শনিবার ২৫ অক্টোবর ২০২৫ - ১১:৫৯
পশ্চিমবঙ্গের শিয়া কওমের শিক্ষা

শিক্ষাই মানুষের মর্যাদার কারণ; শিক্ষা ই সমাজের মেরুদণ্ড। তাই বর্তমান সময়ে আমাদের শিয়া কওমের চিন্তা -চেতনায় শিক্ষা কিছু টা পরিমাণ জায়গা করে নিয়েছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী,
 একটি পর্যালোচনা

শিক্ষা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের এমন একটি নেয়ামত,যা মানুষকে সম্মান এবং মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে শেখায়। এই কারণে কোরানে কারীমের মধ্যে শিক্ষা র অশেষ গুরুত্ব একাধিক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। রাসুলের হাদীসেও শিক্ষার বহুমুখী গুরুত্ব উঠে এসেছে। এই শিক্ষাই মানুষের মর্যাদার কারণ; শিক্ষা ই সমাজের মেরুদণ্ড। তাই বর্তমান সময়ে আমাদের শিয়া কওমের চিন্তা -চেতনায় শিক্ষা কিছু টা পরিমাণ জায়গা করে নিয়েছে।
      তা সত্ত্বেও বলা যায় আজ আমরাই পশ্চিমবঙ্গের বুকে শিক্ষা ক্ষেত্রে সব থেকে পিছিয়ে। কিন্তু কেন? প্রতিটি ঘরের প্রতিটি সন্তান আজ স্কুলের দুয়ারে।প্রায় প্রতিটি বাঙালি শিয়া সন্তান আজ ক্লাস এইট , মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বা আরো কিছু ডিগ্রি ঝুলিতে ভরে নিয়েছে।প্রশ্ন জাগে তার পরেও কেনো শিয়া কওম উন্নত চিন্তা-চেতনা, সরকারি -বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এত পিছিয়ে! আমাদের সমাজ কেনো এখনো অনুন্নত?এখন এই "কেনো"র উত্তর অনুসন্ধান করা যাক।
     গত দশকের তুলনায় বর্তমানে শিয়া সমাজের শিক্ষার হার অনেক খানি এগিয়েছে। কিন্তু শিক্ষা র মান উন্নয়ন হয় নি।হাতে গোনা দুচার জন ছাড়া বাকি সকলে অতি সাধারণ ভাবে পাশ করেছে এবং করছে এবং পড়াশোনা র মূল ক্ষেত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকে আবার মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক স্তর থেকেই বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে এবং চেতনাশীল মানুষ হিসাবে কিম্বা ভালো কর্ম থেকে দূরে রয়ে যাচ্ছে। দু এক জন উচ্চশিক্ষার উন্নত সোপানে পা রেখেছে; কিন্তু ভালো মতো আর্থিক পরিস্থিতি কিম্বা ভালো দিকনির্দেশনা র অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। দুএক জন মাত্র চিন্তাশীল মানুষ হিসাবে গড়ে উঠতে পেরেছে বা ভালো সরকারি-বেসরকারি কাজে নিযুক্ত হতে পেরেছে।

মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক স্তরে হারিয়ে যাওয়ার কারণ:

     আমাদের শিয়া সমাজের বেশিরভাগ ছেলে-মেয়ে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক স্তরেই পড়াশোনার মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়(তবে কন্যাশ্রী,রূপশ্রীর দৌলতে কিছু মেয়ে গ্র্যাজুয়েশন স্তরে পৌঁছে যাচ্ছে)। তারা অনেকেই পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়।কেউ বা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার তাগিদ উপলব্ধি করে এবং কাজ ও পড়াশোনা  পাশাপাশি চালাতে থাকে ফলে পড়াশোনা এক অর্থে শেষ হয়ে যায়।এই সমস্যার মূল কারণ লুকিয়ে রয়েছে ঐ সকল ছাত্রদের শৈশবকালীন পড়াশোনা র মধ্যে।বাবা-মার অসাবধানতা এবং অজ্ঞতা এক্ষেত্রে দায়ী।বাবা-মা তার সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়েছে, কিন্তু ভালো রেজাল্টের তাগিদ অনুভব করেনি। সংসার, আত্মীয় এবং বন্ধুদের পিছনে অহেতুক খরচ করেছে, কিন্তু সন্তানের জন্য ভালো শিক্ষকের ব্যবস্থা করেনি। আজকের দিনের পড়াশোনার ক্ষেত্রে ভালো গৃহশিক্ষক অপরিহার্য।এটা প্রত্যেক বাবা-মা জানে, কিন্তু সাধারণ টিউশন বা সাধারণ কোনো কোচিং এ পাঠিয়েছে।যে বাবা নিজের সন্তানের জন্য মাসে পাঁচ সাত শ'টাকার খাবার আনতে পারে,যে বাবা নিজের মেয়ের বিয়েতে তিন / চার লক্ষ টাকা খরচ করতে পারে ;সেই বাবা নিজের সন্তানের পিছনে মাসে পাঁচ শ' সাত শ টাকা টিউশন খরচ করে না। নাইন টেন স্তরে প্রবেশ করলে কোনো কোনো বাবা মা কিছুটা সচেতন হয়,ভালো টিউশনের 
ব্যবস্থা করে, কিন্তু ভিত দুর্বল থাকার কারণে ভালো রেজাল্ট হয় না।সুতরাং ঐ সন্তান বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার 'মায়াবী আকাশে'এক,দুই, তিন... করে শুধু ক্লাসে উঠেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় নি।

অভিভাবকের অজ্ঞতা:

অজ্ঞতা মানুষের ভবিষ্যত নষ্ট করে দেয়।তাই শিক্ষার্থীদের অভিভাবক রা সঠিক ভাবে সন্তানদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে না। কিছু অজ্ঞ ও অসৎ মানুষের জন্য সন্তান দের পড়িয়ে কী হবে বা চাকরি নেই ধরণের শ্লোগানে তারা ভ্রান্ত ধারণা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে সন্তানদের ভবিষ্যতকে বরবাদ করে দেয়।

শিক্ষকদের অনিহা:

বর্তমান সময়ে শিক্ষকদের অনিহা শিক্ষার্থীদের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। সাধারণ কৃষি প্রধান এলাকায় স্কুল শিক্ষক দের গভীর ঔদাস্য এবং ফাঁকি বাজী র কারণে শিক্ষার্থীরা যেমন ভালো কিছু শিখতে পারে না,তেমন ই উৎসাহ পায় না। সুতরাং ক্লাসের পর ক্লাসে উঠলেও প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের ঘাটতি থেকেই যায়।

উপসংহার:

পরিশেষে এটাই বলতে হয় যে,শিয়া কওমের শিক্ষার মূল ঘাটতি টি হয়ে থাকে অভিভাবকদের থেকে। অভিভাবকদের সচেতনতা এবং উদ্যোগ না থাকলে কোনো শিক্ষার্থী সঠিক ভাবে লক্ষ্যে পৌঁছাবে না।ফলে আমাদের অর্থনীতি,সমাজ ও সংস্কৃতি পিছিয়ে পড়বে। আমাদের সমাজে আজ যে সমস্যা রয়েছে,তা তো সমাধান হবে না; বরং নতুন নতুন সমস্যা এসে হাজির হবে।

-রাজা আলী 
২৩.১০.২০২৫

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha