত আব্বাস (আ.)–এর মধ্যে যে বীরত্ব ও আনুগত্য দেখা যায়, তা কি শুধুই বংশগৌরবের ফল, নাকি মাতৃত্বের শিক্ষার অংশও ছিল?
আলী নাকি সাহেব:
দুটোই ছিল—বংশগৌরব এবং সঠিক শিক্ষার সমন্বয়।
উম্মুল বানীন (সা.আ.) ছিলেন বীর পরিবার থেকে, তাঁর পূর্বপুরুষরা বীরত্ব ও ন্যায়পরায়ণতার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এই গুণাবলি তিনি তাঁর সন্তানদের মধ্যে প্রবাহিত করেছিলেন।
কিন্তু শুধু বংশগৌরবই যথেষ্ট নয়—একজন মায়ের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দৃষ্টিভঙ্গি সন্তানকে প্রকৃত বীর বানায়। আব্বাস (আ.)–এর বীরত্ব তলোয়ারের শক্তি থেকে নয়, বরং মায়ের হৃদয় ও দোয়া থেকে জন্ম নেওয়া।
হাওজা নিউজ এজেন্সি: আজকের সমাজে মায়েদের জন্য উম্মুল বানীন (সা.আ.) কী ধরনের আদর্শ হতে পারেন?
আলী নাকি সাহেব:
উম্মুল বানীন (সা.আ.) আজকের মায়েদের জন্য অপরিসীম অনুপ্রেরণার উৎস।
তিনি আমাদের শেখান—
সন্তানকে সাহসী করুন, কিন্তু অহংকারী নয়
সন্তানকে সত্য–অসত্যের পার্থক্য শেখান
আল্লাহ, আহলুলবাইত ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখার শিক্ষা দিন
সন্তানকে সমাজ ও মানবতার কল্যাণে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত করুন
আজ যদি মায়েরা তাঁদের সন্তানদের এই আদর্শে গড়ে তোলেন, তাহলে নিশ্চয়ই সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
হাওজা নিউজ এজেন্সি: শেষ প্রশ্ন—উম্মুল বানীন (সা.আ.)–এর স্মৃতি বা শিক্ষা থেকে আমরা কোন প্রধান বার্তা গ্রহণ করতে পারি?
আলী নাকি সাহেব:
আমরা তাঁর জীবন থেকে তিনটি বড় বার্তা পাই—
১. আনুগত্যের শিক্ষা – সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকা
২. মাতৃত্বের মর্যাদা – সন্তানকে ঈমান ও চরিত্রে দৃঢ় ভিত্তি দেওয়া
৩. ত্যাগের আদর্শ – ব্যক্তিগত সুবিধার চেয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেওয়া
উম্মুল বানীন (সা.আ.) আমাদের মনে করিয়ে দেন যে একজন মায়ের হাতেই ইতিহাস বদলে যাওয়ার শক্তি নিহিত।
আপনার কমেন্ট