সোমবার ১০ জানুয়ারী ২০২২ - ০৮:০০
ফাতেমা যাহরা (সা. আ.)

হাওজা / রাসূল (সা.)-র ওফাতের পর আহলে বাইতের উপর অত্যাচার নির্যাতনের সূত্রপাত ঘটে কয়েকজন ক্ষমতালোভী ব্যক্তি কর্তৃক ওহী গৃহে আক্রমণের মাধ্যমে।

লেখা: আবুল কাসিম

পর্ব ৩- কানজুল 'উম্মাল্-এ বলা হয়েছে--

হযরত ওমর বলেন- “যদিও জানি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তোমার মতো আর কাউকেই ভালোবাসতেন না, কিন্তু এ সত্য কখনো আমাকে আমার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারবে না, আর তা হচ্ছে এই যে, এই কয়েক ব্যক্তি যদি তোমার গৃহে জমায়েত করে তাহলে তোমাকেসহ এ ঘরে আগুন দেয়ার জন্যে নির্দেশ দেব।” ¹⁴

আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর যখন বনি হাশেমের সাথে যুদ্ধ করছিলেন এবং তাঁদেরকে একটি গিরিবর্ত অবরুদ্ধ করে ফেলেন তখন তিনি তাঁদেরকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলার জন্যে লাকড়ি আনার জন্যে আদেশ দেন। তাঁর ভাই' ‘উরওয়াহ্ ইবনে যুবাইর-এর এরূপ আদেশ দানের পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে বলেন – “আমার ভাই হুমকি প্রদান ও তাদেরকে ভয় দেখানোর জন্যে এ আদেশ দিয়েছিলেন, ঠিক যেরূপ অতীতেও এরূপ কাজ হয়েছে এবং বনি হাশেম বাই'আত না হলে তাঁদেরকে পুড়িয়ে ফেলার জন্যে লাকড়ি আনা হয়েছিল।" ¹⁵

ত্বাবারী তার তারিখে লিখেছেন--

ওমর বিন্ খাত্তাব আলীর গৃহে এলেন। তখন তালহা ও যুবাইর ছাড়াও মুহাজিরদের মধ্যকার আরো কয়েক ব্যক্তি সে গৃহে ছিলেন। যুবাইর নাঙ্গা তলোয়ার হাতে নিয়ে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন এবং ওমরের ওপর হামলা করেন। এ সময় তাঁর পা পিছলে যায়, ফলে তাঁর হাত থেকে তলোয়ার পড়ে যায়। তখন ওমরের সঙ্গীরা তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন ও তাঁকে আটক করে ফেলেন। তারপর তাঁরা আলীকে বন্দি করেন এবং আবু বকরের সামনে নিয়ে আসেন। তাঁকে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলছিলেন- “হে লোক সকল! আমি আল্লাহর বান্দা এবং রাসূলের ভ্রাতা।” কিন্তু সরকার পক্ষের লোকেরা তাঁর কথায় কান দেননি। ¹⁶

ইবনে আবিল্ হাদীদ তাঁর “শারহে নাহজুল বালাগ্বাহ্” গ্রন্থে আবুবকর জাওহারী থেকে রেওয়ায়েত করেন-

ঐ দুই ব্যক্তির (আলী ও যুবাইর) সাথে যে আচরণ করা হল হযরত ফাতেমা তা দেখলেন এবং স্বীয় হুজরায় দাঁড়িয়ে বললেন- “হে আবুবকর! কত তাড়াতাড়ি রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর আহ্‌লে বাইতের সাথে প্রতারণা করলে! আল্লাহর শপথ, আমি আমার মৃত্যু পর্যন্ত কখনোই আর ওমরের সাথে কথা বলব না।” ¹⁷

ইয়াকুবী তার তারিখে লিখেছেন -

হযরত ফাতেমা বেরিয়ে এলেন এবং বললেন- “আল্লাহর দোহাই দিচ্ছি, আমার ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে যাও, নইলে আমি আমার মাথা অনাবৃত করে ফেলব এবং এলোকেশে আমার রবের দরবারে বিলাপ করব।” তখন লোকেরা, এমনকি যারা সেখানে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন তাঁরাও বেরিয়ে গেলেন। ¹⁸

ওহী গৃহে আক্রমণ সম্পর্কে রেওয়ায়েত আসছে - আবুবকর যে অসুখে মারা যান তাতে শয্যাশায়ী থাকাকালে বলেন-

“এ দুনিয়ায় যত কাজ করেছি তার কোনোটির জন্যেই আমি দুঃখিত নই কেবল তিনটি কাজ ব্যতীত। হায়! এ কাজগুলো যদি না করতাম! তিনটি কাজ - হায়! ফাতেমার গৃহের দরজা যদি না খুলতাম এবং তাকে সে অবস্থায়ই থাকতে দিতাম যদিও সে দরজা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্যে বন্ধ করা হয়েছিল।" ¹⁹

তারীখে ইয়াকুবীতে হযরত আবুবকরের শেষোক্ত বক্তব্যটি এরূপ উদ্ধৃত হয়েছে— “হায়! রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কন্যা ফাতেমার গৃহের দরজা যদি না খুলতাম এবং লোকদেরকে তাঁর ঘরে ঝাঁপিয়ে না পড়তাম, যদিও তা বন্ধ থাকার ফলে যুদ্ধ সংঘটিত হতো!” ²⁰ ...চলবে...

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha