সানানদাজে হাওজা নিউজ এজেন্সি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো— বিশেষত পশ্চিমা দেশ ও পরাশক্তিগুলো— ইরানসহ অন্য কোনো জাতির মঙ্গল নিয়ে ভাবছে, এমন ধারণা নিছক সরলতা ছাড়া আর কিছু নয়।
তার বক্তব্যে উঠে আসে, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক ইতিহাস, বিশেষত মার্কিন নেতাদের অতীত— প্রমাণ করে যে তারা সবসময় নিজেদের স্বার্থকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। গত কয়েক শতকের উপনিবেশিক ইতিহাসও এ সত্যকে স্পষ্ট করে।
মাওলানা শিরজাদি আরও বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো এত সহজে ইসলামী বিশ্বের প্রতি তাদের চাপ ও শত্রুতা বন্ধ করবে না। যতদিন ইসলামী ও আরব দেশগুলোর নেতারা পশ্চিমা শক্তিগুলোর সামনে এভাবে মাথা নত করবেন, ততদিন ইসলামী বিশ্বের শক্তি ও ঐক্য নিয়ে আশাবাদী হওয়া সম্ভব নয়।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে আরব দেশগুলোকে, বিশেষত সৌদি আরবকে—“দুগ্ধদায়ী গাভি” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। এই মন্তব্য শুধু অপমানজনক নয়, বরং প্রমাণ করে যে আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলো এখনো ইসলামি বিশ্বকে ঔপনিবেশিক দৃষ্টিতে দেখে এবং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে প্রকৃত ঐক্য গড়ে উঠুক, তা কখনোই চায় না।
তিনি বলেন, আজ পশ্চিমা দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের শক্তি ভাঙার চেষ্টায় ব্যস্ত। সমগ্র ইসলামী বিশ্বে কেবল ইরানই তাদের বাড়াবাড়ি ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়েছে। এ কারণে তারা সব রকম উপায় খুঁজছে যাতে এই জাতি ও রাষ্ট্রের শক্তি ক্ষুণ্ণ করা যায়; যদিও আল্লাহর কৃপায় তাদের কোনো ষড়যন্ত্রই এখন পর্যন্ত সফল হয়নি।
মারিভানের জুমার ইমাম আরও জানান, শত্রুরা জানে যে সামরিকভাবে ইরানের সঙ্গে মোকাবিলা করা তাদের সাধ্যের বাইরে। তাই এখন তারা সামাজিক মাধ্যম ও স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের বিরুদ্ধে এক জটিল ও বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক এবং চিন্তাগত যুদ্ধ শুরু করেছে—যাকে এক ধরনের ‘সমন্বিত যুদ্ধ’ বলা যায়। তাই তরুণ ইরানিদের উচিত এ যুদ্ধের প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন থাকা, যাতে তারা শত্রুর কূটচাল বা বিভ্রান্তিকর প্রচারণার ফাঁদে না পড়ে।
তিনি সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হলো সময়ের বাস্তবতা ও বিরোধীদের কর্মকৌশল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা, এবং সামাজিক মাধ্যম ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া।
শেষে তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, তরুণ ও কিশোরদের মনে আস্থা, আত্মবিশ্বাস ও আশার চাষাবাদই এমন এক শক্তিশালী ইরান নির্মাণ করতে পারে, যা মানবতা ও ইসলামের শত্রুদের সামনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে।
আপনার কমেন্ট