হাওজা নিউজ এজেন্সি, হযরত আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমুলি বলেছেন, আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন এত শক্তিশালী হতে যেন শত্রু আক্রমণ করার সাহস না পায়। কুরআনে বলা হয়েছে: "وَلْیَجِدُوا فِیکُمْ غِلْظَةً" অর্থাৎ শত্রুকে এমন দৃঢ়তা ও সাহস প্রদর্শন করতে হবে যাতে তারা আক্রমণ করতে ভয় পায়।
আজ উপ-রাষ্ট্রপতি ও পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইসলামী কুম সফরের অংশ হিসেবে আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমুলির বাসভবনে উপস্থিত হয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন।
আমেরিকার কোনো প্রকৃত অস্তিত্ব নেই
এই সাক্ষাতে আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমুলি বলেন, আমাদের জানতে হবে কে প্রকৃত বন্ধু এবং কে শত্রু। আমাদের শত্রু শুধু আমেরিকা নয়, কারণ আমেরিকার নিজস্ব কোনো প্রকৃত অস্তিত্ব নেই। যদি আমরা অভ্যন্তরীণভাবে শক্তিশালী হই, নিজেদের স্বার্থপরতা, দুর্নীতি, আত্মগৌরব ও বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা করি এবং দেশ থেকে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সুবিধাভোগ নির্মূল করতে পারি, তবে আমেরিকা বা অন্য কোনো শক্তি আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।
তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু আমাদের নিজেদের প্রবৃত্তি ও লোভ। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমার সবচেয়ে বড় শত্রু তোমার সেই নফস, যা তোমার বক্ষের মধ্যে আছে।’ আমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে জ্ঞান অর্জন করতে, সৎভাবে জীবনযাপন করতে এবং কারও পথে বাধা না দিতে, যাতে আমরা প্রকৃত বন্ধু ও শত্রুকে চিনতে পারি।
ইরানি জাতি মহান ও ঐতিহ্যবাহী এক জাতি
তিনি বলেন, আমরা ইরানি জাতি মহান ও সম্মানিত পূর্বপুরুষদের উত্তরসূরি। আমরা কেবল ধর্মীয় শিক্ষার্থী বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নই, বরং গোটা ইরানি জাতি একটি সমৃদ্ধ ও সভ্য জাতি।
তিনি আরও বলেন, তোমরা যদি আমেরিকার সর্বত্র ঘুরে দেখো, একটি ঐতিহাসিক নিদর্শনও পাবে না। কিন্তু ইরানের যেকোনো প্রান্তে গেলে হাজার বছরের পুরনো শিল্প ও ঐতিহ্যের নিদর্শন দেখতে পাবে। আমাদের উচিত নিজেদের ও আমাদের মূল্যবান ঐতিহ্যের মর্যাদা বোঝা।
একটি স্বাধীন জাতি হতে হলে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আহলে বাইতের শিক্ষা শুধু ধর্মীয় কর্তব্য ও নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তাঁদের আরও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাও রয়েছে, যা আমাদের পালন করতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, ইমাম আলী (আ.) বলেছেন: ‘যে জাতির কাছে পানি ও মাটি আছে, কিন্তু তারপরও যারা নিজেদের পরিচালনা করতে পারে না এবং অন্যদের ওপর নির্ভরশীল হয়, আল্লাহ তাদের থেকে রহমত দূরে সরিয়ে দেন।’ এই শিক্ষা কেবল অতীতের জন্য নয়, বর্তমান সময়েও সমানভাবে প্রযোজ্য। আমরা যখন পরমাণু শক্তি, তেল, গ্যাস, বিজ্ঞান ও মেধাবী যুব সমাজের মতো সম্পদ ও সক্ষমতা রাখি, তখন আমাদের উচিত স্বনির্ভর হওয়া, যেন আমরা অন্যদের মুখাপেক্ষী না হই।
তোমরা এত শক্তিশালী হও যেন শত্রু ভয় পায়
আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমুলি বলেন, আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা এত শক্তিশালী হও যে শত্রুরা তোমাদের ভয় পায়। কুরআনের আয়াত "وَلْیَجِدُوا فِیکُمْ غِلْظَةً" উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি অর্থহীন যুদ্ধের আহ্বান নয়, বরং আমাদের শত্রুর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত, যাতে তারা আমাদের ওপর হামলার সাহস না পায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নেতৃত্বের নির্দেশনাগুলো সুস্পষ্ট-ইমাম আলী (আ.) বলেছেন: ‘যেখান থেকে পাথর ছোড়া হবে, তা সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়ে দাও।’ আমাদের কখনও দুর্বল ও পরাধীন জাতি হওয়া উচিত নয়। বরং আমাদের এত শক্তিশালী ও স্বনির্ভর হতে হবে যে শত্রুরা আমাদের দেখে ভীত হয়ে পড়ে।
পরমাণু শক্তির ক্ষেত্রে ইরানের উন্নতি ও প্রতিরোধ
সাক্ষাতের শুরুতে পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইসলামী পরমাণু গবেষণা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, বিশ্বশক্তিগুলো বিশেষ করে আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো চায় না যে ইরান উন্নত প্রযুক্তি, বিশেষ করে পরমাণু শক্তির মতো ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করুক। এ কারণেই ইরান কঠোর আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের আওতায় রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আধুনিক পরমাণু প্রযুক্তি শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নয়, বরং এটি চিকিৎসা, বিশেষ করে ক্যানসার চিকিৎসা এবং পরিবেশগত উন্নয়নের জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই সাক্ষাতে আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমুলি জোর দিয়ে বলেন যে শক্তিশালী ও আত্মনির্ভরশীল হওয়াই জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মূল চাবিকাঠি।
আপনার কমেন্ট