বুধবার ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৩:১৭
নির্দেশ বা সার্কুলারের মাধ্যমে নামাজের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা যায় না

ইরানের অন্যতম শীর্ষ আলেমে দ্বীন ও মারজায়ে তাকলীদ আয়াতুল্লাহিল উযমা নূরী হামাদানী শিক্ষা ও পরিবারকেন্দ্রিক সংস্কৃতিচর্চার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, নির্দেশ বা দাপ্তরিক আদেশের মাধ্যমে নামাজের সংস্কৃতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সঠিকভাবে সংস্কৃতিচর্চা করা হলে এবং এই ঐশী ফরজকে তার প্রকৃত বৈশিষ্ট্যসহ উপস্থাপন করা হলে, নিঃসন্দেহে এর নূরানিয়াত সমাজে কার্যকর হবে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আজ বুধবার ২৬ অযার ১৪০৪ হিজরি শামসি (১৭ ডিসেম্বর) তারিখে আয়োজিত দশম প্রাদেশিক নামাজ সম্মেলনে প্রেরিত আয়াতুল্লাহ নূরী হামাদানীর পূর্ণাঙ্গ বার্তাটি নিম্নরূপ—

 بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

সম্মানিত ও আধ্যাত্মিক এই সমাবেশের প্রতি আন্তরিক সালাম ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

নামাজ আল্লাহ তাআলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধানতম ফরজ ইবাদত, যার ওপর তিনি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। লক্ষণীয় বিষয় হলো, আল্লাহ তাআলা যখন নামাজ কায়েম করার নির্দেশ দেন, তখন কুরআনের বহু আয়াতে এর প্রভাব ও উপকারিতাও স্মরণ করিয়ে দেন।

এখানে ভেবে দেখার বিষয় হলো— এই গুরুত্বারোপের উদ্দেশ্য কী এবং নামাজের প্রভাব কীভাবে প্রকাশ পাবে? নিঃসন্দেহে এসব বৈশিষ্ট্য কেবল নামাজের বাহ্যিক শুদ্ধতার জন্য নয়; কারণ প্রত্যেকের ওপরই শুদ্ধভাবে নামাজ আদায় করা ফরজ।

গ্রহণযোগ্য নামাজ সেই নামাজ, যার প্রভাব মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে প্রতিফলিত হয়। অর্থাৎ নামাজ আদায়কারী যেন কুরআনের এই বাণীর বাস্তব ফল লাভ করে—

 إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ

“নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।”

এমন নামাজই মানুষের জন্য মেরাজস্বরূপ হয়। অন্যথায় তা কুরআনের এই সতর্কবার্তার অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে—

 فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ

“অতএব ধ্বংস তাদের জন্য, যারা নামাজ আদায় করে (কিন্তু তা যথাযথভাবে নয়)।”

মনে রাখতে হবে, সৌভাগ্য অর্জনের পথ এবং গুনাহ ও অবাধ্যতা থেকে নিরাপদ থাকার উপায় হলো সেই নামাজ, যা উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যসহ কায়েম করা হয়। আল্লাহর নৈকট্য লাভের সবচেয়ে নিকটবর্তী পথও এই নামাজই।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যে নামাজ কুরআন মাজিদের নির্দেশনা অনুযায়ী আমল এবং আহলে বাইত (আ.)-এর প্রতি ভালোবাসার সঙ্গে আদায় করা হয়, তা নামাজিকে আধ্যাত্মিক উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।

আজ এই ঐশী ফরজ আদায়ে মানুষকে উৎসাহিত করা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয়। তবে প্রকৃত সংস্কৃতিচর্চা শুরু হতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবার থেকে এবং নামাজের সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে—নির্দেশ বা সার্কুলারের মাধ্যমে নামাজের সংস্কৃতি সৃষ্টি হয় না। বরং সঠিক সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে, এই ফরজকে তার যথাযথ বৈশিষ্ট্যসহ তুলে ধরলে, এর নূরানিয়াত সমাজে নিশ্চিতভাবেই প্রভাব ফেলবে।

আমি এই পবিত্র দায়িত্বে নিয়োজিত সকল প্রিয়জনের—বিশেষ করে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন হুজ্জাতুল  কারাআতী সাহেবের সাফল্য কামনা করি, যিনি তাঁর সমগ্র জীবন এই ঐশী বিধান প্রচারে উৎসর্গ করেছেন। মহান আল্লাহর নিকট সকলের জন্য তাওফিক কামনা করছি।

হুসেইন নূরী হামাদানী,
কোম, ইরান!

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha