হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, তেহরানে ধর্মীয় শিক্ষাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মেহদী মানদেগারি “সামতে খোদা” (ঈশ্বরের পথে) নামের একটি অনুষ্ঠানে বলেন: কুরআন নির্দেশ দেয় যে, মানুষের উচিত বুদ্ধি ও চিন্তার অস্ত্র নিয়ে জীবনের বিষয়গুলো মোকাবিলা করা। আমাদের সব ধর্মীয় শিক্ষা হয় বুদ্ধির মাধ্যমে নয়তো প্রমাণিত বর্ণনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। যদি কোনো ইমাম বা নির্দোষ ব্যক্তির বাণী বুদ্ধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে হয়, তাহলে সেটি গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ বুদ্ধি হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত একটি প্রমাণ, যা শরিয়তের সমান মর্যাদাসম্পন্ন; তাই উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ সম্ভব নয়।
তিনি বলেন: আল্লাহই যেমন বুদ্ধির স্রষ্টা, তেমনি শরিয়তেরও স্রষ্টা। সুতরাং, যখন বলা হয় কেউ আল্লাহর নির্দেশ মানেনি, তখন সেই বক্তব্যের প্রমাণও কুরআন ও বুদ্ধি থেকেই আসতে হবে।
মানদেগারি হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন হিজাব প্রসঙ্গে বলেন: কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, “আপনি কেন বাধ্যতামূলক হিজাবের পক্ষে?” আমি বলেছি-এটি বুদ্ধির বিধান। ব্যর্থতার সূত্র খুব সহজ: চোখ দেখে, মন চায়, কিন্তু হাত পৌঁছায় না-এটাই ব্যর্থতা। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর করেছেন, আর নারীদের করেছেন আরও আকর্ষণীয়। যখন পোশাক শালীন নয়, তখন চোখ দেখে, মন কামনা জাগায়, আর হাতের নাগালের বাইরে থাকে-এটাই বুদ্ধির রায়, যা কুরআনও সমর্থন করে।
তিনি আরও বলেন: কেউ কেউ ইউরোপীয় বা আমেরিকানদের উদাহরণ দেয়, কিন্তু তাদের অগ্রগতি অসংযমের কারণে নয়, বরং পরিশ্রম, শৃঙ্খলা ও আইন মেনে চলার ফল। যদি বুদ্ধির আইন মানা না হয়, তবে শুধু ব্যর্থতাই নয়, পারিবারিক জীবনও সংকটে পড়ে। নারী-পুরুষ একে অপরের সঙ্গে তুলনা শুরু করে, আর পরিবারের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যায়।
একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন: একবার বিমানবন্দরে এক তরুণীর ওড়না খুলে গিয়েছিল, আমি তাকে সতর্ক করলাম। সে বলল, সে আইন মানতে চায় না। আমি বললাম, “এটি তোমারই ক্ষতি, তুমি নিজেই বিপদের মুখোমুখি হবে।” কেউ যদি নিজে ক্ষতির পথে যেতে চায়, অন্যরা তাতে কিছুই করতে পারে না। যদি আল্লাহর আইন, যেমন লজ্জা, হিজাব ও পারিবারিক নীতিমালা, স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয়, তবে অধিকাংশ মানুষ স্বাভাবিকভাবে সঠিক পথ বেছে নেবে।
তিনি বলেন: আমরা আলেম, গণমাধ্যম, হাওজা, বিশ্ববিদ্যালয় ও মসজিদগুলো-সবাই আল্লাহর আইন, বিশেষত লজ্জা, হিজাব ও পারিবারিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছি। পরিবারকে দৃঢ় করতে হলে ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রচারকে ভিত্তিসম্পন্ন ও সহজবোধ্যভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন: জামাতে নামাজ ও জুমার খুতবা সহজভাবে পরিচালনা করা জরুরি। যোহর ও আসরের জামাতে নামাজ, যা মোট আট রাকাত, সেটি ১০–১৫ মিনিটের বেশি হওয়া উচিত নয়, আর জুমার খুতবা সর্বোচ্চ আধা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে শেষ হওয়া উচিত। আয়াতুল্লাহ আল-উজমা বাহজাত বলেছেন: যদি আমরা ধর্মকে সহজ করি, তাহলে ধার্মিকদের পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে।
শেষে মানদেগারি বলেন: আমাদের জনগণ চায় ধর্মীয় জীবনযাপন করতে, কিন্তু জীবনের আনন্দ থেকেও বঞ্চিত হতে চায় না। তাই আমাদের উচিত নয় ধর্মকে এত জটিল বা কঠোর করে তোলা, যাতে মানুষ তা থেকে দূরে সরে যায়।
আপনার কমেন্ট