ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের হাওজায়ে ইলমিয়ার তালাবা ও শিক্ষার্থী বিষয়ক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা— তাবরিজে হাওজা নিউজ এজেন্সি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মায়ের ভূমিকা সম্পর্কে সর্বোচ্চ নেতার বক্তব্য অত্যন্ত বাস্তবভিত্তিক। পরিবারে মা-ই সন্তানের প্রথম শিক্ষক ও অনুকরণীয় ব্যক্তি। মায়ের গভীর, আন্তরিক ও নিরবচ্ছিন্ন সম্পর্কই সন্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং আচার–অনুশীলন গড়ে তোলে। শিশুর সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিচয়ের বীজতলা মূলত এখানেই রোপিত হয়।
মাতৃভাষা— সংস্কৃতি পরিবহনের হৃদয়স্পর্শী মাধ্যম
তিনি উল্লেখ করেন, গল্প, কাহিনি, লোকগাথা, পারিবারিক স্মৃতি ও উপদেশ—এসব মায়েরা সন্তানের মনে যেভাবে প্রতিষ্ঠা করেন, তা শুধু তথ্যের স্থানান্তর নয়; বরং সংস্কৃতি, সভ্যতা ও পরিচয়ের প্রাণবিন্দু তাদের হৃদয়ে সঞ্চারিত করা। স্থানীয় কবিতা, প্রবাদবাক্য এবং মাতৃভাষায় দৈনন্দিন কথোপকথন প্রজন্মদের মধ্যে জীবন্ত, স্নেহঘন ও অবিচ্ছিন্ন সংযোগ তৈরি করে।
ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে শৈশবের অংশগ্রহণ—বাস্তব শিক্ষার বিদ্যালয়
হুজ্জাতুল হাসেমি বলেন, মুহাররমের শোকানুষ্ঠান, ঈদ, নওরোজসহ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় অনুষ্ঠানে শিশুদের উপস্থিতি তাদের বুঝতে শেখায় ঐতিহ্য কী, সমাজ ও পরিবার কোথায় দাঁড়িয়ে আছে এবং অতীতের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা কেন জরুরি। এসব অনুশীলন তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ, ধর্মীয় আবেগ এবং সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততা জাগ্রত করে।
আবেগময় ও নিরাপদ পারিবারিক পরিবেশ—বিশ্বাস গঠনের ভিত
তিনি বলেন, স্নেহময় ও নিরাপদ পারিবারিক পরিবেশে সন্তান ধর্ম, সংস্কৃতি ও জীবনের প্রশ্নগুলো সহজেই আলোচনায় আনতে পারে। এ ধরনের আন্তরিক সংলাপ একদিকে পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করে, অন্যদিকে সন্তানদের মাঝে যুক্তিসংগত, টেকসই ও গভীর বিশ্বাস গঠনের ভিত্তি স্থাপন করে। এভাবেই তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিচয়ের প্রতি শক্তিশালী অনুরাগ জন্ম নেয়।
সমকালীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মায়েদের দায়িত্ব
হুজ্জাতুল ইসলাম হাসেমি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সমাজের চ্যালেঞ্জের কথাও সতর্ক করেন। বলেন, প্রযুক্তির বিস্তার এবং বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন স্থানীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় শিক্ষার স্বাভাবিক ধারাকে ব্যাহত করতে পারে। তাই মায়েদের প্রয়োজন সচেতন ও বিচক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গি— মিডিয়া ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শেখানোর পাশাপাশি সন্তানের সামনে আকর্ষণীয় ও স্থায়ী উপায়ে আসল ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ উপস্থাপন করা।
ঐতিহ্য শেখানোর বাস্তব ও অভিজ্ঞতামূলক পদ্ধতি
তিনি যোগ করেন, কার্পেট বোনা, মৃৎশিল্প বা স্থানীয় হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী রান্না, বয়সোপযোগী ইতিহাসগ্রন্থ ও প্রাচীন কাহিনি পাঠ—এসবই শিশুদের কাছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে জীবন্ত ও স্পর্শযোগ্য করে তোলে। এতে অতীত তাদের নিকট শুধু পরিচিতই নয়, প্রিয় ও আপন হয়ে ওঠে।
মায়েরা— ধর্ম ও সংস্কৃতি রক্ষার প্রথম সারির যোদ্ধা
হুজ্জাতুল ইসলাম হাসেমি বলেন, মায়েরা জাতির সংস্কৃতি, ধর্ম ও পরিচয়ের সম্মুখসারির রক্ষক। তাদের সচেতন, আন্তরিক ও ভালোবাসাপূর্ণ প্রচেষ্টা শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও একটি দৃঢ় সাংস্কৃতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করায়। মায়েদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করা—আসলে দেশের ভবিষ্যৎ সংস্কৃতি, আত্মপরিচয় ও আধ্যাত্মিকতার ওপর বিনিয়োগ।
আপনার কমেন্ট