সোমবার ১৩ অক্টোবর ২০২৫ - ১৯:১৮
মু‘আবিয়া কি ওহি লেখক (কাতিবে ওহি) ছিল?

ইসলামের ইতিহাসে গৌরব তাদেরই, যারা সত্যের পাশে থেকেছেন-প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, নবীর পথ ও আহলে বাইতের প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইতিহাসে মাঝে মাঝে এমন কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, যা শুধু তথ্য নয়, বিশ্বাস, ন্যায় ও সত্যের পরীক্ষাও হয়ে দাঁড়ায়। তেমনি একটি প্রশ্ন হলো-মু‘আবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান কি ওহি লেখক ছিলেন?

এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে একটি মৌলিক সত্য বোঝা প্রয়োজন-ওহি লেখক (কাতিবে ওহি) হওয়া কোনো ব্যক্তিগত গৌরবের নিশ্চয়তা নয়; বরং ওহির প্রতি বিশ্বস্ত থাকা ও নবীর আদর্শে অবিচল থাকা-ই প্রকৃত মর্যাদা।

ওহি লেখক হওয়া: মর্যাদা না দায়িত্ব?

ধরা যাক, মু‘আবিয়া সত্যিই ওহি লেখকদের একজন ছিল। তবুও ইতিহাসে দেখা যায়, ওহি লেখকদের মধ্যেও কেউ কেউ পরবর্তীতে সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছিল।
সুনান নাসাঈ-র বর্ণনা অনুযায়ী, রাসূলুল্লাহর (সা.) মক্কা বিজয়ের সময় চারজন পুরুষ ও দুজন নারীর ব্যাপারে বলেছিলেন: “যদি তারা কাবার পর্দার পেছনেও আশ্রয় নেয়, তবুও তাদের হত্যা কর।”

এই চারজনের একজন ছিল আবদুল্লাহ ইবনে সা‘দ ইবনে আবী সারহ। সে একসময় ওহির লেখক ছিল, কিন্তু পরে ধর্মত্যাগ করে, নবী (সা.)-কে উপহাস করে এবং ওহি অস্বীকার করে। ফলে নবী (সা.) তাঁকে “রক্তপাত বৈধ” (মাহদুরুদ-দাম) ঘোষণা করেন।
এই ঘটনাই প্রমাণ করে যে-ওহি লেখক হওয়া নিজের মধ্যে কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নয়; বরং ওহির প্রতি বিশ্বস্ত থাকা এবং নবীর আদেশে অটল থাকা-ই প্রকৃত গৌরব।

মু‘আবিয়া ও আলী (আ.)-এর বিরোধ

ইতিহাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো মু‘আবিয়া ও ইমাম আলী (আ.)-এর যুদ্ধ। যদি সত্যিই মু‘আবিয়া ওহি লেখকও হয়ে থাকে, তবুও তাঁর আলী (আ.)-এর সঙ্গে যুদ্ধের ঘটনাকে কীভাবে ন্যায়সঙ্গত বলা যায়?
রাসূলুল্লাহ (সা.) আলী (আ.) সম্পর্কে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন:
 “أنا حربٌ لِمَن حاربكم”
“আমি তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করি, যারা তোমাদের (আলী ও আহলে বাইত) সঙ্গে যুদ্ধ করে।”

অর্থাৎ, যে কেউ আলীর (আ.) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, সে আসলে নবীর বিরুদ্ধেই অবস্থান গ্রহণ করে।

আলী (আ.)-এর প্রতি অসম্মান = নবীর প্রতি অসম্মান

সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, একবার মু‘আবিয়া বলেছিল: “তুমি আলীকে কেন গালি দাও না?”

এ প্রসঙ্গে নবী (সা.) বলেছেন:
 “من سبّ عليّاً فقد سبّني”
“যে ব্যক্তি আলীকে গালি দেয়, সে আমাকে গালি দেয়।”

এই হাদীস থেকে স্পষ্ট হয় যে, আলীর (আ.) প্রতি শত্রুতা বা অসম্মান আসলে নবী (সা.)-এর প্রতি শত্রুতা ও অসম্মান।

সুতরাং, ওহি লেখক হওয়া কোনো বিশেষ মর্যাদার প্রতীক নয়।
প্রকৃত মর্যাদা হলো-ওহির প্রতি আনুগত্য, নবীর আদেশের প্রতি নিষ্ঠা, এবং সত্যের পথে অবিচল থাকা।

যদি কেউ ওহির লেখক হয়েও সত্যের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, নবীর প্রিয়জনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বা তাঁদের অসম্মান করে, তবে সে ওহির প্রতি নয়, বরং নিজের স্বার্থের প্রতি অনুগত।

ইসলামের ইতিহাসে গৌরব তাদেরই, যারা সত্যের পাশে থেকেছেন-প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, নবীর পথ ও আহলে বাইতের প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছেন।

মূল ভাব: মু‘আবিয়া ওহি লিখে থাকলেও তা তাঁর মর্যাদার প্রমাণ নয়; বরং নবীর আদর্শে অবিচল থাকা ও আলীর (আ.) প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা-ই প্রকৃত ইসলামী গৌরবের প্রতীক।

রিপোর্ট: হাসান রেজা 

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha