শুক্রবার ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ - ১৯:৩১
বর্তমান ইমামকে ইমাম মাহদী (আ.ফা.)’র প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করুন

ইরানের ধর্মীয় নগরী কোমের জুমার খতিব বলেছেন, আয়াতুল্লাহিল উজমা জাওয়াদি-আমলী তাফসিরে তাসনিম সম্মেলনে স্পষ্ট করে বলেছেন, “ইমাম ও উম্মাহ ব্যবস্থা সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব, কারণ ইসলামী বিপ্লবও হযরত ওয়ালিয়ে আসর (আ.ফা.) এর আশীর্বাদ। আমাদের বর্তমান ইমামকে ইমাম মাহদী (আ.ফা.) এর প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।”

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ সৈয়দ মোহাম্মদ সাইদী ১০ ইসফান্দ ১৪০৩ (২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি) কোমের কুদস মসল্লাতে অনুষ্ঠিত জুমার খুতবায় তাফসিরে তাসনিমের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, সর্বোচ্চ নেতা এই সম্মেলনের আয়োজকদের সাথে সাক্ষাতের সময় তাফসিরে তাসনিমকে শিয়া ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের গর্ব হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, লেখকের যুক্তিবাদী চিন্তার শক্তি কিছু সূক্ষ্ম, নাজুক ও সুপ্ত ধারণাগুলোকে বোঝাতে সাহায্য করেছেন।

তিনি আরও বলেন, সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমলীর কাছে ঋণী এবং তিনি একটি মহান কাজ করেছেন, এই বইটি একটি রেফারেন্স, এই তাফসিরটি হাতে নিয়ে আমরা ইসলামী বিশ্বকে দেখাতে পারি যে, ‘আমাদের নিকট এটি আছে।’

কোমের জুমার খতিব বলেন, হযরত আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমলী তাফসিরে তাসনিম সম্মেলনে এই কাজকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ফলাফল হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং স্পষ্ট করে বলেছেন, “ইমাম খোমেনীর মহান কাজ ছিল যে তিনি শুধু রাজতন্ত্রকে প্রজাতন্ত্রে পরিবর্তন করেননি বরং ইমামত ও উম্মাহ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং নেতার অবস্থানকে আলেমদের স্থান থেকে নায়েবের স্থানে উন্নীত করেছেন। আমাদের দায়িত্ব হল ইমাম ও উম্মাহ ব্যবস্থা সংরক্ষণ করা, কারণ ইসলামী বিপ্লবও হযরত ওয়ালী আসর (আ.ফা.) এর আশীর্বাদ। আমাদের বর্তমান ইমামকে ইমাম মাহদী (আ.ফা.) এর স্থলাভিষিক্ত ও প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।”

হজরত ফাতিমা মাসুমা (সা.) এর পবিত্র মাজারের তত্ত্বাবধায়ক আরও বলেন, হযরত আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমলী শহীদ সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ সম্পর্কে বলেছেন, “শহীদ সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ বিশ্বকে নাড়া দিয়েছেন কুরআনের আশীর্বাদে। যখন তিনি কুরআন অনুযায়ী জীবনযাপন করেছেন এবং আহলে বাইত (আ.) এর সাথে ছিলেন তখন তিনি এই মর্যাদায় পৌঁছেছেন। এই পথ সবার জন্য উন্মুক্ত।”

তিনি আরও বলেন, এই ব্যবস্থায় সদগুণ, সততা, শহীদদের পরিবারের দেখাশোনা এবং শহীদদের সংস্কৃতিতে মনোনিবেশ করা আমাদের কর্তব্য, এই সেবার পথ সর্বদা উন্মুক্ত এবং বাধাহীন।

তিনি আরও বলেন, আজ পবিত্র শাবান মাসের শেষ জুমা। আবু সালত এই দিনে ইমাম রেজা (আ.) এর খেদমতে উপস্থিত হন এবং ইমাম (আ.) কিছু উপদেশ দিয়ে বলেন, বেশি বেশি দোয়া, ইস্তিগফার ও কুরআন তিলাওয়াত কর, তোমার গুনাহ থেকে তাওবা কর যাতে তুমি পবিত্র হয়ে রমজান মাসে প্রবেশ করতে পার, তোমার উপর যে আমানত ও ঋণ আছে তা পরিশোধ কর, মুমিনদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ বা অসন্তুষ্টি রেখো না, যে গুনাহে তুমি লিপ্ত আছ তা ত্যাগ কর, আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়ে আল্লাহর উপর ভরসা কর এবং এই দোয়া বেশি বেশি পড়: “হে আল্লাহ! যদি তুমি শাবান মাসের অতিবাহিত দিনগুলোতে আমাদের ক্ষমা না করে থাক, তবে এর অবশিষ্ট  দিনগুলোতে আমাদের ক্ষমা কর।”

