বুধবার ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৩:৪০
শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলার ময়দান এখন ভার্চুয়াল জগতে স্থানান্তরিত হয়েছে

ইরানের ধর্মীয় নগরী কোমের ঐতিহাসিক পবিত্র জামকারান মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ আলী আকবর এজাকনেজাদ নতুন প্রজন্মের কাছে ধর্মীয় জ্ঞান পৌঁছে দেওয়ার পদ্ধতি যুগোপযোগী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, আজ সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক সংগ্রামের ময়দান ঐতিহ্যবাহী ক্ষেত্র থেকে মোবাইল ফোন ও ভার্চুয়াল জগতে স্থানান্তরিত হয়েছে। তরুণদের ভাষা ও মানসিকতা না বুঝলে তাদের কাছে বিশ্বাস ও ধর্মীয় বার্তা কার্যকরভাবে পৌঁছানো সম্ভব নয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: পবিত্র জামকারান মসজিদ প্রাঙ্গণে গবেষণা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, বিশিষ্ট আলেম ও চিন্তাবিদদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই সভা ছিল অত্যন্ত ফলপ্রসূ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ ধরনের বৈঠক ভবিষ্যতেও ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি মাহদাভিয়াত বিষয়ক বিশেষায়িত সচিবালয় গঠনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, সচিবালয় প্রতিষ্ঠা ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এ ক্ষেত্রে পবিত্র জামকারান মসজিদ সংশ্লিষ্ট  ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন এজাকনেজাদ বলেন, বর্তমানে আমরা একটি সুসংগঠিত ও পরিকল্পিত শত্রুতার মুখোমুখি। একসময় লড়াই সীমাবদ্ধ ছিল তলোয়ার ধার করার মধ্যেই; কিন্তু আজ লড়াইয়ের উপকরণ আমাদের পকেটেই রয়েছে। শত্রু মোবাইল ফোন ও ভার্চুয়াল মাধ্যম ব্যবহার করে সরাসরি ঘরের ভেতরে প্রবেশ করছে—এ এক বাস্তবতা, যা আমরা সবাই প্রত্যক্ষ করছি।

তিনি সমসাময়িক জীবনব্যবস্থা থেকে উদাহরণ দিয়ে বলেন, অনেক সময় দেখা যায় সন্তান শারীরিকভাবে নিজের ঘরে অবস্থান করলেও চিন্তা ও গণমাধ্যমের দিক থেকে সে পৃথিবীর অন্য প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই বাস্তবতা প্রমাণ করে যে, কেবল প্রচলিত ও ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে আজ আর কার্যকরভাবে জবাব দেওয়া সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, শ্রোতার কথা বিবেচনা না করে শুধু মোটা বই লিখে শত্রুর সাংস্কৃতিক আক্রমণের মোকাবিলা করা যাবে না। কারণ শত্রু ক্লান্ত হয় না, বিপুল অর্থ ব্যয় করে এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে চলে।

২৩ খোরদাদের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শত্রুর লক্ষ্য ছিল জনগণের আশা ও আস্থাকে দুর্বল করা—যে আশা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এবং ইসলামী বিপ্লবের পতাকা ইমাম মাহদী (আ.)-এর পবিত্র হাতে অর্পণের বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তবে শত্রু এই লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি সমাজের প্রয়োজন নিরূপণ ও ধর্মীয় জ্ঞান উপস্থাপনের সঠিক কৌশলের ওপর জোর দিয়ে বলেন, যদিও সমাজের বহু চাহিদা ইতোমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে এবং যুক্তিনির্ভর উত্তরও বিদ্যমান, তবুও মূল চ্যালেঞ্জ হলো—এই উত্তরগুলো কীভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।

পবিত্র জামকারান মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ধর্মীয় বার্তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তাদের নিয়ে পরামর্শমূলক কাউন্সিল গঠন করে জানতে হবে—কোন ভাষা, মাধ্যম ও পদ্ধতিতে বার্তা উপস্থাপন করলে তা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে; কারণ আধুনিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো মূলত তাদের উপযোগী করেই নির্মিত।

তিনি তরুণদের জন্য ধর্মীয় জ্ঞানভিত্তিক ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রদর্শনী আয়োজনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এসব উদ্যোগ প্রমাণ করেছে—বার্তা যখন শ্রোতার ভাষায় ও উপযোগী পদ্ধতিতে উপস্থাপন করা হয়, তখন তার প্রভাব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।

উপসংহারে তিনি বলেন, যদি আমরা চাই ধর্মীয় ও মাহদীবাদী শিক্ষা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে কার্যকরভাবে পৌঁছাক, তবে আমাদের অবশ্যই পদ্ধতিগুলো হালনাগাদ করতে হবে এবং এই পথে তরুণদের সামর্থ্য ও অংশগ্রহণকে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাতে হবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha