সোমবার ১৩ জানুয়ারী ২০২৫ - ২০:৫৯
ইমাম আলী (আ.)

হাওজা / ১৩ ই রজব, হিজরি ৩০ কাবা ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইসলামের প্রথম ইমাম, হযরত আলী (আ.)।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী,

"الحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي جَعَلَنَا مِنَ الْمُتَمَسِّكِينَ بِوِلَايَةِ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ"

১৩ ই রজব, হিজরি ৩০ এ (৬০০ খ্রিস্টাব্দে) কাবা ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইসলামের প্রথম ইমাম, হযরত আলী (আ.)। তিনি ছিলেন জ্ঞানের দরজা, ন্যায় বিচারের প্রতীক এবং সত্য ও সাহসিকতার মূর্তিমান বিগ্রহ। তাঁর জীবন কুরআনের প্রতিফলন এবং তাঁর শিক্ষা মানবজাতির জন্য চিরন্তন পথপ্রদর্শক।

এই পবিত্র দিনে, আমরা তাঁর আদর্শ ও শিক্ষার আলোকে নিজের জীবনকে আলোকিত করার অঙ্গীকার করি। আসুন, আমরা ইমাম আলী (আ.)-এর জীবন থেকে জ্ঞান, ন্যায় এবং নৈতিকতার শিক্ষা গ্রহণ করি।

তেরোই রজব, জ্ঞানের দরজা ইমাম আলী (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিন ।এই শুভদিনে সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ।

ইমাম আলী (আ.):জ্ঞানের অমীয় ধারা

ইমাম আলী (আ.) ইসলামি ইতিহাসের এমন এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব, যিনি জ্ঞানের গভীরতা, প্রজ্ঞা এবং আধ্যাত্মিকতার জন্য বিখ্যাত। তাঁর জ্ঞান, কুরআন ও হাদিসের আলোকে প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছিলেন নবী করিম (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী, ইসলামি শাসনব্যবস্থার প্রথম ইমাম, এবং অসাধারণ জ্ঞানী একজন ব্যক্তি। তাঁর জন্ম পবিত্র কাবা ঘরে, যা ইঙ্গিত করে তাঁর অনন্য মর্যাদা।

করআনের আলোকে ইমাম আলীর (আ.) জ্ঞান:

কুরআন বারবার জ্ঞানের গুরুত্ব এবং বিশেষ কিছু মানুষের মর্যাদা উল্লেখ করেছে। ইমাম আলী (আ.) সম্পর্কে এসব আয়াতের অনেকাংশই প্রযোজ্য।

১. আলিমদের উচ্চ মর্যাদা:

আল্লাহ বলেন:

 "আল্লাহ তাদেরকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করবেন,যারা ঈমান এনেছে এবং যারা জ্ঞান অর্জন করেছে।" (সুরা মুজাদালাহ: ১১)

ইমাম আলী (আ.)-এর জ্ঞান ছিল ঐশ্বরিক এবং নবী করিম (সা.) সরাসরি তাঁকে শিখিয়ে ছিলেন। এজন্য তাঁকে 'বাবুল ইলম' বা জ্ঞানের দরজা বলা হয়।

২. ওলিল আমর এবং সত্য পথপ্রদর্শক:

আল্লাহ বলেন:

"হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তোমাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বশীল তাদের আনুগত্য কর।" (সুরা নিসা: ৫৯)

এই আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ করা হয়েছে, ইমাম আলী (আ.) হচ্ছেন সেই ওলিল আমরদের একজন, যাঁর জ্ঞান

ও নেতৃত্ব মুমিনদের জন্য পথনির্দেশক।

হাদিসের আলোকে ইমাম আলীর (আ.) জ্ঞান:

১. বাবুল ইলম:

নবী করিম (সা.) বলেছেন:

"আমি জ্ঞানের শহর এবং আলী তার দরজা। যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করতে চায়, সে যেন এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করে।" (তিরমিজি, মুসনাদ আহমদ)

এই হাদিস ইমাম আলী (আ.)-এর জ্ঞানের গভীরতা এবং তাঁর মাধ্যমে প্রকৃত জ্ঞানের প্রবেশপথ বোঝায়।

২. হাকিম এবং ন্যায় বিচারক:

নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন:

"আলী সর্বদা সত্যের সাথে থাকবে এবং সত্য আলীর সাথে থাকবে।" (সুনান তিরমিজি)

ইমাম আলী (আ.)-এর জ্ঞান তাঁকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিল, যা সব সময় ন্যায় ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।

৩. ইলমের প্রকাশ:

একবার নবী করিম (সা.) ইমাম আলী (আ.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন:

"আল্লাহ আমাকে যা শিখিয়েছেন, আমি তা তোমাকে শিখিয়েছি।"

এই উক্তি প্রমাণ করে, ইমাম আলী (আ.) নবীর সরাসরি শিষ্য ছিলেন এবং তাঁর মধ্যে নবীর ইলমের প্রতিফলন ঘটেছিল।

ইমাম আলী (আ.)-এর জ্ঞানের দৃষ্টান্ত:

১. নাহজুল বালাগার শিক্ষণীয় বক্তব্য:

ইমাম আলী (আ.)-এর ভাষণ, চিঠি ও উপদেশ সমগ্র 'নাহজুল বালাগা' একটি অসাধারণ জ্ঞান ভাণ্ডার। সেখানে ঈমান, ন্যায়বিচার, আখলাক এবং মানবিকতা নিয়ে তাঁর চিন্তা-ধারা প্রতিফলিত হয়েছে।

২. ব্যক্তিগত জীবন:

ইমাম আলী (আ.)-এর জীবন ছিল কুরআনের জীবন্ত মডেল। তিনি দারিদ্র্য, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর গভীর চিন্তাশক্তি এবং অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানব জাতির জন্য শিক্ষণীয়।

উপসংহার:

ইমাম আলী (আ.) ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, যাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শুধু তাত্ত্বিক নয়, বরং কর্মক্ষেত্রেও কার্যকর। কুরআন এবং হাদিসের আলোকে তাঁর জ্ঞান ও মর্যাদা প্রমাণিত। তাই তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে আমাদের উচিত তাঁর শিক্ষা ও আদর্শকে জীবনে অনুসরণ করা।

আলি (আ.)-এর মতো জ্ঞানী এবং ন্যায় পরায়ণ ইমামকে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ দান হিসেবে বিবেচনা করাই যথাযথ।

লেখক: কবির আলী তরফদার কুম্মি।

তারিখ: ১৩/০১/২০২৫

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha