মঙ্গলবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ - ০৫:৪৫
আল্লাহর রহমত আকর্ষণে ইস্তিগফারের ভূমিকা

ইস্তিগফার (আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা)-এর প্রভাব কেবল গুনাহ মাফের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি সেই সব প্রতিবন্ধকতাও দূর করে, যা মানুষের কাছে আল্লাহর নেয়ামত ও রহমত পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইস্তিগফারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব হলো আল্লাহর রহমত আকর্ষণ করা। নবী হযরত সালেহ (আ.) তাঁর জাতিকে আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তারা এর জবাবে বলেছিল—যদি সত্যিই শাস্তির প্রতিশ্রুতি সত্য হয়, তবে তা যেন দ্রুত নেমে আসে। তখন সালেহ (আ.) তাদের উদ্দেশে বলেছিলেন—  “হে আমার জাতি! তোমরা কেন কল্যাণের আগে অকল্যাণের দিকে তাড়াহুড়া করছ? তোমরা কি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে না, যাতে তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করেন?” (সুরা আন-নামল, আয়াত ৪৬)

অর্থাৎ, আল্লাহর শাস্তি ত্বরান্বিত করার দাবি জানানোর পরিবর্তে কেন তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাঁর অসীম রহমত লাভের পথ বেছে নিচ্ছে না—এ প্রশ্নই এখানে উত্থাপিত হয়েছে।

পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহে মানুষের আমল ও তার ফলাফল বোঝার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো আয়াতের শুরু ও শেষাংশের প্রতি গভীর দৃষ্টি দেওয়া। বহু আয়াতে দেখা যায়, যেখানে ইস্তিগফারের নির্দেশ দিয়ে আয়াত শুরু হয়েছে, সেখানে শেষাংশে শুধু গুনাহ মাফের কথাই নয়, বরং আল্লাহর রহমত ও দয়ার কথাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,  “তারপর তোমরা সেখান থেকেই অগ্রসর হও, যেখান থেকে অন্যরা অগ্রসর হয় এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সুরা আল-বাকারা, আয়াত ১৯৯)

অন্য আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে,  “তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সুরা আন-নিসা, আয়াত ১০৬)

ক্ষমা ও রহমতের মধ্যকার সম্পর্ক এখানে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। গুনাহ মানুষের ও আল্লাহর রহমতের মাঝখানে একটি পর্দা বা বাধা হিসেবে কাজ করে। যখন মানুষ ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিজের গুনাহ থেকে ফিরে আসে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন সেই পর্দা সরে যায় এবং আল্লাহর রহমত তার ওপর নাজিল হয়।

এই বাস্তবতাকে আরও সহজভাবে বোঝার জন্য বলা যায়—আল্লাহর রহমত, অনুগ্রহ ও রিজিক বান্দার দিকে আসার পথ যেন একটি প্রশস্ত করিডরের মতো। গুনাহ ও অবাধ্যতা সেই করিডর বন্ধ করে দেয়। ইস্তিগফার শুধু গুনাহ ক্ষমা করানোর মাধ্যমই নয়; বরং এটি সেই সব প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে, যা আল্লাহর বরকত ও রহমত মানুষের কাছে পৌঁছাতে বাধা দেয়।

এই প্রসঙ্গে মুমিনদের আমির হযরত আলী (আ.) দোয়া কুমাইলে বলেন,  “হে আল্লাহ! আমাকে সেই সব গুনাহ থেকে ক্ষমা করো, যা নেয়ামত পরিবর্তন করে দেয়।”

পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে দেখা যায়, ইস্তিগফারের পর মানুষ আল্লাহর বিশেষ রহমত ও করুণা লাভ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে অথবা নিজের ওপর জুলুম করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে—সে আল্লাহকে অবশ্যই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু পাবে।” (সুরা আন-নিসা, আয়াত ১১০)

আরেকটি আয়াতে মুমিনের ইস্তিগফার এবং রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষ থেকে ইস্তিগফারকে একত্রে আল্লাহর রহমত লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, “আমি কোনো রাসূল পাঠাইনি এ উদ্দেশ্য ছাড়া যে, আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর আনুগত্য করা হবে। তারা যখন নিজেদের ওপর জুলুম করে, তখন যদি তারা তোমার কাছে আসে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আর রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন—তবে তারা অবশ্যই আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু পাবে।” (সুরা আন-নিসা, আয়াত ৬৪)

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha