হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হযরত আয়াতুল্লাহ নূরে হামেদানি “জান্নাত” প্রচার-উদ্ভাবন উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে পাঠানো এক বার্তায় প্রচারমূলক কর্মকাণ্ডের প্রসার ও উন্নয়ন, হাওজার মধ্যে প্রচারের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং দক্ষ মুবাল্লিগ তৈরির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
বার্তাটি নিম্নরূপ
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيم
সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, যিনি সকল জগতের প্রতিপালক। তাঁর শান্তি ও আশীর্বাদ বর্ষিত হোক আমাদের নেতা ও নবী, আবুল কাসিম মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর এবং তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের ওপর-বিশেষ করে জমিনে আল্লাহর অবশিষ্ট নিদর্শনের ওপর। আর তাঁদের শত্রুদের ওপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক কিয়ামত পর্যন্ত।
﴿الَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَدًا إِلَّا اللَّهَ وَكَفَى بِاللَّهِ حَسِيبًا﴾
“যারা আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয় এবং শুধুমাত্র আল্লাহকেই ভয় করে; তারা আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় করে না। হিসেব গ্রহণকারী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।”
সেই সম্মানিত সমাবেশকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
আজ হাওজা-ই-ইলমিয়ার অন্যতম বড় দায়িত্ব হলো তাবলীগ। এবং সম্ভবত প্রথম দায়িত্বও এটিই। সব প্রচেষ্টা এক অর্থে এই দায়িত্বেই এসে উপনীত হয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত-প্রচারের দায়িত্ব কখনোই মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না।
এই ভিত্তিতে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে -কীভাবে এ দায়িত্ব আরও ফলপ্রসূ করা যায়।
যদিও আজকের যুগে সামাজিক মাধ্যম, ডিজিটাল পদ্ধতি, নতুন নতুন প্রচার মাধ্যম তৈরি হয়েছে-তবুও আমি এখনো বিশ্বাস করি, সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো প্রচারের ঐতিহ্যবাহী রূপ-মুখোমুখি দাওয়াত বা মিম্বরের বাণী।
আমি স্বীকার করি যে, নতুন প্রচার মাধ্যম যেমন-ভিডিও ক্লিপ, ডিজিটাল কনটেন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া— এসবের প্রভাব অনেক। সমাজও তা দেখছে।
তবে ভার্চুয়াল প্রচারের এই ব্যাপক প্রভাব এসেছে মূলত ঐতিহ্যবাহী ‘মুখোমুখি প্রচারের’ দুর্বলতার কারণে। এই বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পর্যালোচনা করা উচিত।
প্রচার একটি জ্ঞানভিত্তিক শিল্প
সবাইকে মনে রাখতে হবে-তাবলীগ বা দাওয়াত একটি শিল্প, এবং এতে প্রচুর জ্ঞান প্রয়োজন।
অনেকের চোখে এটি সহজ কাজ মনে হলেও-বাস্তবে প্রচার, খুতবা ও মিম্বর- এগুলো সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। কার্যকর হতে হলে এটি অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য।
একজন সফল মুবাল্লিগের উচিত-
ফার্সি ও আরবি সাহিত্যে পারদর্শী হওয়া;
চরিত্রে শুদ্ধ ও যুগ-সচেতন হওয়া;
প্রথমেই শ্রোতা-মনস্তত্ত্ব বুঝে কথা বলা;
নির্ভরযোগ্য ও প্রামাণ্য উৎস ব্যবহার করা;
ভিত্তিহীন তথ্য ও গল্প পরিহার করা;
শ্রোতার সময় অপচয় না করা;
এবং এমন কিছু বলা থেকে বিরত থাকা, যা আহলে বাইতের (আ.) মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়-যদিও কোথাও তা উল্লেখ থাকে।
মুবাল্লিগকে সমাজে উদ্ভূত সন্দেহ ও প্রশ্নগুলো নজরে রাখতে হবে এবং স্পষ্ট ভাষায় প্রমাণ-ভিত্তিক উত্তর দিতে হবে।
‘ঐতিহ্যগত’ অজুহাতে সমাজের সমসাময়িক সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সমস্যাকে উপেক্ষা করা যাবে না।
বরং বক্তাকে এ উপলব্ধিতে আসতে হবে যে-তিনি জনগণের সত্যিকারের কণ্ঠস্বর।
একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন
এ বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ যে, তাবলীগ বা প্রচারের কাজটি একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার অধীনে পরিচালিত হওয়া উচিত।
দুঃখজনকভাবে বর্তমানে বিভিন্ন সম্পর্কিত ও অপ্রাসঙ্গিক প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করছে, যা একটি বড় সমস্যা।
তাবলীগ একটি বিশেষায়িত কাজ-তাই একক কোনো কেন্দ্রীয় সংস্থা এ দায়িত্ব গ্রহণ করাই উচিত।
আরেকটি বিষয় হলো-প্রচারের বিভিন্ন শাখাকে বিশেষায়িত করা:
ভার্চুয়াল স্পেসে মুবাল্লিগ,
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মুবাল্লিগ,
অ্যানিমেশন ও ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট প্রস্তুতকারী মুবাল্লিগ,
শিশু ও কিশোরদের জন্য বিশেষ মুবাল্লিগ।
যদিও হওযা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র ও তাবলীগ অফিস ইতিমধ্যে এসব বিষয়ে কাজ শুরু করেছে-যা প্রশংসনীয়।
শেষে, আমি প্রচারমূলক কর্মকাণ্ডের প্রসার, গুণগত উন্নয়ন, মুবাল্লিগদের উৎসাহ প্রদান ও প্রতিভা বিকাশের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি।
এই মূল্যবান উৎসব আয়োজন করার জন্য সকল আয়োজককে ধন্যবাদ জানাই এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে সকলের তৌফিক কামনা করছি।
১৭ আযর ১৪০৪
হুসাইন নূরে হামেদানি
আপনার কমেন্ট