হাওজা নিউজ এজেন্সি:
وَ اتَّقُوا یَوْماً لا تَجْزِی نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَیْئاً وَ لا یُقْبَلُ مِنْها شَفاعَةٌ وَ لا یُؤْخَذُ مِنْها عَدْلٌ وَ لا هُمْ یُنْصَرُونَ
তোমরা সেই দিনকে ভয় কর যেদিন কেহ কাহারও কোন কাজে আসিবে না, কাহারও সুপারিশ গ্রহণ করা হইবে না, কাহারও নিকট হইতে বিনিময় গৃহীত হইবে না এবং তাহারা কোনো প্রকার সাহায্যপ্রাপ্তও হইবে না। (সূরা বাকারা: ৪৮)
শাফাআত অর্থ কী?
শাফাআত শব্দটি «شفع» শব্দ থেকে “জোড়া লাগানো” অর্থে ব্যবহৃত হয়। পরিভাষায় কোনো ব্যক্তির বিপদ দূর করার জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়ানো বা তার প্রতি কোন ধরনের কল্যাণ ও মঙ্গলজনক কাজ করা। অর্থাৎ, যারা ঈমান, তাকওয়া ও আমলের সংমিশ্রিত পুঁজির অধিকারী হবে কেয়ামতের দিন যখন সেই পুঁজির মধ্যে ঘাটতি দেখা দিবে তখন মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের সেই পুঁজি বৃদ্ধি করে দিবেন।
সুতরাং, এই শাফাআত শুধুমাত্র তাদের নসীবে হবে, যারা চেষ্টা-প্রচেষ্টা করেছে কিন্তু নাজাত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আটকে পড়েছে এবং এজন্য কোনো এক শক্তির সাহায্যের প্রতি মুখাপেক্ষীতা অনুভব করছে, তাদের জন্য শাফাআত প্রযোজ্য হবে৷
পবিত্র কোরআনে প্রায় ত্রিশটি আয়াত শাফাআত সম্পর্কে নাযিল হয়েছে.যা কয়েক ভাগে বিভক্ত৷ যেমন:
১. একটি আয়াতে শাফাআত করার বিষয়কে নেতিবাচক হিসেবে বলা হয়েছে৷ আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারার ২৫৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
«یَوْمٌ لا بَیْعٌ فِیهِ وَ لا خُلَّةٌ وَ لا شَفاعَةٌ»
সেদিন না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব।
অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন কোনো ক্রয়-বিক্রয় বা কারো তোষামোদি বা সুপারিশ করা এ বিষয়টির অস্তিত্ব নেই।
২. সূরা সাজদার ৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে শাফায়াত শুধুমাত্র আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত।
«ما لَکُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَلِیٍّ وَ لا شَفِیعٍ»
“তিনি ব্যতীত তোমাদের কোনো অভিভাবক ও সুপারিশকারী নেই”।
৩. সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফাআত করতে পারবে না তথা অর্থাৎ তার অনুমতিক্রমে অন্য কেউ শাফায়াত করার ক্ষমতা লাভ করবে এরূপ বলা হয়েছে,
«مَنْ ذَا الَّذِی یَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ»
কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া?
৪. সূরা আম্বিয়ার ২৮ নম্বর আয়াতে যাদের জন্য শাফায়াত করতে পারবে তাদের বৈশিষ্ট্য ও শর্তাবলী বর্ণনা করা হয়েছে,
«وَلا یَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضی»
“তারা শুধু তাদের জন্যে সুপারিশ করবে, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট”
উপরোক্ত আয়াত মোতাবেক যাদের জন্য শাফাআত করা যাবে তাদের বৈশিষ্ট্য হল-
যাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট থাকবেন (সূরা আম্বিয়া:২৮)
যালিম বা অত্যাচারী হওয়া যাবে না; কারণ তাদের জন্য কোনো বন্ধু ও শাফায়াতকারী পাওয়া যাবে না। (মুমিন:১৮)
«ما لِلظَّالِمِینَ مِنْ حَمِیمٍ وَ لا شَفِیعٍ»
যালিমদের জন্যে কোনো বন্ধু নেই এবং সুপারিশকারীও নেই; যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে।
যারা ঈমান আনয়ন করেছে তাদের জন্য, আর ফেরেশতারা তাদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করে,
«وَ یَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِینَ آمَنُوا»
“এবং তারা (ফেরেশতারা) মুমিনদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে”।
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক সূরা তাহরীম এর দশ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
«فَخانَتاهُما فَلَمْ یُغْنِیا عَنْهُما مِنَ اللَّهِ شَیْئاً وَ قِیلَ ادْخُلَا النَّارَ مَعَ الدَّاخِلِینَ»
অতঃপর তারা (নূহ-পত্নী ও লূত-পত্নী) তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। ফলে নূহ ও লূত তাদেরকে আল্লাহ তা’আলার কবল থেকে রক্ষা করতে পারল না এবং তাদেরকে বলা হলঃ জাহান্নামীদের সাথে জাহান্নামে চলে যাও।
সুতরাং সেই শাফাআত কার্যকরী হবে, যে শাফাআত আল্লাহর আউলিয়ার সাথে সম্পর্কিত হবে এবং তার হতাশা সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। তবে শাফাআতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের বিষয়টি যদি মানুষের গুনাহ করার ক্ষেত্রে সাহস ও উদ্দীপনা সৃষ্টির কারণ হয়, তাহলে খ্রিস্টানরা যেমন বিশ্বাস করে যে, হযরত ঈসা (আ.) শূলে বিদ্ধ হয়ে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন যেন তাদের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়, তাহলে এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। অর্থাৎ আমরা যেন এরকম মনে না করে যে ওলী-আওলিয়াগণ আমাদের পাহাড় সমান গুনাহ থাকা সত্ত্বেও আমাদের জন্য শাফাআত করবেন।
উপরোক্ত আয়াতের বর্ণনা মোতাবেক আমাদের সামনে এটা স্পষ্ট হয় যে, শাফাআত করার এই বিষয়টি নিঃশর্তভাবে বাস্তবায়িত হয় না; বরং শাফাআত করার জন্য এবং শাফাআত গ্রহণ করার জন্য উভয় ক্ষেত্রেই কিছু শর্ত সাপেক্ষ বিষয় রয়েছে। যদি সেই শর্ত বিদ্যমান থাকে তবেই কারো ক্ষেত্রে শাফাআত প্রযোজ্য হয়। আর এই শাফায়াত কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালার অনুমতি ক্রমেই সংঘটিত হয়ে থাকে।
এজন্য যখন কোনো ব্যক্তির মধ্যে শাফাআত গ্রহণ করার শর্তাবলী বিদ্যমান থাকবে, কেবলমাত্র তখনই সে শাফাআত প্রাপ্ত হবে। আর যদি তার মধ্যে এই শর্তাবলী বিদ্যমান না থাকে তাহলে সে যদি নবীর স্ত্রীও হয়ে থাকে, তবুও সে শাফাআত লাভ করবে না। যেমনিভাবে হযরত নূহ (আ.) এর স্ত্রী এবং হযরত লুত (আ.) এর স্ত্রী তাদের পাপাচারিতা ও গুনাহের কারণে শাফাআত লাভ করবে না।
লেখা: নাজমুল হক (কোম, ইরান)
আপনার কমেন্ট