হাওজা নিউজ এজেন্সি: হাওজায়ে ইলমিয়ার শিক্ষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মুহাম্মদ সায়িদ জাওয়াহেরী, সারি শহরে হাওজা নিউজের প্রতিনিধির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ১৩ই রজব—আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর মহান ব্যক্তিত্বের কিছু উজ্জ্বল দিক তুলে ধরেন।
হযরত আলী (আ.)—ঐশী শক্তি ও সাহসের মূর্ত প্রতীক
তিনি বলেন, “আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) ছিলেন আল্লাহপ্রদত্ত শক্তি ও জ্ঞানের প্রতিচ্ছবি। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি আল্লাহর হাত।’ এ কারণেই তাঁর পবিত্র সত্তায় কখনো দুর্বলতা, ভয় কিংবা দ্বিধার স্থান হয়নি।”
তিনি উল্লেখ করেন, “ইসলামি দার্শনিক ও ইতিহাসবিদ ইবনে মিসকাওয়াইহ বলেছেন, ‘আলী কেবল সাহসী ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন সাহসের বাস্তব রূপ।’ এই সাহসের বাস্তব উদাহরণ আমরা বিভিন্ন যুদ্ধে এবং বিশেষভাবে লাইলাতুল মাবিত—রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিছানায় আলীর (আ.) আত্মত্যাগী রজনীতে—দেখতে পাই।”
একাকী হলেও সত্যের পথে অবিচল
হুজ্জাতুল ইসলাম জাওয়াহেরী বলেন, “আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.) নিজেই ঘোষণা করেছেন, ‘যদি সমগ্র পৃথিবী শত্রুতে পূর্ণ হয়ে যায় এবং আমি একাই থাকি, তবুও আমি একাই তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াব এবং বিন্দুমাত্র ভয় অনুভব করব না।’”
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “হযরত আলী (আ.) কেবল শক্তি ও সাহসের প্রতীক নন; তিনি ছিলেন জ্ঞান, ধৈর্য, সহনশীলতা, দয়া, ক্ষমাশীলতা এবং আল্লাহর পরিপূর্ণ গুণাবলির জীবন্ত দৃষ্টান্ত।”
তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস উদ্ধৃত করেন, ‘আমরাই আল্লাহর প্রমাণ, আমরাই আল্লাহর দরজা, আমরাই আল্লাহর ভাষা, আমরাই আল্লাহর মুখমণ্ডল এবং সৃষ্টিজগতে আমরাই আল্লাহর দৃষ্টি।’
আলী (আ.)—সত্যের মানদণ্ড ও দিকনির্দেশক
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন জাওয়াহেরী বলেন, “হযরত আলী (আ.)-এর কাছে সত্য ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ের গুরুত্ব ছিল না।”
তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর একটি প্রসিদ্ধ হাদিস উল্লেখ করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আলী সত্যের সঙ্গে এবং সত্য আলীর সঙ্গে; সত্য যেদিকেই আবর্তিত হয়, আলীও সেদিকেই অবস্থান করেন।’
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “এই হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে সত্য আলী (আ.)-কে কেন্দ্র করেই ঘোরে; সত্যের নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশ তাঁর হাতেই ন্যস্ত।”
আহলে সুন্নাত মনীষীদের অকপট স্বীকারোক্তি
তিনি আহলে সুন্নাত চিন্তাবিদদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, “শাইখ মুহাম্মদ আব্দুহ নাহজুল বালাগার ব্যাখ্যায় লিখেছেন, ‘আরব সমাজে এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যে হযরত আলী (আ.)-এর মহত্ত্ব স্বীকার করেনি।’”
তিনি আরও বলেন, “ইবনে আবিল হাদীদ মুতাজিলি হযরত আলী (আ.)-কে মর্যাদা ও বীরত্বের চূড়ান্ত শিখরে অবস্থানকারী বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন—তাঁর নাম অতীত ও ভবিষ্যতের সকল বীরের নামকে আড়াল করে দিয়েছে।”
শ্রেষ্ঠত্বই হিংসার কারণ হয়েছিল
হুজ্জাতুল ইসলাম জাওয়াহেরী একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, “প্রখ্যাত ব্যাকরণবিদ ইউনুস ইবনে হাবিব, ভাষাবিদ খলিল ইবনে আহমদকে প্রশ্ন করেছিলেন ‘কেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিদের মাঝে হযরত আলী (আ.) যেন আপন হয়েও উপেক্ষিত ছিলেন?’”
তিনি বলেন, “খলিল ইবনে আহমদ উত্তরে বলেছিলেন, ‘কারণ আলী (আ.) সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং জ্ঞান, মর্যাদা, সংযম, আত্মত্যাগ ও জিহাদে সকলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলেন। আর এই শ্রেষ্ঠত্বই অনেকের অন্তরে হিংসার জন্ম দেয়।’”
আলভী আদর্শ—আজকের সংকট থেকে উত্তরণের পথ
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন জাওয়াহেরী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর একটি হাদিস পাঠ করে বলেন, “আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি আমাদেরকে আলভী চরিত্র ও বেলায়াতের সংস্কৃতি সঠিকভাবে অনুধাবন করার এবং বাস্তব জীবনে তা অনুসরণ করার তাওফিক দান করেন।”
তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, “আজকের এই সময়ে, যখন আমাদের ইসলামি বিপ্লব ও ইসলামি সমাজ সর্বাত্মক শত্রুতার মুখোমুখি, তখন আলভী আদর্শকে জানা ও সেই পথে চলাই সকল সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আলভী চিন্তাধারা ও আদর্শের পথে অগ্রসর হওয়াই উম্মাহর সমস্যার সমাধান এবং শত্রুর ওপর বিজয় অর্জনের মূল চাবিকাঠি।”
আপনার কমেন্ট