হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আহলে সুন্নাতের কিছু বর্ণনায় প্রথম দুই খলিফার অবস্থানকে নবীদের দৃষ্টান্তের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গটি বোঝার জন্য আমাদের ফিরে যেতে হয় বদরের যুদ্ধ-পরবর্তী বন্দিদের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)–এর সঙ্গে সাহাবিদের আলোচনার ঘটনায়।
নবী করিম (সা.) সব বিষয়ই গভীর দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে বিবেচনা করতেন। তিনি জানতেন, ভবিষ্যতে এই বিষয় নিয়ে নানা প্রশ্ন ও দাবি উঠবে। ঠিক সেই প্রেক্ষাপটেই তিনি কিছু উপমামূলক কথা বলেছেন, যা পরবর্তীতে হাদিসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।
মুসনাদে আহমাদ (ষষ্ঠ খণ্ড)-এ বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “হে আবু বকর, তোমার দৃষ্টান্ত ইবরাহিম (আ.)–এর দৃষ্টান্তের মতো।
হে আবু বকর, তোমার দৃষ্টান্ত ঈসা (আ.)–এর দৃষ্টান্তের মতো।”
অর্থাৎ আবু বকর–এর অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গিকে হযরত ইবরাহিম (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)–এর কাহিনির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই কথা কি এমনিই বলা হয়েছিল, নাকি এর পেছনে নির্দিষ্ট কোনো প্রেক্ষাপট ছিল?
এর উত্তর আমরা পাই বদরের বন্দিদের প্রসঙ্গে।
বদরের যুদ্ধের পর রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন: “এই বন্দিদের ব্যাপারে তোমাদের মতামত কী?”
তিনি আবার বলেন: “হে লোকসকল, বদরের এই বন্দিদের বিষয়ে তোমরা কী মত পোষণ করো?”
এই প্রশ্নের জবাবে বিভিন্ন সাহাবি ভিন্ন ভিন্ন মতামত প্রদান করেন।
আবু বকর বলেন: “হে আল্লাহর রাসূল, এরা আপনারই জাতি, আপনারই আত্মীয়স্বজন। তাদের প্রতি দয়া করুন, নম্রতা প্রদর্শন করুন।”
উমর (রা.) বলেন: “হে আল্লাহর রাসূল, এরা আপনাকে মদিনা থেকে বের করে দিয়েছে, আপনাকে অস্বীকার করেছে। তাদের সবাইকে একত্র করে একে একে হত্যা করা হোক।”
আর আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা বলেন: “হে আল্লাহর রাসূল, একটি উপত্যকা আগুনে ভরে তাদের সেখানে নিক্ষেপ করা হোক এবং আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হোক।”
সংক্ষেপে বলা যায়—আবু বকর দয়ার পক্ষে মত দেন, আর উমর কঠোর শাস্তির পক্ষে মত দেন।
এই পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: “হে আবু বকর, তোমার দৃষ্টান্ত হযরত ইবরাহিম (আ.)–এর মতো।”
কারণ হযরত ইবরাহিম (আ.)–কে চরম নির্যাতন করা হয়েছিল, এমনকি আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তবুও তিনি তাঁর জাতির জন্য অভিশাপ দেননি।
তিনি আরও বলেন, আবু বকর–এর দৃষ্টান্ত হযরত ঈসা (আ.)–এর মতোও বটে। কারণ হযরত ঈসা (আ.) কঠোর নির্যাতনের মুখেও বলেছিলেন: “যদি তুমি তাদের শাস্তি দাও, তারা তো তোমারই বান্দা;
আর যদি তুমি তাদের ক্ষমা করো, তবে নিশ্চয়ই তুমি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।”
এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) উমর–এর প্রসঙ্গে বলেন: “হে উমর, তোমার দৃষ্টান্ত হযরত নূহ (আ.)–এর দৃষ্টান্তের মতো।”
কারণ হযরত নূহ (আ.) দোয়া করেছিলেন: “হে আমার প্রতিপালক, পৃথিবীতে কোনো কাফিরকেই অবশিষ্ট রেখো না।”
এবং উমর–এর দৃষ্টান্ত হযরত মূসা (আ.)–এর সঙ্গেও তুলনীয় বলে উল্লেখ করা হয়। হযরত মূসা (আ.) ফেরাউনের সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেছিলেন: “হে আল্লাহ, তাদের হৃদয় কঠোর করে দাও এবং তাদের ধ্বংস করো,
যেন তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেখা পর্যন্ত ঈমান না আনে।”
এই পুরো বক্তব্য ছিল একটি উপমামূলক ব্যাখ্যা, যা একটি নির্দিষ্ট ঘটনার—অর্থাৎ বদরের বন্দিদের প্রসঙ্গে—বলা হয়েছিল। এটি নবী-নবুওয়াতের মর্যাদার সঙ্গে সরাসরি তুলনা নয়, বরং দয়া ও কঠোরতার দুই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে বোঝানোর জন্য প্রদত্ত একটি ব্যাখ্যা।
এখানেই বিষয়টির মূল আলোচনা সম্পন্ন হয়। তবে গবেষণার ক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য—কিছু গবেষক এই বর্ণনার সনদ সম্পর্কে বলেন যে, এর সনদ দুর্বল। হ্যাঁ, এই মতটিও হাদিস বিশারদদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত হয়েছে।
সুতরাং এই বর্ণনাকে বুঝতে হলে তার প্রেক্ষাপট, উপমামূলক ভাষা এবং সনদগত মূল্যায়ন—সবকিছু একসঙ্গে বিবেচনায় নেওয়াই সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতি।
রিপোর্ট: হাসান রেজা
আপনার কমেন্ট