হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হাওযার শিক্ষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুহাম্মদ হুসাইন নূরী সারিতে হাওযা নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদকের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইমাম জাওয়াদুল আইম্মা (আ.)-এর জন্মবার্ষিকীর এই পুণ্যময় উপলক্ষ্যে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন: সেই মহান ইমামের কর্মজীবন ও বাণীকে অনুসরণ করা আজকের সমাজের বহু সমস্যা—বিশেষ করে হাওজা শিক্ষাঙ্গনের চ্যালেঞ্জ—সমাধানের জন্য আলোকবর্তিকা স্বরূপ।
এই সাক্ষাৎকারে তিনি ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর বরকতময় জীবনের আলোকে এবং বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে তিনটি মৌলিক ও চিন্তাযোগ্য দিক তুলে ধরেন।
প্রথম শিক্ষা: জ্ঞানের ভিত্তিতে নেতৃত্ব—বয়সের ভিত্তিতে নয়
প্রথম শিক্ষাটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন: ইতিহাস থেকে সুপ্রমাণিত যে, ইমাম জাওয়াদ (আ.) শৈশবকালেই ইমামতের দায়িত্ব লাভ করেন। এ কারণেই অনেকেই তাঁর অল্প বয়সের কারণে এই মর্যাদা গ্রহণ করতে দ্বিধা করেছিল এবং তাঁকে কঠিন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মুখোমুখি করেছিল। শেষ পর্যন্ত সেসব পরীক্ষাই তাঁর অতুলনীয় জ্ঞান ও শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিতে পরিণত হয়।
তিনি আরও বলেন: এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে বর্তমান যুগের জন্য একটি স্পষ্ট উপমা হিসেবে নেওয়া যায়। আমাদের সময়েও এমন হতে পারে যে, কোনো যুবক গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারী। কেবল বক্তার কম বয়সের অজুহাতে কোনো বৈজ্ঞানিক মতামত প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়—এই বলে যে, “আরও বড় হলে তোমার কথা মানতাম।” আল্লাহর অনুগ্রহে অনেক সময় কোনো যুবকের মধ্যেই নতুন ও গভীর উপলব্ধি সৃষ্টি হতে পারে। আমি নিজে এমন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি যে, কোনো শিক্ষক আমার চেয়ে কম বয়সী ছিলেন, আর কোনো ছাত্র আমার চেয়ে বেশি বয়সী। অতএব মানদণ্ড হওয়া উচিত জ্ঞান ও যুক্তি—জীবনের বছরসংখ্যা নয়।
দ্বিতীয় শিক্ষা: সংলাপ ও বৈজ্ঞানিক বিতর্কের সংস্কৃতি প্রসারের প্রয়োজন
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন নূরী তাঁর বক্তব্যের আরেক অংশে বলেন: ইমাম জাওয়াদ (আ.) তাঁর সময়ের ইয়াহইয়া ইবনে আকসামসহ বিভিন্ন মত ও ধারার চিন্তাবিদদের সঙ্গে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন এবং সুদৃঢ় যুক্তির মাধ্যমে আহলে বাইত (আ.)-এর মক্তবের সত্যতা প্রমাণ করেছিলেন।
তিনি হাওজার বৈজ্ঞানিক পরিবেশে এই উত্তম সুন্নাহ পুনর্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন: হাওজাগুলোতে বৈজ্ঞানিক বিতর্ক আরও সক্রিয় ও গুরুত্বসহকারে পরিচালিত হওয়া উচিত। কেবল ভিন্ন বা নতুন কোনো মত প্রকাশের কারণে কাউকে প্রান্তিক করে দেওয়া উচিত নয়। যদি নতুন কোনো তত্ত্ব উপস্থাপিত হয়, তবে সর্বোত্তম পথ হলো শান্ত ও ন্যায়সঙ্গত পরিবেশে তার বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা ও গভীর বিশ্লেষণ। এই পদ্ধতি যেকোনো অ-বৈজ্ঞানিক বা দমনমূলক আচরণের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর ও যুক্তিসঙ্গত। কারণ কখনো কখনো কোনো চিন্তাকে দমন করা ভুলভাবে এমন ধারণা সৃষ্টি করে যে, তার জবাব দেওয়ার সক্ষমতা নেই। এ কারণেই মাননীয় সর্বোচ্চ নেতার (মুদ্দাযিল্লুহুল আলি) নির্দেশে মুক্ত চিন্তাচর্চার মঞ্চ (করসি-ই আজাদান্দিশি) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে—যা এই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য বাস্তবায়নেরই অংশ।
তৃতীয় শিক্ষা: কৃতজ্ঞতা—নিয়ামত বৃদ্ধির চাবিকাঠি
হাওজার এই শিক্ষক তৃতীয় শিক্ষাটি তুহাফুল উকূল গ্রন্থে বর্ণিত ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর একটি হাদিসের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করে বলেন: ইমাম (আ.) বলেন—
“আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামতের বৃদ্ধি বন্ধ হয় না, যতক্ষণ না বান্দার পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা বন্ধ হয়।”
যতদিন বান্দা কৃতজ্ঞ থাকে, আল্লাহ তার নিয়ামত বৃদ্ধি করেন; আর যখন কৃতজ্ঞতা বন্ধ হয়ে যায়, তখন নিয়ামতের বৃদ্ধি-ও থেমে যায়।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুহাম্মদ হুসাইন নূরী আরও বলেন: এই আলোকোজ্জ্বল বর্ণনার ব্যবহারিক শিক্ষা আমাদের—তালিবুল ইলম, আলেম ও সাধারণ সমাজের জন্য—হলো এই যে, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের সময় হতাশ না হয়ে কেবল অভাবের দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত নয়। নিঃসন্দেহে সম্মানিত দায়িত্বশীলদের উচিত সর্বশক্তি দিয়ে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও সমস্যার সমাধানে কাজ করা, এবং আমরা আশা করি নতুন সরকারের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পাব।
তিনি জোর দিয়ে বলেন: তবে একজন তালিবুল ইলম ও একজন মুমিন হিসেবে ন্যায়পরায়ণ হওয়াও জরুরি। হ্যাঁ, তালিবুল ইলম ও বহু মানুষ অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছেন; কিন্তু এই কঠিন সময়ে—যেমন করোনা মহামারির সময়—অনেক পেশাজীবী আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন এবং জীবিকা নির্বাহে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছিলেন। সেই তুলনায় তালিবুল ইলমদের ভাতা (শাহরিয়া), যদিও অল্প, তবু তুলনামূলকভাবে ধারাবাহিক ছিল। এটিও একটি নিয়ামত, যা কৃতজ্ঞতার দাবি রাখে। এই বাস্তববাদী ও কৃতজ্ঞ দৃষ্টিভঙ্গিই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আরও অনুগ্রহ ও কল্যাণের পথ উন্মুক্ত করে।
আপনার কমেন্ট