হাওজা নিউজ এজেন্সি: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস–এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রাম্পের পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপটি—যেখানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকা থেকে প্রত্যাহার করবে এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণ সম্পন্ন হবে—পুরো পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কূটনীতিকরা সতর্ক করে বলেছেন, এই পর্যায়েই নতুন করে সংঘাত শুরু হওয়ার আশঙ্কা অত্যন্ত প্রবল।
ইরানিয়ান স্টুডেন্টস নিউজ এজেন্সি (আইএসএনএ)–এর বরাতে পার্স টুডে জানিয়েছে, এক পশ্চিমা কূটনীতিক এই ঝুঁকির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, “এমন সম্ভাবনা প্রবল যে, ইসরায়েল অজুহাত দেবে হামাস এখনও পুরোপুরি নিরস্ত্র হয়নি এবং সেই কারণ দেখিয়ে পুনরায় হামলা শুরু করবে। অপরদিকে, হামাসও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগে অনীহা প্রকাশ করতে পারে।”
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার একটি মূল ভিত্তি হলো “আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী” (International Stability Force – ISF) গঠন, যা ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পর গাজায় সৃষ্ট নিরাপত্তা শূন্যতা পূরণ করবে। তবে এই বাহিনীর আকার, গঠন, দায়িত্ব এবং আইনগত কর্তৃত্ব সম্পর্কে এখনো কোনো সুস্পষ্ট নীতি বা কাঠামো ঘোষণা করা হয়নি।
একজন পশ্চিমা কূটনীতিকের ভাষায়, আন্তর্জাতিক এই বাহিনী হামাসের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করবে এমন প্রত্যাশা কারোই নেই। বরং এর প্রধান মিশন হবে অবস্থান স্থিতিশীল রাখা, যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো পর্যবেক্ষণ করা এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান করা।
অন্যদিকে, কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে যে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রাথমিক পরিকল্পনায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন। এসব পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে—ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সময়সূচি পুনর্নির্ধারণ এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত করা। এই পদক্ষেপগুলো আরব দেশগুলোর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে, কারণ অনেকেই মনে করছেন এতে ফিলিস্তিনি স্বশাসনের সম্ভাবনা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
যদিও তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়ার মতো কয়েকটি দেশ আন্তর্জাতিক বাহিনী প্রেরণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তবুও অধিকাংশ আরব দেশ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। তারা আশঙ্কা করছে, এই বাহিনীতে যোগ দিলে সেটি ইসরায়েলি নীতির বাস্তবায়নে সহযোগিতা হিসেবে ব্যাখ্যা হতে পারে। তাই এসব দেশ স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, তারা কেবল তখনই অংশগ্রহণ করবে যখন একটি বৈধ ও কার্যকর রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা হবে—যা ফিলিস্তিন সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নিশ্চিত করবে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পরিকল্পনার সফলতা বা ব্যর্থতা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে এসব মৌলিক সমস্যার সমাধানের ওপর—যার কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা বা কার্যকর অগ্রগতি এখনো দেখা যাচ্ছে না। ফলে পরিকল্পনাটি বর্তমানে এক অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
আপনার কমেন্ট