শনিবার ৭ ডিসেম্বর ২০২৪ - ১৩:৫৭
গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা ও গনহত্যার খন্ড চিত্র

হাওজা / ফিলিস্তিনিদের হত্যার ক্ষেত্রে দখলদার ইসরায়েল কোনো কিছুই পরোয়া করছে না।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইউরো-মেডিটেরিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার খান ইউনিসে একদল ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে।

মানবাধিকার সংস্থাটি আরও বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক লোকদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় সরাসরি শরণার্থীদের তাঁবু লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এর ফলে ২০ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই ছিল শিশু। এছাড়াও আরো ১৮ জন আহত ও দগ্ধ হয়েছেন। এর আগেও আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

ফিলিস্তিনিদের হত্যার ক্ষেত্রে দখলদার ইসরায়েল কোনো কিছুই পরোয়া করছে না। গাজা যুদ্ধের এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ইসরায়েলি বাহিনী গণহত্যা থামায়নি। তারা তাঁবুসহ নানা ধরণের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র এবং শরণার্থী শিবিরগুলোতে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বর্তমানে ফিলিস্তিনি শহীদের সংখ্যা ৪৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং আহতের সংখ্যাও লক্ষাধিক।

গাজায় এখনও যারা বেঁচে আছেন তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন তাঁবু এবং শরণার্থী শিবিরে কোনো মতে দিনাতিপাত করছেন। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সামগ্রীও তাদের নেই। তবু রক্তপিপাসু ইসরায়েলি বাহিনী এসব অসহায় মানুষের ওপর বোমাবর্ষণ করছে, আগুন দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারছে।

গত বৃহস্পতিবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব এগনিস কালামার্ড গাজার সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং সেখানে অব্যাহত ইসরাইলি হামলা প্রসঙ্গে এক প্রতিবেদনে বলেছেন, সেখানে এখনও গণহত্যা চলছে। এই প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেছেন, ছয় মাসের নিবিড় গবেষণার পর আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি গণহত্যা চলছে। সব তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করার পর কেবল একটি উপসংহারেই পৌঁছা সম্ভব, আর তাহলো- ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে অতীতেও গণহত্যা চালিয়েছে এবং এখনও গণহত্যা চালাচ্ছে।

এটা ঠিক যে, গত কয়েক দশক ধরেই আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন ও সহযোগিতায় ফিলিস্তিনিদের ওপর হত্যা-নির্যাতন চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল, কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান গাজা যুদ্ধে ইসরাইল নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার এমন এক নজির সৃষ্টি করেছে যা অকল্পনীয় ও অবর্ণনীয়।

ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় যেন মানুষের গন্ধ শুকে বেড়াচ্ছে, যেখানেই মানুষের অস্তিত্ব আঁচ করছে সেখানেই চরম ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে। হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, নারী-শিশুদের আশ্রয় কেন্দ্র, অস্থায়ী তাঁবু- এসবের কোনোটিই তাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।

গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ সব অপরাধে সমর্থন দিয়ে এসেছে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো। নিজেদেরকে সভ্য হিসেবে দাবিদার এসব দেশ দাবি করছে, ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। কিন্তু এখন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসের ক্ষমতাসম্পন্ন ভারী অস্ত্রের ব্যবহার, প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহে বাধা এবং ২৪ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত গাজার ৯০ শতাংশ মানুষকে ঘরছাড়া করার ঘটনাবলী ইসরায়ললের দাবিগুলোকে সমর্থন করে না।

গাজার বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক দেশে প্রতিবাদ হচ্ছে, জনগণ ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার বিরোধিতা করছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অসংখ্য প্রতিবেদন থেকে এখন এটা সবার কাছেই স্পষ্ট যে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ শুরু করেছে তা প্রকৃতপক্ষে জাতিগত নিধনযজ্ঞ। আর এই নিধনযজ্ঞ চালানো হচ্ছে পশ্চিমা অর্থ ও অস্ত্রের মাধ্যমে। মার্কিন কংগ্রেসের প্রথম ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত আইন প্রণেতা রাশিদা তালিব সোশ্যাল নেটওয়ার্কে 'এক্স'-এ লিখেছেন- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নতুন প্রতিবেদন প্রকাশের পর কংগ্রেসে আমার সহকর্মীরা আর ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিষয়টি অস্বীকার করতে পারবেন না। আমাদের এখন ইসরাইলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব এগনিস কালামার্ড পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করে বলেছেন, যেসব সরকার ইসরায়েলকে অস্ত্র দিচ্ছে তারা কনভেনশন অনুযায়ী গণহত্যা রোধের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করছে এবং গণহত্যার সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

আসলে গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই পশ্চিমা দেশগুলো দ্বৈত নীতি অনুসরণ করছে। তারা একদিকে মানবাধিকারের কথা বলছে, আর অন্যদিকে অস্ত্র পাঠিয়ে মানুষ হত্যায় সরাসরি সহযোগিতা করছে। তারা এমন একটা ভান করছে যেন তারা গাজায় গণহত্যা থামাতে চাইলেও পারছে না, এই ভান করার একই সময়ে তারা গণহত্যার মূল হোতাকে অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে।

সূত্র: পার্স নিউজ

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha