হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামী ইতিহাসের আলোচিত অধ্যায় ফাদাকের মালিকানা, আবারও গবেষক ও পাঠকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠেছে। বিভিন্ন প্রাচীন রেফারেন্সে উল্লেখ রয়েছে, পবিত্র কুরআনের সূরা ইসরার আয়াত “وَآتِ ذَا الْقُرْبَىٰ حَقَّهُ” নাজিলের পর নবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর কন্যা হজরত ফাতিমা জাহরা (আ.)-কে ফাদাক দান করেছিলেন।
ইবনে কাসীর দামীশ্কীর সুপ্রসিদ্ধ ব্যাখ্যা গ্রন্থ তাফসিরুল কুরআনিল আজীম–এর পঞ্চম খণ্ডে (সুরা ইসরা ও মুমিনূনের তাফসির, পৃষ্ঠা ৬৮) আবু সাঈদ খুদরী (রা.)-এর একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করা হয়। সেখানে বলা হয়, আয়াতটি নাজিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর প্রিয় কন্যা ফাতিমাকে ডেকে ফাদাক উপহার দেন।
একই ঘটনা পাওয়া যায় মুসনাদ আবু ইয়ালা মাওসিলি–র দ্বিতীয় খণ্ডেও (পৃষ্ঠা ৩৩৪), যেখানে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে—
“এই আয়াত নাজিল হতেই নবী (সা.) ফাতিমাকে ডাকলেন এবং তাঁকে ফাদাক প্রদান করলেন।”
গবেষকদের মতে, এসব রেওয়ায়াত ইঙ্গিত দেয় যে ফাদাক নবীজির ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পদের অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা তিনি কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর কন্যাকে দান করেন।
তবে ইতিহাসে আরেকটি সংবেদনশীল প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
উত্তরাধিকার–সংক্রান্ত দ্বৈত মানদণ্ডের অভিযোগ
ঐতিহাসিক বর্ণনায় দেখা যায়—
হজরত আয়িশা (রা.) নবীজির ঘরে উত্তরাধিকারের অধিকার দাবি করে সেখানে বসবাস ও দাফন কার্য পরিচালনার সুযোগ পান। কিন্তু একই সময়ে, নবী কন্যা ফাতিমা (আ.)-কে তাঁর পিতার ঘরে দাফন করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগও বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়।
কিছু শিয়া সূত্র আরও দাবি করে যে, ফাতিমা (আ.)-এর জানাজা ও পবিত্র দেহ তীরবিদ্ধ করা হয়েছিল—যা মুসলিম বিশ্বে গভীর আবেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে এবং আজও আলোচনার অন্যতম বিষয়।
অমীমাংসিত ঐতিহাসিক প্রশ্ন
ফাদাকের মালিকানা, উত্তরাধিকারের অধিকার এবং ফাতিমা (আ.)-কে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া ঘটনা—সব মিলিয়ে ইসলামী ইতিহাসের একটি অধ্যায় এখনো বিতর্কিত, আবেগঘন এবং গবেষকদের জন্য অনুসন্ধানের উন্মুক্ত ক্ষেত্র।
গবেষকরা বলছেন, এই প্রসঙ্গগুলোকে নিরপেক্ষ ও প্রমাণনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন, যাতে সত্য ইতিহাস সামনে আসে এবং মুসলিম সমাজের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও সুদৃঢ় হয়।
রিপোর্ট: হাসান রেজা
আপনার কমেন্ট