বৃহস্পতিবার ২৭ নভেম্বর ২০২৫ - ১৪:২৮
ইসলামে কখন ইস্তেখারা অনুমোদিত

ইস্তেখারা (استخاره) শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো— “কল্যাণ চাওয়া”, “আল্লাহর কাছে উত্তম দিক নির্দেশনা প্রার্থনা করা”। অর্থাৎ মানুষ যখন কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে এবং নিজস্ব সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সঠিক পথে অগ্রসর হওয়া কঠিন হয়ে যায়, তখন আল্লাহর কাছে কল্যাণের ইঙ্গিত চাওয়াকেই ইস্তেখারা বলা হয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ​ইরানের খ্যাতিমান নৈতিক শিক্ষাগুরু মরহুম আয়াতুল্লাহ আজিজুল্লাহ খোশওয়াকত (রহ.) তাঁর একটি নৈতিক পাঠে “ইসলামে ইস্তেখারার স্থান” বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তাঁর বক্তব্যকে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করলে তা নিম্নরূপ:

১. যেখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে স্পষ্ট হুকুম আছে—সেখানে ইস্তেখারা অনুচিত

ইসলাম বহু বিষয়ে সুস্পষ্ট ও নির্ধারিত বিধান দিয়েছে। যে সব বিষয়ের ওপর আল্লাহর হুকুম নির্দিষ্ট, সেখানে ইস্তেখারার কোনো প্রয়োজন নেই; বরং সেখানে ইস্তেখারা করা অযথা ও অনুচিত।

  • যে কাজ ওয়াজিব (অবশ্যক), সেটি ইস্তেখারা ‘খারাপ’ দেখালেও ত্যাগ করা বৈধ নয়। কারণ আল্লাহর হুকুম মানুষের অনুমান বা ইস্তেখারার ফলাফলের চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে।

  • যে কাজ হারাম, সেখানে ইস্তেখারা ‘ভালো’ এলেও সেই কাজ করা যাবে না। কারণ আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন, তা কোনো অবস্থাতেই অনুমোদিত হতে পারে না।

এ থেকে বোঝা যায়— যে সব ক্ষেত্রে ঐশী হুকুম স্পষ্ট, সেখানে ইস্তেখারা করা অর্থহীন এবং শরীয়তসম্মত নয়। ইস্তেখারা কেবল তখনই প্রাসঙ্গিক, যখন শরিয়ত কোনো স্পষ্ট নির্দেশ দেয়নি।

২. যেখানে সিদ্ধান্ত অস্পষ্ট—সেখানে ইস্তেখারা অনুমোদিত

যে সব বিষয়ে শরিয়তের নির্দিষ্ট নির্দেশ নেই এবং মানুষকে নিজের বিবেচনা ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সেখানে মাঝে মাঝে সংশয় দেখা দিতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে—কোনো অপরিচিত ব্যক্তির সাথে ব্যবসা করা।

ব্যবসা-বাণিজ্য ইসলামি দৃষ্টিতে মূলত হালাল; কিন্তু সেই ব্যক্তি বিশ্বাসযোগ্য না অবিশ্বাসযোগ্য—এটা জানা না থাকলে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
এ ধরনের ক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষায় তিন ধাপ নির্দেশ করা হয়েছে:

ধাপ–১: নিজস্ব বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করা

প্রথমেই মানুষের উচিত নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা প্রয়োগ করা। যদি আগে ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, লেনদেন বা আচরণ-পর্যবেক্ষণের সুযোগ থাকে, তবে তার চরিত্র সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব।

  • যদি আচরণ দেখে মনে হয় যে সে অসৎ, প্রতারণাপ্রবণ বা দায়িত্বহীন— তখন লেনদেন না করাই সমীচীন।

  • আর যদি দেখা যায় সে সততার সাথে আচরণ করে, প্রতিশ্রুতির প্রতি দায়বদ্ধ এবং মানুষের হক আদায়কারী— তাহলে লেনদেন করতে কোনো অসুবিধা নেই।

এটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রথম ও মৌলিক ধাপ।

ধাপ–২: নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ করা

যদি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা না থাকে, তবে যেসব মানুষ পূর্বে তার সাথে লেনদেন করেছেন—তাদের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
তাদের অভিজ্ঞতা অনেক সময় বিষয়টিকে পরিষ্কার করে দেয়।

  • যদি তারা জানান যে ওই ব্যক্তি অবিশ্বাসযোগ্য— তাহলে লেনদেন না করাই শ্রেয়।

  • আর যদি তারা তাকে বিশ্বস্ত, সৎ ও দায়িত্বশীল বলে জানায়—তাহলে আশ্বস্ত হয়ে লেনদেন করা যেতে পারে।

এটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের দ্বিতীয় ধাপ।

ধাপ–৩: সবকিছু চেষ্টা করেও সিদ্ধান্ত নির্দিষ্ট না হলে—ইস্তেখারা

যদি প্রথম দুই ধাপ—বুদ্ধি-বিবেচনা এবং পরামর্শ—কোনোটিই ফলপ্রসূ না হয়, অথবা তথ্য ও অভিজ্ঞতা এতটাই সীমিত থাকে যে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় না, তখন মানুষ এক প্রকার স্থবিরতার মধ্যে পড়ে।

এ অবস্থায় মানুষের পক্ষ থেকে আর কোনো করণীয় অবশিষ্ট থাকে না
যেখান থেকে মানবিক প্রচেষ্টার সীমা শেষ হয়, সেখান থেকেই ইস্তেখারার সূচনা।

ইস্তেখারা তখন

  • সিদ্ধান্তহীনতা থেকে মুক্তির পথ,

  • আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে সঠিক পথ বেছে নেওয়ার সহায়ক,

  • এবং মানসিক প্রশান্তি ও স্থিরতা লাভের মাধ্যম হয়ে ওঠে।

ইস্তেখারা কখনোই ভবিষ্যৎ বলার বা ভাগ্য গণনার উপায় নয়; বরং এটি একজন মুসলমানকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ ও তাঁর হেদায়েতের ওপর নির্ভরশীল হতে শেখায়।

​​​​​​

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha