হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসলামের মতে, নারী ও পুরুষ কেউই একে অপরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বা নিকৃষ্ট নয়। তারা একই মানবিক সত্তার দুই পরিপূরক অংশ। দুজনের মধ্যে অনেক গুণ ও দায়িত্ব এক হলেও, কিছু দায়িত্ব ও বৈশিষ্ট্য আলাদা—আর এই পার্থক্যই মানবজীবনকে সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ করে।
পাশ্চাত্যে নারীর অবস্থান: অতীত থেকে বর্তমান
এক সময় পাশ্চাত্যে নারীকে স্বতন্ত্র মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতো না। উনিশ শতকের আগ পর্যন্ত, বিয়ের পর নারী আইনগতভাবে স্বামীর অংশ হয়ে যেত। তার নিজের নামে সম্পত্তি রাখা, ব্যাংক হিসাব খোলা বা স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার অধিকার ছিল না। তাকে প্রায় শিশুর মতো বিবেচনা করা হতো।
পরে এই অবিচারের প্রতিক্রিয়ায় পাশ্চাত্য সমাজ উল্টো পথে হাঁটে। নারীকে পুরোপুরি স্বাধীন ও আলাদা এক সত্তা হিসেবে তুলে ধরা হয়। ধীরে ধীরে নারীকে পরিবার, স্বামী ও সন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা শুরু হয়। এর ফলে পরিবার ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
এ সময় “নিজ শরীরের মালিকানা”র ধারণা জোরালোভাবে প্রচার করা হয়। বাস্তবে এটি নারীর সম্মান রক্ষা না করে তাকে বাজারের পণ্যে পরিণত করে। নারী বিজ্ঞাপন ও ভোগবাদী সংস্কৃতির হাতিয়ার হয়ে ওঠে—যার ক্ষতিকর প্রভাব আজ সারা বিশ্বেই দেখা যাচ্ছে।
ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলাম নারীকে না পুরুষের অধীন করে, না একা ও বিচ্ছিন্ন করে। বরং নারী ও পুরুষকে পরিবার নামক কাঠামোর মধ্যে একে অপরের সহায়ক ও পরিপূরক হিসেবে দেখে। ইসলামে পরিবার সমাজের মূল ভিত্তি। ইসলাম কোনো অবস্থাতেই এই পরিবার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে রাজি নয়।
ইসলামে নারী সম্পূর্ণ স্বাধীন সত্তা। তার বিশ্বাস, চিন্তা ও কর্মের জন্য সে নিজেই দায়ী।
সূরা নাহল-এর ৯৭ নম্বর আয়াত বলা হয়েছে— “যে কেউ সৎকর্ম করে— সে পুরুষ হোক বা নারী এবং সে ঈমানদার হয়, অবশ্যই আমরা তাকে পবিত্র ও কল্যাণময় জীবন দান করব।”
কুরআনে আরও উদাহরণ দেওয়া হয়েছে— ফেরাউনের স্ত্রী অত্যাচারী শাসকের ঘরে থেকেও নেককার ছিলেন এবং জান্নাতের যোগ্য হন। আবার নবী লূত (আ.)-এর স্ত্রী নবীর ঘরে থেকেও সৎপথে ছিলেন না। এতে বোঝা যায়, নারীর মর্যাদা ও পরিণতি নির্ধারিত হয় তার নিজের ঈমান ও কাজের মাধ্যমে, স্বামীর পরিচয়ে নয়।
মর্যাদার মাপকাঠি কী?
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের মর্যাদা নির্ধারণের মানদণ্ড হলো ঈমান ও সৎকর্ম। নারী না পুরুষ—এই পরিচয় এখানে মুখ্য নয়। কুরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যে নারী বা পুরুষ ঈমান এনে সৎকাজ করবে, আল্লাহ তাকে সুন্দর ও কল্যাণময় জীবন দান করবেন।
নারী ও পুরুষের পার্থক্য: বৈষম্য নয়
ইসলাম নারী ও পুরুষের মধ্যে স্বাভাবিক পার্থক্য স্বীকার করে। তবে এই পার্থক্য কোনো বৈষম্য নয়। নারী ও পুরুষের শারীরিক, মানসিক ও আবেগগত বৈশিষ্ট্য আলাদা—এ কারণে তাদের কিছু দায়িত্বও আলাদা। এই দায়িত্ব বণ্টন নারী বা পুরুষ কাউকে ছোট করে না; বরং পরিবার ও সমাজকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।
হযরত আলী (আ.) বলেছেন, নারী হলো কোমল ফুলের মতো— তার ওপর কঠোর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। এতে নারীর সম্মান ও সুরক্ষার বিষয়টিই তুলে ধরা হয়েছে।
মাতৃত্ব: নারীর গর্ব
ইসলামে মাতৃত্ব নারীর সবচেয়ে সম্মানজনক ভূমিকা। অথচ আধুনিক পাশ্চাত্য চিন্তাধারা অনেক সময় মাতৃত্বকে তুচ্ছ করে দেখে। ইসলাম এর বিপরীতে বলে—মানুষ গড়ার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব মায়ের। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, অনেক মহান মানুষ মায়ের স্নেহ, শিক্ষা ও ত্যাগের মধ্যেই বড় হয়েছেন।
শেষ কথা
শেষ পর্যন্ত কোন পথ বেছে নেওয়া হবে—সেই সিদ্ধান্ত নারীদেরই নিতে হবে। একটি পথ হলো মানবিক মর্যাদা, পরিবার ও ভারসাম্যের পথ, যা ইসলাম দেখায়।
আর অন্যটি হলো সেই পথ, যা পাশ্চাত্য সমাজ বহু আগে বেছে নিয়েছে এবং যার ফল আজ তারা নিজেরাই ভোগ করছে।
ইসলাম নারীর সামনে এমন একটি জীবনদর্শন তুলে ধরে, যেখানে সম্মান, দায়িত্ব, ভালোবাসা ও নিরাপত্তা একসঙ্গে বিদ্যমান।
আপনার কমেন্ট