কোম প্রদেশের ওলি ফকীহের প্রতিনিধি বলেন, সকলকে রমজান মাসের সম্মান রক্ষা করতে হবে এবং যারা রোজা রাখতে অক্ষম তারা যেন রমজান মাসের সম্মান নষ্ট না করে।

তিনি ১৩৫৭ (ফার্স সালে ইমাম খোমেনী (রহ.) এর ইমদাদ কমিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উল্লেখ করে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা নির্দেশ করে যে ইমাম খোমেনী বিপ্লবের শুরু থেকেই জনগণের দারিদ্র্য দূর করার কথা ভেবেছিলেন এবং জনগণও শুরু থেকেই দরিদ্রদের সাহায্যে উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে।

আয়াতুল্লাহ সাইদর প্রথম খুতবায় এই আয়াত উল্লেখ করে বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” তিনি বলেন, রোজার ফলাফল হচ্ছে তাকওয়া শক্তিশালী করা।

তিনি আরও বলেন, সূরা তাওবার ১১৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন: “আল্লাহ এমন নন যে, তিনি কোনো সম্প্রদায়কে হিদায়াত করার পর গোমরাহ করেন, যতক্ষণ না তিনি তাদেরকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন যে, তারা কী থেকে বেঁচে থাকবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞানী।”

কোমের জুমার খতিব বলেন, এই আয়াত অনুযায়ী, আল্লাহর হিদায়াত বিভিন্ন উপায়ে মানুষের কাছে পৌঁছায়, যেমন অভ্যন্তরীণ (ফিতরাত) এবং বাহ্যিক (নবীগণ)। কুরআনের আয়াত অনুযায়ী, আল্লাহ মানুষের আত্মায় তাঁর পরিচয় স্থাপন করেছেন এবং তাদেরকে বুদ্ধির মূলধন দিয়েছেন, যাতে তারা সঠিক ও ভুল পথ চিনতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আল্লাহ এই হিদায়াত বাহ্যিকভাবে নবীগণ ও আসমানী কিতাবের মাধ্যমে দিয়েছেন, যাতে মানুষ তা ব্যবহার করে সফলতা অর্জন করতে পারে এবং যদি তারা হিদায়াত অনুযায়ী সৎকাজ করে, তবে আল্লাহ তাদের জন্য তাঁর নেয়ামত বৃদ্ধি করেন।

কোমের ইমাম জুমা বলেন, যদি কেউ বিরোধিতা করে এবং আল্লাহর সুযোগ ও বার্তাগুলো ব্যবহার না করে, তবে আল্লাহ তাকে তার নিজের অবস্থায় ছেড়ে দেন এবং তার পথনির্দেশনা ও হিদায়াত থেকে দূরে সরিয়ে নেন। যখন এই বিষয়টি তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন আল্লাহর অনুগ্রহও মানুষের থেকে উঠে যায় এবং এটি আল্লাহর নিয়ম।

হযরত ফাতিমা মাসুমা (সা.আ.) এর পবিত্র মাজারের তত্ত্বাবধায়ক বলেন, এই আয়াত জ্ঞানদান পূর্বক শাস্তি দেয়াকে নাকচ করে। সূরা তাওবার ১১৫ নং আয়াত অনুযায়ী, যখন আল্লাহ কোনো বিষয় স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেননি এবং শরীয়তে তার ব্যাখ্যা আসেনি, তখন আল্লাহ কাউকে তা মানতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য শাস্তি দেন না।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, দায়িত্ব ও কর্তব্য সর্বদা ঘোষণার পর আসে। এই নীতি কুরআন ও হাদিসের পাশাপাশি যুক্তিতেও সমর্থিত এবং উসুলে ফিকহে এটি উল্লেখ করা হয়েছে।

কোমের ইমাম জুমা বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের হিদায়াত ও গোমরাহীর অর্থ জবরদস্তি নয়, বরং আল্লাহ মানুষকে নিজেকে রক্ষা করার উপায়, তাকওয়া, গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতার কারণগুলো দেখিয়েছেন এবং তার উপর দলীল পূর্ণ করেছেন এবং মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় কোন পথ বেছে নেবে।

তিনি বলেন, ইমাম মাহদী (আ.ফা.) এর গায়েবাতের সময় আল্লাহর বিধান পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ওয়ালিয়ে ফকীহ, মা’রাজে ও ফকীহদের উপর। ইমাম খোমেনী (রহ.) সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ প্রেসিডেন্ট গর্বাচেভকে লেখা চিঠিতে তাকে তাওহীদের পথে আসার এবং কমিউনিজম থেকে মুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এছাড়াও, সর্বোচ্চ নেতার দ্বিতীয় পদক্ষেপ ঘোষণা, ইরানের জনগণকে লেখা দুটি চিঠি এবং পশ্চিমা ও আমেরিকান যুবকদের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিও এই ঐশী দায়িত্বের কারণে।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha