সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ - ১১:৩৮
কুরআন ও হাদীসের আলোকে হযরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)’র মর্যাদা ও মহিমা

হাওজা / নবী করীম (সা.) বলেছেন, ফাতেমা আমার (অস্তিত্বের) একটি অংশ। যে তাকে সন্তুষ্ট করে, সে আমাকে সন্তুষ্ট করে; আর যে তাকে কষ্ট দেয়, সে আমাকে কষ্ট দেয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ফাতেমা যাহরা (সা.), মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় কন্যা, ইসলামে এক অনন্য ও মহিমান্বিত অবস্থানে অধিষ্ঠিত। তাঁর গুণাবলী ও অতুলনীয় মর্যাদা কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, যা সুন্নি উৎসেও উল্লেখ রয়েছে।

কুরআনের আলোকে হযরত ফাতিমা (সা.আ.)’র মর্যাদা

পবিত্রতার আয়াত (আয়াতুত তাতহীর):

“নিশ্চয়ই আল্লাহ চান যে, হে আহলে বাইত, তোমাদের থেকে সমস্ত অপবিত্রতা দূর করবেন এবং তোমাদের পরিপূর্ণভাবে পবিত্র করবেন।” [সূরা আহযাব ৩৩:৩৩]

অনেক সুন্নি আলেম, যেমন সহীহ মুসলিম ও তাফসির আত-তাবারিতে উল্লেখ করেছেন যে, এই আয়াত আহলে বাইতকে নির্দেশ করে, যার মধ্যে ফাতেমা, আলী, হাসান ও হুসাইন (আ.) অন্তর্ভুক্ত।

মবাহিলার আয়াত:

“এসো, আমরা আমাদের পুত্রদের ও তোমাদের পুত্রদের, আমাদের নারীদের ও তোমাদের নারীদের, এবং আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের আহ্বান করি, তারপর আন্তরিক প্রার্থনা করি এবং মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ কামনা করি।” [সুরা আল-ইমরান ৩:৬১]

এই আয়াত অবতীর্ণ হলে, নবী (সা.) ফাতেমাকে নারীদের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়ে আসেন, যা ইসলামে তাঁর মর্যাদার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। [সহীহ মুসলিম, বর্ণনা: পুণ্যের অধ্যায়]

হাদিসের হযরত ফাতিমা (সা.আ.)র মর্যাদা

ফাতেমা নবী (সা.)-এর অস্তিত্বের অংশ:

নবী করীম (সা.) বলেছেন,

“ফাতেমা আমার (অস্তিত্বের) একটি অংশ। যে তাকে সন্তুষ্ট করে, সে আমাকে সন্তুষ্ট করে; আর যে তাকে কষ্ট দেয়, সে আমাকে কষ্ট দেয়।”

[সহীহ বুখারি, হাদিস ৩৭৬৭; সহীহ মুসলিম, হাদিস ২৪৪৯]

জান্নাতের নারীদের নেত্রী:

নবী (সা.) বলেছেন,

“ফাতেমা জান্নাতের নারীদের নেত্রী, মারইয়াম বিনতে ইমরান ছাড়া।”

[মুসনাদ আহমদ, হাদিস ২৫৮২৪; সুনান আত-তিরমিজি, হাদিস ৩৮৭৩]

ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) ও ইমামতের বংশধারা

নবী করীম (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তাঁর পর নেতৃত্ব তাঁর পরিবারে থাকবে, যা ফাতেমা ও আলী (আ.)-এর (বংশের) মাধ্যমে অব্যাহত থাকবে।

বারোজন নেতা/খলিফার হাদিস

“এই ধর্ম সবসময় শক্তিশালী থাকবে যতক্ষণ না বারোজন খলিফা উপস্থিত হবে, যারা সবাই কুরাইশ বংশের।” [সহীহ মুসলিম, হাদিস ৪৪৭৮]

সুন্নি ভাষ্যকার যেমন ইবনে হাজার ব্যাখ্যা করেছেন যে, এই বারোজন খলিফা হলেন আহলে বাইতের ইমামগণ, শুরুতে ইমাম আলী (আ.) এবং ফাতেমা ও আলীর বংশধারা থেকে এগারোজন ইমাম অন্তর্ভুক্ত।

হাদীসে সাকালাইন

“আমি তোমাদের মাঝে দুটি ভারী বিষয় রেখে যাচ্ছি: আল্লাহর কিতাব এবং আমার বংশধর (আহলে বাইত)। যদি তোমরা এগুলো আঁকড়ে ধরো, তবে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না।” [সহীহ মুসলিম, হাদিস ২৪০৮; জামে আত-তিরমিজি, হাদিস ৩৭৮৮]

এই বর্ণনা আহলে বাইতের আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব এবং ফাতিমা ও আলী’র (আ.সা.) বংশধারার বারোজন ইমামের মর্যাদাকে তুলে ধরে।

নেতৃত্বের উত্তরাধিকার

ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) ছিলেন মহানবীর দুই প্রিয় নাতি, ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.)-এর মা। তাঁদের নবী (সা.) বর্ণনা করেছেন:

“জান্নাতের যুবকদের নেতা।” [সুনান আত-তিরমিজি, হাদিস ৩৭৬৮]

ইমাম হুসাইনের বংশধারা তাঁর পুত্র ইমাম জাইনুল আবেদিনের (আ.) মাধ্যমে অব্যাহত ছিল এবং তাঁদের থেকে পরবর্তী ইমামগণ, ইসলামের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা গঠন করেন।

উপসংহার

ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) ইসলামী আধ্যাত্মিকতা ও নেতৃত্বের এক অনন্য ভিত্তি। কুরআন ও হাদিস, বিশেষত সুন্নি উৎস, তাঁর অতুলনীয় মর্যাদা এবং ফাতিমা ও আলী (আ.)-এর মাধ্যমে ইমামতের ধারাবাহিকতাকে তুলে ধরে। পবিত্রতা, জান্নাতের নারীদের নেত্রী এবং নবীজির (সা.) মিশনের ধারাবাহিকতার প্রতীক হিসেবে তিনি মুসলিম উম্মাহর জন্য চিরন্তন দিশারি।

সংকলন ও অনুবাদ: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন জনাব আম্মার সাবিল

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha