হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আজ কোম শহরের গাদির কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত “জান্নাত উৎসব”-এর সমাপনীতে হাওজা-ই-ইলমিয়ার পরিচালক আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আ’রাফি ধর্মীয় চিন্তা প্রচার ও তাবলীগে নবীনতা ও সৃজনশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বলেন, এটাই আজকের সমাজে প্রভাব বিস্তারের প্রধান উপাদান।
অতীত অভিজ্ঞতা ও আধুনিক প্রচারের সমন্বয়
আয়াতুল্লাহ আ’রাফি বলেন, সর্বোচ্চ নেতা যে “অগ্রবর্তী ও আদর্শ হাওজার” কথা বলেছেন, তার একটি মূল উপাদান হলো— উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা, যা অতীতের পরীক্ষিত পদ্ধতিকে ভিত্তি করে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজে লাগানো।
তিনি বলেন: ইতিহাস সাক্ষী যে প্রচারের পদ্ধতি যুগে যুগে বদলেছে, কিন্তু বার্তার আত্মা একই থেকেছে। মূল বার্তাকে অটুট রেখে নতুন নতুন পথ সৃষ্টি করাই প্রকৃত উদ্ভাবন।
হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর প্রচার-পদ্ধতি: সৃজনশীলতার উচ্চতম আদর্শ
তিনি বলেন, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর সংক্ষিপ্ত কিন্তু আলোকোজ্জ্বল জীবন আমাদের শেখায়— কীভাবে সৃজনশীল উপায়ে দাওয়াতের মূল বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়।
তাঁর—
মানুষের সাথে যোগাযোগের ধরণ,
ফদক খুতবা,
মদিনার ঘরে ঘরে প্রভাববিস্তারী কর্মসূচি—
এসবই প্রচারের নবীন কৌশলের উদাহরণ, যার প্রভাব আজও টিকে আছে।
সমসাময়িক যুগে উদ্ভাবনের অপরিহার্যতা
আয়াতুল্লাহ আ’রাফি বলেন, ইমাম খোমেইনি (রহ.) ছিলেন প্রচারের নতুন কৌশলের স্থপতি। তাঁর ভাষণ ও সামাজিক আন্দোলনের পদ্ধতি এমনভাবে গঠিত ছিল যাতে মানুষের হৃদয় ও চিন্তায় গভীর প্রভাব সৃষ্টি হয়।
তিনি জোর দিয়ে বলেন:
আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল যুগে প্রচারে উদ্ভাবন অপরিহার্য। অনেক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক পরিবর্তন এখন এক সপ্তাহ বা এক মাসে ঘটে, যা অতীতে শতাব্দী লাগত।
এ অবস্থায় প্রচারের যাত্রাকে টিকিয়ে রাখতে হলে সৃজনশীলতাই প্রধান শক্তি।
উদ্ভাবনী প্রচারকে শক্তিশালী করতে উৎসবের ভূমিকা
তিনি বলেন: ‘জান্নাত’ উৎসব শুধু নতুনত্বকে উৎসাহিত করবে না; বরং সঠিক পথে উদ্ভাবনের ব্যবহারও শেখাবে।
প্রতিটি নতুন ধারণাকে নীতিগত কাঠামোর মধ্যে রাখতে হবে, তাহলেই তা সর্বোচ্চ প্রভাব ফেলবে।
তিনি উল্লেখ করেন, কখনো একজন মুবাল্লিগ প্রেম ও উদ্ভাবন নিয়ে কোনো দরিদ্র বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করে এমন ফল সৃষ্টি করেন— যা পুরো সমাজকে প্রভাবিত করে।
পরীক্ষিত পদ্ধতির সাথে সৃজনশীলতার মিশ্রণই আজকের যুগে কার্যকর প্রচারের পথ।
নেতৃত্ব ও নেটওয়ার্ক গঠন: প্রভাব বৃদ্ধি করার মূল চাবিকাঠি
আয়াতুল্লাহ আ’রাফি বলেন, সত্যিকার নেতৃত্ব হলো—
অন্যদের সক্ষম করে তোলা,
প্রচারের কাজে অংশী করে তোলা,
এবং নেটওয়ার্ক তৈরি করে প্রভাব বিস্তার করা।
তিনি কিছু উদাহরণ দেন— গ্রামীণ এলাকা বা প্রান্তিক অঞ্চলে মুবাল্লিগরা শিক্ষক, যুবক ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীকে যুক্ত করে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন; এটি আধুনিক যুগে সর্বাধিক কার্যকর প্রচার-নেতৃত্বের উদাহরণ।
ধর্মীয় প্রচারে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
তিনি বলেন, বহু প্রচারমূলক কর্মকাণ্ডে নারীরা অসাধারণ ভূমিকা রাখছেন। তারা নেটওয়ার্ক তৈরি করে অন্যদের যুক্ত করছেন এবং ইসলাম ও বিপ্লবের চিন্তা প্রচার করছেন।
প্রকৃত কৃতিত্ব তখনই আসে যখন এই উদ্ভাবনগুলো সমষ্টিগতভাবে বিস্তৃত হয়।
পাশ্চাত্য ভাবধারার প্রভাব সম্পর্কে সতর্কতা
তিনি বলেন: আমরা চাই বা না চাই— বিশ্ব এখন এক বিশাল পরিবর্তনের মধ্যে আছে এবং পশ্চিমা দর্শন মানুষের চিন্তা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, জীবনধারা ও সামাজিক কাঠামোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে।
তাই শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে থাকা মানুষদের এসব ধারণা, তার গোপন বার্তা ও প্রভাবশালী কাঠামো সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।
বিভিন্ন মতাদর্শের সাথে সঠিক মোকাবিলা
আয়াতুল্লাহ আ’রাফি বলেন:
ইসলামী বিপ্লবের বিকল্প ও অনন্য বার্তা আজও বিশ্বে বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
ইমাম খোমেইনি (রহ.) বহু আগেই ঘোষণা করেছিলেন— বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু হলো একটি ভিন্ন পদ্ধতি ও যুক্তির উপস্থাপন।
কিন্তু পশ্চিম এই ভিন্নতাকে সহজে মেনে নিতে পারে না এবং বিভিন্ন কৌশলে তাকে সীমিত করতে চায়।
বিশেষত ছাত্র-ছাত্রী ও উচ্চশিক্ষিতদের ক্ষেত্রে শত্রুর প্রচার কৌশল ভালোভাবে চেনা অত্যন্ত জরুরি।
প্রচারের পুরনো পদ্ধতি শক্তিশালী করা এবং নতুন করে সাজানো
তিনি বলেন:
প্রচারের ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি— বই, মিম্বর ও মসজিদ— আজও মূল কেন্দ্র। এগুলোর মূল্য কখনো কমবে না।
তবে এগুলোকে যুগোপযোগী রূপ দিতে হবে, যাতে তরুণ প্রজন্মকে আরও ভালোভাবে শিক্ষিত ও পরিচালিত করা যায়।
আপনার কমেন্ট