হাওজা নিউজ এজেন্সি: সম্প্রতি কাশান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল অধ্যাপকের সঙ্গে সাক্ষাতে বলেন, আজকের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক সমাজে যে জ্ঞান প্রচলিত, তা এক ধরনের ‘মৃত’ ও ‘হিমাঘারের জ্ঞান’। এই ধরনের জ্ঞান মহান জ্ঞানী বা প্রকৃত মানুষ তৈরি করতে পারে না; এটি কেবল একটি যান্ত্রিক উপকরণ মাত্র।
তিনি বলেন, জ্ঞান একটি ত্রিভুজাকার বাস্তবতা—যার এক পাশে থাকে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সংযোগ (কে এই জ্ঞান সৃষ্টি করেছে), অন্য পাশে থাকে গন্তব্য বা উদ্দেশ্য (এই জ্ঞান কেন সৃষ্টি হয়েছে), এবং মাঝের অংশ হলো তার প্রকৃতি (এই জ্ঞান কীসের সম্পর্কে)।
তিনি আরও বলেন, “জ্ঞান হলো এক আলোক, যা আল্লাহ তা’আলা যাঁকে চান তাঁর অন্তরে নিক্ষেপ করেন।” তাই প্রকৃত জ্ঞান সেই যা জীবন্ত, আত্মদর্শী এবং সৃষ্টিসত্ত্বার সঙ্গে সংযুক্ত। কেবল ডেটা বা মানসিক উপাত্ত নয়, বরং তা হতে হবে সত্তা ও সৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বাস্তবতা।
আয়াতুল্লাহ আমুলি বলেন, মানব গঠনের প্রথম ধাপ হলো 'নিজেকে চেনা' (মারেফাতে নাফস)। মানুষ যদি বুঝতে পারে যে সে একটি জীবন্ত সত্য, কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় যাচ্ছে—তবে সে নিজেকে ভুলে যাবে না। যখন কেউ উপলব্ধি করে, “আমি আছি, ছিলাম, থাকব, আমি পচে যাই না; বরং মৃত্যুর মাধ্যমে খোলস থেকে বেরিয়ে আসি,” তখন সে আত্মদর্শী জ্ঞানে পৌঁছায়। এই জ্ঞানই মানুষের প্রকৃত উন্নতি ঘটায়।
তিনি বলেন, ইমাম আলী (আ.)-এর আলোবহ যুক্তিতে স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে—আবেগ, বাসনা ও প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে মুক্তি, কেবলমাত্র লালসায় মুক্তচেতা হওয়া নয়। যেমন, আমাদের পরিপাকতন্ত্রের খিদে থাকলেও সব খাবার উপযোগী নয়, তেমনি মানুষের চাহিদাও তার স্বভাব ও সত্যের ভিত্তিতে যাচাই করা উচিত।
তিনি যোগ করেন, “সব কিছু যা আমাদের আকৃষ্ট করে তা উপকারী নয়, কারণ মানুষ সীমিত সত্তা—এবং সীমিত অস্তিত্বের সীমাহীন চাওয়া থাকতে পারে না। প্রকৃত স্বাধীনতা হলো পরিপূর্ণ বন্দেগির মধ্যেই।”
‘গায়রত’ (আত্মমর্যাদা ও মানসিক সততা)-কে তিনি সর্বোচ্চ চারিত্রিক গুণগুলোর একটি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এটি কেবল পারিবারিক গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর তিনটি মৌলিক উপাদান রয়েছে:
১. অন্যের সীমায় অনুপ্রবেশ না করা — যেমন, নামাহরামের দিকে না তাকানো, রাষ্ট্রীয় সম্পদে হাত না দেওয়া, জনগণের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করা।
২. নিজের সীমায় কাউকে প্রবেশ করতে না দেওয়া — ইমাম আলীর (আ.) বাণী উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যে দিক থেকে পাথর এসেছে, সেদিকেই তা ফিরিয়ে দাও এবং অসম্মান কেবল লজ্জাহীন জাতিই সহ্য করে।”
৩. নিজের সীমা ও মর্যাদা চেনা — মানুষ যদি না জানে তার সীমা কোথায়, তবে সে কখনও বুঝতে পারবে না কোথায় সে সীমা অতিক্রম করেছে, অথবা অন্য কেউ তার সীমা লঙ্ঘন করেছে কি না।
এই তিনটি উপাদান মিলে একজন প্রকৃত গায়রতমন্দ ব্যক্তি গড়ে ওঠে।
আলোচনার শেষে আয়াতুল্লাহ আমুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আমল, বিনয় ও আধ্যাত্মিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “যেখানেই একজন জ্ঞানী ব্যক্তি আন্তরিক, বিনয়ী ও অর্থবোধসম্পন্ন হন, সেখানেই হৃদয় আকৃষ্ট হয়। হৃদয় জয়ের জন্য আমাদের বাহ্যিক জাঁকজমকের প্রয়োজন নেই; দরকার সত্যবাদিতা ও জ্ঞানের আলো।”
আপনার কমেন্ট