হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামের দৃষ্টিতে ইমাম মাহদির (আ.)-এর অপেক্ষা শুধু একটি বিশ্বাস নয়, বরং এটি একটি দায়িত্ব ও দায়িত্বশীলতার প্রকাশ। যারা সত্যিকার অর্থে ইমামের আগমনের অপেক্ষা করছেন, তাদের শুধু বসে থাকা বা কেবল তাঁর আবির্ভাবের আশা করা যথেষ্ট নয়। বরং তাদের উচিত আত্মশুদ্ধি, ইসলামের নীতিমালা অনুসরণ এবং ইমামের জন্য দোয়া ও প্রার্থনায় অটল থাকা।
দোয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য
দোয়া শুধু ইবাদত নয়, এটি আত্মশুদ্ধির অন্যতম মাধ্যম। দোয়া আমাদের আল্লাহর সাথে সংযুক্ত করে এবং ইমাম মাহদির (আ.)-এর প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধকে আরও দৃঢ় করে। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন:
"আমার কাছে প্রার্থনা কর, আমি তা কবুল করব।"
ইমাম মাহদির (আ.)-এর জন্য দোয়া করা আমাদের জন্য এক ধরনের আত্মিক অনুশীলন, যা আমাদের ঈমানকে দৃঢ় করে এবং আমাদের সমাজ ও আত্মাকে প্রস্তুত করে ইমামের আগমনের জন্য।
কোন কোন দোয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
ইমাম মাহদির (আ.)-এর জন্য দোয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ দোয়া রয়েছে, যা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গণ্য হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু দোয়া হলো:
১. দোয়া নুদবা – ইমামের গায়বতের সময় তাঁর জন্য শোক প্রকাশ ও আগমনের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে এই দোয়া করা হয়।
২. দোয়া আহদ – প্রতিদিন সকালে এই দোয়া পড়লে, ইমামের সঙ্গীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়।
৩. দোয়া ফারাজ – ইমাম মাহদির (আ.)-এর আবির্ভাব ত্বরান্বিত করার জন্য বিশেষ দোয়া।
৪. দোয়া আল্লাহুম্মা কুন লি-ওলিয়্যিকা – যা জুমার রাতে বা সাধারণ সময়েও ইমামের জন্য পাঠ করা হয়।
প্রার্থনায় অটল থাকার মানসিকতা
প্রার্থনা শুধু মুখে উচ্চারণের বিষয় নয়, বরং এটি মনের গভীর থেকে আসা চাওয়া। ইমাম মাহদির (আ.)-এর অপেক্ষা করা মানে শুধু তাঁর জন্য প্রার্থনা করা নয়, বরং আমাদের নিজেদের চরিত্র, কাজ ও সমাজকে এমনভাবে গঠন করা যাতে আমরা তাঁর সঙ্গী হতে পারি। প্রার্থনার পাশাপাশি আমাদের উচিত:
আমল ও ইবাদতে মনোযোগী হওয়া – নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও নফল ইবাদতের মাধ্যমে আত্মিক উন্নতি সাধন করা।
আখলাক (নৈতিকতা) উন্নত করা – মিথ্যা, অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা – অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং ন্যায়ের পথে সমাজকে পরিচালিত করা।
ইমামের শিক্ষাকে অনুসরণ করা – ইমাম মাহদির (আ.)-এর শিক্ষা ও আদর্শ অনুযায়ী জীবন গঠন করা।
উপসংহার
ইমাম মাহদির (আ.)-এর জন্য অপেক্ষা করা শুধু একটি নিষ্ক্রিয় প্রত্যাশা নয়, বরং এটি একটি সক্রিয় দায়িত্ব। দোয়া ও প্রার্থনায় অটল থাকা শুধু ইমামের আগমনের জন্য প্রার্থনা নয়, এটি নিজেকে প্রস্তুত করার অন্যতম উপায়। তাই আমাদের উচিত এই গায়বতের সময় ধৈর্য ধারণ করা, আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখা এবং ইমামের জন্য নিরবচ্ছিন্ন দোয়া করা। এর মাধ্যমে আমরা শুধু ইমামের প্রকৃত অনুসারী হতে পারব না, বরং তাঁর আবির্ভাবের জন্য প্রকৃতপক্ষে নিজেদের প্রস্তুত করতে পারব।
লেখা: হাসান রেজা
আপনার কমেন্ট