বৃহস্পতিবার ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ - ০৭:২৫
ইমাম খোমেনির (রহ.) বর্ণনায় সংবিধানের বিপরীতে কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠীর জুলুম ও দম্ভ

বিপ্লবের পর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংবিধান এমন এক সময়ে গৃহীত হয়— যখন বিভিন্ন চাপ, প্রোপাগান্ডা, সংগঠিত বিরোধিতা এবং বিদেশপুষ্ট কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী জনগণের মনে সন্দেহ সৃষ্টির চেষ্টা করছিল। তবে এসব বাধা–বিপত্তি সত্ত্বেও দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সংবিধানের পক্ষে ভোট দেন। ইমাম খোমেনি (রহ.) এই সংবিধানকে রাষ্ট্রপরিচালনার একটি নির্ভরযোগ্য ও কার্যকর নকশা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন—সংবিধানবিরোধী যেকোনো জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগ জনমতের পরিপন্থী ও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: বারোই অজার (৩ ডিসেম্বর)—সংবিধান দিবস উপলক্ষে ইমাম খোমেনি (রহ.) এক নিবন্ধে স্মরণ করিয়ে দেন যে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সংবিধান আলেম, বিশেষজ্ঞ ও ইসলামি চিন্তাবিদদের যাচাই–বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রণীত একটি সুসংহত দলিল। তিনি বলেন,
এই সংবিধান কিছু ব্যক্তির জন্য উদ্বেগের কারণ হলেও, আমার কোনো উদ্বেগ নেই; কারণ এটি সঠিক, শক্তিশালী এবং ইসলামি নীতিমালার ওপর প্রতিষ্ঠিত। কিছু গোষ্ঠী যদি মনে করে যে তাদের প্রত্যাশিত বিষয় এতে নেই—তবে সেটা তাদের ভুল ধারণা। ইসলাম সবার জন্য, এবং ইসলামী সংবিধান—ইনশাআল্লাহ, সমস্ত সমস্যা ও প্রয়োজনের সমাধান দেবে। ভবিষ্যতে যদি কোনো ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়, জাতীয় সংসদীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা সংশোধন করা সম্ভব। তাই কোনো সম্প্রদায়ের ভয় পাওয়ার কারণ নেই।

যুক্তি থেকে জবরদস্তির পথে রাজনৈতিক বিরোধীরা
ইমাম বলেন, বিপ্লবের শুরু থেকেই বিভিন্ন গোষ্ঠী ধাপে ধাপে বিরোধিতা করেছে। তারা ভেবেছিল— জনগণ সংবিধানকে সমর্থন করবে না। বিশেষ করে যখন সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে অংশগ্রহণ কম ছিল, তখন তারা আশা করেছিল যে সংবিধানের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা সৃষ্টি হবে। কিন্তু তারা হতাশ হয়ে দেখে— সংবিধান গণভোটে জনগণের সাড়া ইসলামী প্রজাতন্ত্রের গণভোটের চেয়েও বেশি জোরালো। এখন কিছু গোষ্ঠী পথ হারিয়ে ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে প্রকাশ্যেই বলতে শুরু করেছে, “আমরা এই সংবিধান চাই না”।

আগে তারা কোনো ধারার ত্রুটি নিয়ে আলোচনা তুলত—যা নিয়ে কথা বলা যেত। কিন্তু এখন যুক্তি ছেড়ে তারা ঝুঁকে পড়েছে জবরদস্তি, চাপে রাখা এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর দিকে। এর পেছনে রয়েছে—পাহলাভী শাসনের অবশিষ্ট অনুসারী, মার্কিনঘনিষ্ঠ লবি এবং অভ্যন্তরীণ কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। কিছু সরলপ্রাণ মানুষও তাদের প্রভাবে ভুল ভাবছে যে— এদের কথায় সত্যতা আছে।

জাতীয় সিদ্ধান্তের বিপরীতে অল্পসংখ্যক মানুষের অবস্থান অগ্রহণযোগ্য
বাস্তবতা হলো— এদের অবস্থানে কোনো যুক্তি নেই। শুরু থেকে ধাপে ধাপে তারা বিরোধিতা চালিয়ে গেছে; এখন যখন দেখছে—সংবিধানের পক্ষে পুরো জাতি একত্রিত— তখন তারা ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে চাইছে।

ইমাম বলেন, একটি জাতি যখন দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, তখন কয়েকজন মানুষ জোর করে বলতে পারে না, “আমরা সংবিধান মানি না।” সংবিধান গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা তাদের হাতে নেই। জনগণ নিরঙ্কুশভাবে সংবিধান অনুমোদন করেছে, এবং এর বিরুদ্ধে অযথা হাত–পা ছোড়া দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়।

উৎস: সাহিফায়ে ইমাম, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ১৭৫–১৭৬

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha