হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, যখন হযরত ইমরান (আ.) এর স্ত্রী গর্ভবতী হলেন তখন তিনি দুইটি কাজ করেছিলেন৷
এক, তিনি নিয়ত করেছিলেন যে, তার সন্তান (মরিয়ম) কে আল্লাহর খেদমতের জন্য উৎসর্গ করবেন৷
رَبِّ إِنِّي نَذَرْتُ لَكَ مَا فِي بَطْنِي مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّي إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
হে আমার পালনকর্তা! আমার গর্ভে যা রয়েছে আমি তাকে তোমার নামে উৎসর্গ করলাম সবার কাছ থেকে মুক্ত রেখে। আমার পক্ষ থেকে তুমি তাকে কবুল করে নাও, নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞাত।
দুই, তিনি তার সন্তানকে এবং তার বংশধরকে আল্লাহর আশ্রয়ের উপর সমর্পণ করেছিলেন৷
وِإِنِّي أُعِيذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
আর আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকে তোমার আশ্রয়ে সমর্পণ করছি। অভিশপ্ত শয়তানের কবল থেকে।
তার এই দুইটি কাজের ফলাফল ছিল নিম্নরুপ-
আল্লাহ তায়ালা এই সন্তানকে কবুল করেছিলেন৷
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُولٍ حَسَنٍ
অতঃপর তাঁর পালনকর্তা তাঁকে উত্তমভাবে গ্রহণ করে নিলেন।
আল্লাহ তায়ালা সর্বোত্তম উপায়ে তাকে লালন-পালন করেছিলেন৷
وَأَنبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا
এবং তাঁকে লালন-পালন করলেন-অত্যন্ত সুন্দর উপায়ে।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর একজন নবীকে এই সন্তানকে লালন-পালন করার জন্য নিয়োজিত করেছিলেন৷
وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّا
আর তাঁকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে সমর্পন করলেন।
তাফসীরে নুরের বর্ণনা অনুযায়ী, দুরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ তাদের সন্তান দুনিয়ার মুখ দেখার আগেই তাকে নিয়ে উত্তম পরিকল্পনা করে থাকে৷ তার প্রতিপালন এবং ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য সবকিছু পরিকল্পনা করে রাখে৷ যেমনটি আমরা হযরত মরিয়ম (আ.)’র মাতার ক্ষেত্রে দেখে থাকি৷ তিনি তার গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই আল্লাহ তায়ালার কাছে তার সন্তানকে সমর্পণ করে দিয়েছিলেন যদিও তিনি জানতেন না যে তার গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে৷
আর তিনি যে তার এই সন্তানকে "নাযর" বা মানত করেছিলেন আল্লাহর জন্য, তা ছিল একান্তভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য৷ আর হযরত মরিয়ম (আ.) কে মসজিদের খাদেম হিসেবে কেন তার মাতা মানত করেছিলেন? তার উত্তর হল- প্রাচীনকাল থেকেই মসজিদের খেদমত করাকে অনেক সম্মানের এবং গর্বের কাজ বলে গণ্য করা হত৷
তাফসীরে আল মীযানে আল্লামা তাবাতাবায়ী বলেছেন, হযরত মরিয়ম (আ.)এর মা জানতেন না যে, তার গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে৷ তারপরও তিনি নিঃশর্তভাবে আল্লাহর কাছে মানত করেছিলেন যে, তার গর্ভের সন্তান যাই হোকনা কেন, তিনি তাকে বায়তুল মুকাদ্দাসের খেদমত করার জন্য স্বাধীন করে দিবেন৷
আমাদের বর্তমান সমাজে, ছেলে সন্তানকে বংশের বাতি, আয়-রোজগারের একমাত্র মাধ্যম এবং বিভিন্ন ধরনের কাজ, বিশেষ করে যদি সেই কাজ মসজিদ সংশ্লিষ্ট হয় তাহলে তো তার সাথে কন্যা সন্তানের কোনো সম্পর্কই নেই এমনটি ধরা হয়৷ অথচ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত মরিয়ম (আ.)এর এই ঘটনা বর্ণনা করার মাধ্যমে আমাদেরকে দেখিয়েছেন যে, একজন কন্যা সন্তানও মসজিদের খাদেম হতে পারে এবং সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে৷
সুতরাং, আমাদেরকে নিয়ত করতে হবে যেন আমরা আমাদের সন্তানদেরকে আল্লাহর রাস্তায় প্রতিপালন করতে পারি এবং তাদেরকে শয়তানের অনিষ্টতা থেকে বাঁচিয়ে রাখতে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করতে পারি৷ যাতে সে মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত ও করুণা লাভ করতে পারে এবং উত্তম আত্মিক বিকাশ ও সমৃদ্ধির পথে যেতে পারে৷
আর উত্তম সন্তান প্রতিপালনের আগে সেই উত্তম সন্তান লাভের জন্য মহান আল্লাহর কাছে এভাবে প্রার্থনা করতে হবে-
رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاء
হে, আমার পালনকর্তা! তোমার নিকট থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান কর-নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (আলে ইমরান-৩৮)
আরেকটি আয়াতে মহান আল্লাহ আমাদেরকে সন্তান কামনা করার দোয়া এভাবে শিখিয়েছেন,
رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে একজন নেককার সন্তান দান কর। (সাফফাত- ১০০)
পরিশেষে বলা যায় যে, যেমনিভাবে সন্তান দেয়া বা না দেয়া এটা যেমন আল্লাহ তায়ালার একান্ত এখতিয়ারের উপর নির্ভর করেন, তেমনিভাবে তিনি কন্যা সন্তান দিবেন নাকি পুত্র সন্তান দিবেন সেটাও তাঁর উপর নির্ভর করে৷ আমাদের উচিত, আল্লাহ আমাদেরকে কন্যা দান করুন বা পুত্র, উভয় অবস্থাতে সন্তুষ্ট থাকা এবং এই সন্তান গর্ভে আসার আগ থেকেই সে যেন নেককার হয় সেজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা৷ অর্থাৎ, আমাদের মূল লক্ষ্য হবে একজন নেককার সন্তান কামনা করা৷ আর সন্তান দুনিয়াতে আসার পর আল্লাহর মর্জি মাফিক তাকে লালন-পালন করতে হবে এবং তাঁর খেদমতের জন্য তাকে উৎসর্গ করতে হবে৷ এটাই হল উপরোক্ত আলোচনার মূল বিষয়বস্তু৷
লেখা: নাজমুল হক (কোম, ইরান)
আপনার কমেন্ট