হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরানের হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক আয়াতুল্লাহ আলিরেজা ইরাফি “বনিয়াদে মাসকান”-এর প্রাদেশিক প্রতিনিধিত্ব কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে আধ্যাত্মিকতা, আত্মশুদ্ধি, আত্মগঠন এবং দায়িত্ববোধের গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং তিনটি প্রধান বিষয়ের ওপর বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি নৈতিক, জ্ঞানমূলক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ তুলে ধরেন।
হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বলেন: প্রথম মূল বিষয়টি হলো— হাওযার প্রবীণ আলেমদের ঐতিহ্য অনুযায়ী আধ্যাত্মিক, আত্মিক ও নৈতিক দিক।
আখুন্দ খোরাসানি (রহ.) : জ্ঞান, রাজনীতি ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক
আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন: গতকাল আমি মরহুম আখুন্দ খোরাসানি (রহ.)-এর কিছু নৈতিক পাঠের একটি পুস্তিকা পেয়েছি যা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। ভূমিকার অংশে উল্লেখ আছে যে, আয়াতুল্লাহ জান্জানি (রহ.)-এর উদ্ধৃতি অনুযায়ী আখুন্দ খোরাসানি তাওহিদের (ঐক্যবাদের) বিষয়ে অনেক অগ্রসর ছিলেন। তাঁর শিক্ষা ও আত্মশুদ্ধির ভিত্তি ছিল তাওহিদ-অর্থাৎ আত্মিক গঠনের মূলও তাওহিদ।
তিনি আরও বলেন: আখুন্দ খোরাসানি (রহ.) ছিলেন বিশাল এক জ্ঞানচূড়া। “মাশরুতে” (সংবিধানিক বিপ্লব)-এও তিনি অসাধারণ প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর গ্রন্থ কিফায়াতুল উসূল ইসলামি নীতিশাস্ত্রের (উসূল) ক্ষেত্রে গভীর ও অনন্য গবেষণার এক প্রতীক। তিনি শিয়া ফিকহ ও উসূলের ইতিহাসে এক মোড় ঘোরানো ব্যক্তিত্ব, যার সমকক্ষ পাওয়া দুষ্কর।
আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন: রাজনীতিতেও তিনি মাশরুতে আন্দোলনের অন্যতম প্রধান বা প্রথম শ্রেণির নেতা ছিলেন। তিনি ইরান ও অঞ্চলজুড়ে একজন প্রভাবশালী চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর বৈজ্ঞানিক মর্যাদা এমন উচ্চ যে সহজে কেউ সেখানে পৌঁছাতে পারে না; একইভাবে তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা, কর্ম ও নেতৃত্বও ছিল শীর্ষস্থানে।
তিনি আরও বলেন: মরহুম আখুন্দ খোরাসানির তৃতীয় মর্যাদা তুলনামূলকভাবে গোপন-তা হলো তাঁর গভীর আধ্যাত্মিক ও আত্মিক স্তর। বড় বড় আলেম যেমন আয়াতুল্লাহ জান্জানি (রহ.) তাঁর গ্রন্থ জোরআহ-ই আজ দরিয়া (“সমুদ্রের এক চুমুক”) -এ এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আমি সুপারিশ করব, এই বইটি পড়ুন; এটি অত্যন্ত শিক্ষণীয়। আয়াতুল্লাহ মুরতজা হায়রী (রহ.), আধুনিক কওম হাওজার প্রতিষ্ঠাতার পুত্র, তাঁর পাঠে প্রায়ই বলতেন, “নৈতিকতা বলার বদলে তাওহিদ বলুন, তাতেই ফল মিলবে।”
আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন: আখুন্দ খোরাসানি তাঁর ছাত্রজীবনে প্রচুর কষ্ট সহ্য করেছেন-দীর্ঘ সময় মাংস না খাওয়া, পরার মতো পোশাক না থাকা ইত্যাদি। কিন্তু তিনি বলতেন, “আমি সব কষ্ট নীরবে সহ্য করেছি; কাউকে বুঝতে দিইনি, এমনকি মনে মনে কখনো আল্লাহর কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করিনি।”-এটাই হাওযার প্রকৃত পরিচয়। তিনি বলতেন, “আমার আহার ছিল চিন্তা।” তাঁর পাঠে কখনো কখনো হাজার জন পর্যন্ত ছাত্র অংশ নিতেন।
হাওজা ইলমিয়ার উচ্চ পরিষদের সদস্য শেষে বলেন: এটাই আমাদের জীবনধারার মৌলিক কাঠামো। আমাদের যুগেও ইমাম খোমেইনি (রহ.) ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি প্রত্যেক বিষয়ে ‘আরিফ বিল্লাহ’-আল্লাহ-জ্ঞানসম্পন্ন ছিলেন।
আপনার কমেন্ট