হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক মুহূর্ত আছে, যা হযরত আলী (আ.)-এর মর্যাদা, জ্ঞান ও নিকটতা সম্পর্কে গভীর ইঙ্গিত বহন করে। তাঁর জীবন ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সান্নিধ্যে গঠিত-শৈশব থেকে নবুয়তের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন প্রিয় নবীর ঘনিষ্ঠতম সহচর, সাহসী সৈনিক ও বিশ্বাসের প্রতীক।
ছয় জন সাহাবিকে নিয়ে গঠিত সেই বিখ্যাত শূরার বৈঠকে, যেখানে পরবর্তী খলিফা নির্বাচনের আলোচনা হচ্ছিল, হযরত আলী (আ.) নিজ অবস্থান ও মর্যাদা সম্পর্কে এমন কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেন, যার জবাবে উপস্থিত সাহাবারা নিজেরাই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতে বাধ্য হন।
হযরত আলী (আঃ) প্রথমে বললেন-
«انشدکم بالله امنکم احد سکن المسجد یمر فیه جنبا غیری»
আমি আপনাদের আল্লাহর কসম দিচ্ছি, তোমাদের মধ্যে কি কেউ আছে, যাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) অনুমতি দিয়েছিলেন যে সে অপবিত্র (জনাবতের) অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করতে পারে, আমার ছাড়া?
সবাই একবাক্যে উত্তর দিল-
«اللهم لا»
“আল্লাহর কসম, না।”
এরপর হযরত আলী (আ.) আরেকটি প্রশ্ন উত্থাপন করেন, যা তাঁর এক অনন্য মর্যাদার দিকটি প্রকাশ করে। তিনি বলেন-
«انشدکم بالله امنکم احد یظهرباب غیری حین سد النبی ابواب المهاجرین جمیعا»
আমি আপনাদের আল্লাহর কসম দিচ্ছি, তোমাদের মধ্যে কি কেউ আছে, যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদের দিকে খোলা থাকা সমস্ত মুহাজিরদের দরজা বন্ধ করে দিলেন, কেবল আমার দরজাটি খোলা রাখলেন?
এই প্রশ্ন শুনে সাহাবীগণের মধ্যে উপস্থিত হযরত হামযা ও আব্বাস (রা.) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাদের দরজাগুলো বন্ধ করে দিলেন, কিন্তু আলীর দরজাটি খোলা রাখলেন!
রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন উত্তরে বললেন-
«ما انا فتحت بابه ولا انا سدت ابوابکم، بل الله فتح بابه وسد ابوابکم»
আমি আলীর দরজা খুলি নাই, আর তোমাদের দরজাও আমি বন্ধ করি নাই; বরং আল্লাহই আলীর দরজা খুলেছেন এবং তোমাদের দরজাগুলো বন্ধ করেছেন।
এই উত্তর ছিল হযরত আলী (আ.)-এর প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহের স্বীকৃতি।
এরপর হযরত আলী (আ.) আবার জিজ্ঞাসা করলেন-
আমি আপনাদের আল্লাহর কসম দিচ্ছি, আমার ছাড়া আর কারও মধ্যে কি এই মর্যাদা রয়েছে?
এবারও সবাই বিনা দ্বিধায় উত্তর দিল-
«اللهم لا»
“আল্লাহর কসম, না।”
এই ঘটনাটি শুধু একটি ঐতিহাসিক স্মৃতি নয়, বরং এটি ইসলামের অভ্যন্তরে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্বাচিত ব্যক্তিত্বদের মর্যাদার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। হযরত আলী (আ.)-এর প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই বিশেষ সম্মান তাঁর অন্তরের পবিত্রতা, ত্যাগ, এবং ঈমানের দৃঢ়তার প্রতীক।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়-
যেখানে সাহাবারা নিজেদের জবানে বলেছিলেন “اللهم لا”, সেখানে আলী (আ.)-এর মর্যাদা আল্লাহর কৃপায় সর্বজনবিদিত হয়ে ওঠে।
উস্তাদ আয়াতুল্লাহ কাজভিনী
আপনার কমেন্ট