হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালক আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আরাফি কুর্দিস্তানের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাতে এই প্রদেশের কৌশলগত গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, শিয়া ও সুন্নিদের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং জাতিগোষ্ঠীগুলোর সহাবস্থান ইরান ও ইসলামী বিপ্লবের সম্মান, শক্তি ও অগ্রগতির অন্যতম মূল চাবিকাঠি। তিনি বলেন, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ইরানের উজ্জ্বলতা নির্ভর করে একক ইরানি–ইসলামী পরিচয়কে শক্তিশালী করা এবং বিভিন্ন মাজহাব ও জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতা গভীর করার ওপর।
তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চার দশকেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি সবসময় জোর দিয়ে বলেছি—ইরানের অগ্রগতি এবং বিশ্বে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ভাবমূর্তি উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো দেশে জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম ও মাজহাবগুলোর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বাস্তব চিত্র উপস্থাপন করা। এই বিষয়টি যেমন আমাদের অভ্যন্তরীণ সংহতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ইরান ও সমগ্র ইসলামি বিশ্বের আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতার জন্যও মৌলিক গুরুত্ব বহন করে।
হাওজা পরিচালক বলেন, ইরান হাজার হাজার বছর ধরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও মাজহাবের আবাসভূমি হিসেবে পরিচিত, এবং আজও গর্বের সঙ্গে বিশ্বকে দেখাতে হবে যে শিয়া ও সুন্নি একে অপরের মুখোমুখি অবস্থানে নয়; বরং তারা বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও পারস্পরিক শক্তি বৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি যেমন ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর চিন্তাধারা ছিল, তেমনি এটি ইসলামী বিপ্লবের মৌলিক নীতিসমূহের অন্তর্ভুক্ত।
তিনি বলেন, ইরানি ও মুসলমানরা একটি অভিন্ন পরিচয়ের অধিকারী। যদিও ধর্মতাত্ত্বিক ও ফিকহি আলোচনা তাদের নিজ নিজ স্থানে সংরক্ষিত, তবে জাতীয় ও ইসলামী অভিন্ন পরিচয়কেই নীতি নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। কুর্দিস্তানসহ কয়েকটি প্রদেশে এই নীতির বিশেষ ও কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে, এবং এই প্রদেশটি একক ইরানি–ইসলামী পরিচয়ের বাস্তব প্রতিফলনের অগ্রভাগে থাকতে পারে।
হাওজার উচ্চ পরিষদের সদস্য বলেন, কুর্দিস্তানের প্রশাসন কেবল একটি প্রদেশের প্রশাসন নয়; বরং এটি সমগ্র ইরান এমনকি ইসলামি বিশ্বের জন্য একটি আদর্শ। এই প্রদেশে গৃহীত প্রতিটি কঠিন (হার্ডওয়্যার) ও নরম (সফটওয়্যার) পদক্ষেপের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিফলন রয়েছে এবং এটি সহাবস্থান, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির একটি সফল মডেল তুলে ধরতে পারে। বিপরীতে, এই ক্ষেত্রে যে কোনো দুর্বলতা বা ঘাটতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অপব্যবহারের শিকার হতে পারে।
তিনি বিভিন্ন দেশে সফর এবং বিভিন্ন ধর্ম ও মাজহাবের সঙ্গে যোগাযোগের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই বছরগুলোতে বহুবার দেখেছি যে শিয়া ও আহলে সুন্নাতের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঐক্যবদ্ধ ও পারস্পরিক সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি অন্যান্য দেশের চিন্তাবিদ ও দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই বিস্তৃত ঐক্যবদ্ধ যুক্তি বিদ্যমান এবং একে আরও শক্তিশালী ও পরিচিত করে তুলতে হবে।
কুর্দিস্তান প্রদেশের সীমান্তবর্তী অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সক্ষমতা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলো—বিশেষ করে কুর্দিস্তান—আঞ্চলিক পর্যায়ে বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ভূমিকা পালনের উচ্চ সক্ষমতা রাখে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আন্তরিকভাবে আন্তর্জাতিকীকরণের দিকে অগ্রসর হতে হবে এবং আঞ্চলিক দেশ ও ইসলামি বিশ্ব থেকে শিক্ষার্থী আকর্ষণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিকীকরণ সংক্রান্ত উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়নে দুর্বলতার সমালোচনা করে বলেন, পঞ্চম ও ষষ্ঠ উন্নয়ন পরিকল্পনা থেকে এখন পর্যন্ত এই ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। সপ্তম পরিকল্পনায় যদিও এই বিষয়ে একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তবুও আরও দৃঢ় সংকল্প ও কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে। কুর্দিস্তান প্রদেশ গুণগত ও লক্ষ্যভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে এই ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।
আয়াতুল্লাহ আরাফি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বিশেষ মনোযোগ, গভীর পরিকল্পনা এবং দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। বিদ্যালয়ের স্থাপত্য, পাঠ্যবিষয়বস্তু, দক্ষতা উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ প্রশিক্ষণ (গঠন) ইরানি–ইসলামী মডেলের ভিত্তিতে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। এই ক্ষেত্রটিই দেশের টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি।
আপনার কমেন্ট