হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ আলীরেজা তেরাশিয়ুন—পরিবার ও দাম্পত্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ—“সন্তানের অনুপযুক্ত কন্টেন্টে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ” বিষয়ে প্রশ্নোত্তরে তার পরামর্শ তুলে ধরেছেন, যা আপনাদের জন্য পেশ করা হলো।
প্রশ্ন: আমার চৌদ্দ বছরের ছেলে তার বাবার ফোনে অনুপযুক্ত ছবি দেখেছে। তার নিজের কাছে একটি সাধারণ ফোনও আছে। এমন অবস্থায় কীভাবে বিষয়টি সামলানো উচিত?
এই ধরনের সমস্যায় দুইটি পরিস্থিতি আলাদা করে বিবেচনা করতে হয়। কখনো সন্তান বুঝে ফেলে যে বাবা-মা ঘটনাটি জেনে গেছেন, কখনো আবার সে তা জানে না। দুই অবস্থাতেই আমাদের সংযত ও নীতিগতভাবে এগোতে হবে।
যদি সন্তান বুঝে যে বাবা–মা বিষয়টি জেনে গেছেন
এই ক্ষেত্রে দুটি প্রধান পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:
১. বাবা–মায়ের আন্তরিক ও শান্ত কষ্ট প্রকাশ
মা যদি প্রথমে বিষয়টি জানতে পারেন, তবে দুঃখ ও উদ্বেগের ভঙ্গিতে সন্তানের সঙ্গে কথা বলতে পারেন—
“তুমি এটা কী করেছো? জানো এটা কত ভুল এবং কষ্টদায়ক? আমি সত্যি বুঝতে পারছি না এখন কীভাবে এটা সামলাবো।”
এভাবে শিশুর মনে তার কাজের ভুলটা স্পষ্ট হয়। তার মনে এই উপলব্ধি জন্মায়:
“বড় ভুল করেছি। এটা করা উচিত ছিল না। দেখো মা কত কষ্ট পেল—তাহলে কাজটা নিশ্চয়ই খারাপ ছিল।”
২. ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি রোধ
এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হবে বুদ্ধিদীপ্ত, শান্ত ও পরোক্ষ ধাঁচের।
যেমন—বাবা–মাকে নিজেদের ফোনের প্রতি আরও সচেতন থাকা, সন্তানকে ফোন নিয়ে একা থাকতে না দেওয়া, এবং ফোন ব্যবহারকে পরিবারের খোলা পরিবেশে সীমাবদ্ধ করা।
যদি সন্তান না জানে যে বাবা–মা বিষয়টি জেনে গেছেন
এই ক্ষেত্রে সন্তানকে “ভয় এবং আশা”—এই দুই অবস্থার মাঝামাঝি রাখা ভালো। পরোক্ষ সতর্কতা হিসেবে বলা যেতে পারে
মা/বাবা, খেয়াল রেখো যেন বাবার ফোনটা না নাও এবং ভুল করে এমন কিছু দেখে ফেলো না যেগুলো দেখা উচিত নয় বা উপযুক্ত নয়।
এভাবে সন্তান সন্দেহে থাকবে যে হয়তো বাবা–মা কিছু জানেন, কিন্তু যেহেতু কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাননি, সে নিশ্চিতও হবে না। এই সন্দেহ তাকে পুনরায় সেই কাজে যেতে নিরুৎসাহিত করবে।
এরপর আগের অবস্থার মতোই—একাই ফোন ব্যবহার না করার পরিবেশ তৈরি করা হবে, যা পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি কমাবে।
সন্তানের মনে “গোপনীয়তা” নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি হবে কি?
অনেক বাবা–মায়ের প্রশ্ন থাকে—যদি আমরা সন্তানকে বলি অনুপযুক্ত বিষয়বস্তু দেখা ঠিক নয়, সে হয়তো ভাববে “আমার নিজের ফোনে তোমাদের হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই।”
তবে এখানে লক্ষ্য করার বিষয়—পরামর্শ দিতে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়, তা বাবা–মায়ের স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণ ও তদারকির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।
“মনে রেখো, এমন কিছু দেখো না যেগুলো দেখা উচিত নয়”—এভাবে বললে সন্তানের মনে প্রশ্ন জাগে না যে “ওটা ফোনে কেন ছিল”, বরং সে বুঝে আচরণটাই ভুল।
বিশেষজ্ঞরা বলেন—ইন্টারনেট সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রেও অবাঞ্ছিত কন্টেন্ট হঠাৎ সামনে চলে আসতে পারে। তাই বাবা–মায়ের উচিত ফোনে উপযুক্ত নিরাপত্তা-সফটওয়্যার ব্যবহার করে পরিবেশকে আরও নিরাপদ করা।
শেষ কথা: সন্তানের ‘মানসিক খাদ্য’ নিশ্চিত করুন
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো—বাবা–মায়ের উচিত সন্তানের “মানসিক ও চিন্তাগত খাদ্য” সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন থাকা।
এর একটি বড় অংশ হলো ভালো বই ও উপকারী শিক্ষামূলক উপকরণ বেছে দেওয়া।
যেমন ধর্মীয় বর্ণনাগুলোতে আছে—যেমনভাবে আমরা খাওয়া-দাওয়া ও হালাল–হারামে সতর্ক থাকি, তেমনি সন্তানের মানসিক খাদ্য সম্পর্কে সতর্ক থাকা আরও বেশি জরুরি।
কারণ, শিশু যা দেখে–শোনে–পড়ে—তা তার ব্যক্তিত্ব, নীতি এবং ভবিষ্যতের চিন্তা-চেতনার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
অতএব, এই বিকাশের সময়ে সঠিক সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক উৎস নির্বাচন সন্তানদের মানসিক–নৈতিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার কমেন্ট