হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ৪- আহলেবায়েত (আঃ)-এর শোকে কাতর হয়ে কালো পোশাক পরিধান করা :
কালো পোশাক পরার কয়েকটি উদাহরণ আগেও উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে আরও কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করা হচ্ছে যাতে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, দুঃখ ও শোকের অবস্থায় কালো পোশাক পরা রাসূল (সাঃ)-এর পরিবারে এক ঐতিহ্য ও সুন্নত।
হযরত আমিরুল মুমিনীন ইমাম আলি (আঃ)-এর শাহাদাতের উপলক্ষে ইমাম হাসান (আঃ)-এর কালো পোশাক পরা :
পবিত্র রমযান মাসে ৪০ হিজরীতে ইমাম আলি (আঃ) শহীদ হন। ইমাম হাসান (আঃ) তাঁর পিতার দুঃখে মানুষের মাঝে খুতবা দিলেন। ইমাম হাসান (আঃ) তখন কালো পোশাক পরেছিলেন।
যখন ইমাম আলি (আঃ) শহীদ হন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস লোকদেরকে বলেন : ইমাম আলি (আঃ) শহীদ হয়েছেন এবং নিজের উত্তরসূরি নিয়োগ করেছেন। তোমরা যদি চাও তিনি লোকসম্মুখে আসবেন, অন্যথায় কারও উপর কোন জবরদস্তি নেই। এ কথা শুনে লোকেরা কাঁদতে লাগলো এবং বলল, হ্যাঁ, মাওলার উত্তরসূরি লোকসম্মুখে আসুক। সুতরাং ইমাম হাসান (আঃ) মানুষের মাঝে এসে খুতবা দিলেন।
কালো পোশাক পরেই ইমাম হাসান (আঃ) লোকদের মাঝে খুতবা দেন।
যাহাবী এই রেওয়ায়েতকে আবু রাজিন থেকে দুটি স্থানে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন :
ইমাম হাসান (আঃ) কালো পোশাক পরেছিলেন এবং মাথায় কালো পাগড়িও পরেন।
ইমাম হাসান (আঃ)-এর শাহাদাতের দিন কালো পোশাক পরা :
আহলে সুন্নতের মহান দুজন আলেম (তারিখে দামেস্কে ইবনে আসাকির এবং হাকিম মুস্তাদরাক গ্রন্থে ) আয়েশা যিনি সা'দ এর কন্যা ছিলেন বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম হাসান (আ:) হলো,
তুমি কালো জুতা পরেছো? তুমি কি জানো না যে, কালো রঙ চোখের দৃষ্টি এবং যৌন শক্তি হ্রাস করে এবং দুঃখ ও শোকের কারণ হয়? অন্যদিকে হলুদ রঙ ঐ তিনটি জিনিসকেই শক্তিশালী করে।
ইমাম হোসায়েন (আ:)-এর শাহাদাতের উপলক্ষে বনী হাশিমের মহিলারা এক বছরের জন্য অলংকার পরিত্যাগ করেছিলেন এবং এক বছর কালো পোশাক পরেছিলেন। আর এক মাসের জন্য শোক প্রকাশ করেছিলেন।
ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর শাহাদাত উপলক্ষে কালো পোশাক পরা :
আহলেবায়েত (আঃ)-এর পরিবারে ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর শোকে কালো পোশাক পরা, এটা ইসলামী ইতিহাসে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রাখে। ঐতিহাসিক এবং জীবনীকাররা নিম্নলিখিত কথা উল্লেখ করেছেন :
দামেস্কে ইমাম সাজ্জাদ (আঃ) এবং মহিলাদের কালো পোশাক পরা :
দামেস্কের মসজিদে ইমাম সাজ্জাদ (আঃ)-এর ঐতিহাসিক খুতবা শেষ হলে, মিনহাল জিজ্ঞাসা করলেন, "হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান! আপনি কেমন আছেন?
প্রত্যুত্তরে ইমাম বললেন :
যে ব্যক্তির পিতা শহীদ হয়েছেন, যাঁর সাহায্যকারী কম, যাঁর পরিবার সশ্রম কারাবন্দী ও বেপর্দা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন এবং অভিভাবক হীন আছেন তুমি তাঁদের সম্পর্কে কি জিজ্ঞাসা করছো? সুতরাং তুমি আমাকে বন্দী অবস্থায় দেখতে পাচ্ছো। আমার পরিবার ও আমি শোকের পোশাক পরে আছি এবং নতুন পোশাক পরা আমাদের কাজ নয়।
বিহারুল আনওয়ার খন্ড ৪ পৃষ্ঠা ১৯..
রেওয়ায়েতে 'উসি' শব্দ ব্যবহার হয়েছে অভিধানে ওই শব্দের অর্থ হল কোন কিছুর জন্য দুঃখ প্রকাশ করা। অতএব, রেওয়ায়েতে 'সেয়াবুল উসি'র অর্থ দুঃখ ও শোকের পোশাক হবে। যেভাবে এটি ঐ হাদাদ বা কালো পোশাক যা দুঃখ প্রকাশের সময় পরা হয়। সুতরাং উক্তো রেওয়ায়েত থেকে প্রমাণ হয় যে, ইমাম সাজ্জাদ (আঃ) এবং আহলেবায়েত (আঃ) সিরিয়ায় কালো পোশাক পরিধান করেছিলেন।
সকাল হলে অভিশপ্ত ইয়াজিদ আহলেবায়েত (আঃ)-দের ডেকে বলল, আপনারা কি এখানে থাকতে চান নাকি মদীনায় ফিরে যেতে চান? আমি আপনাদেকে মূল্যবান জিনিস পাত্র উপহারও দেব। তাঁরা বলেন, আগে আমরা ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর উপরে শোক ও মাতম করতে চাই। ইয়াজিদ বলল, আপনারা যা ইচ্ছা তাই করুন।
তারপর দামেস্কের কয়েকটি কক্ষ খালি করে তাঁরা শোক পালন করতে থাকেন এমনকি একজন হাশমি মহিলা অবশিষ্ট ছিলেন না যিঁনি ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর দুঃখে কালো পোশাক পরেন নি। তাঁরা সেখানে সাত দিন শোক পালন করেন।
শেখ আব্দুল্লাহ নূরী, মির্জা হোসায়েন (মৃত্যু ১৩২০) মুস্তাদরাকুল ওয়াসায়েল।...চলবে...
লেখা: হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা মাসুম আলী গাজী (নাজাফ ইরাক)
আপনার কমেন্ট