রবিবার ১৬ মার্চ ২০২৫ - ১০:৩০
কুরআন কীভাবে গোত্র ও জাতিগত উপহাসকে জাতীয় হুমকি হিসেবে দেখায়?

সূরা হুজরাতের ১১ নং আয়াতে কুরআন কারীম স্পষ্টভাবে বিভিন্ন জাতির উপহাস করতে নিষেধ করেছে এবং সতর্ক করেছে যে এই অনুচিত আচরণ মানুষের সম্পর্ক নষ্ট করে এবং মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতি ধ্বংস করে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিন “জীবন গঠনকারী আয়াত” নিয়ে হাজির হচ্ছি; আমাদের সঙ্গেই থাকুন। কুরআন কারীমের কিছু আয়াত এবং সংক্ষিপ্ত ও প্রায়োগিক তাফসিরের সংকলন, যা জীবনের পথনির্দেশক এবং সৌভাগ্যের দিশারী। এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে রমজান মাসের দিনগুলোকে আল্লাহর কালামের আলোয় আলোকিত করুন।

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন আব্বাস আশজা ইসফাহানী:

«یَا أَیُّهَا الَّذِینَ آمَنُوا لَا یَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَیٰ أَنْ یَکُونُوا خَیْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ عَسَیٰ أَنْ یَکُنَّ خَیْرًا مِنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوا أَنْفُسَکُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ ۖ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِیمَانِ ۚ وَمَنْ لَمْ یَتُبْ فَأُولَٰئِکَ هُمُ الظَّالِمُونَ؛
হে মুমিনগণ! কোনো সম্প্রদায় যেন অন্য সম্প্রদায়কে উপহাস না করে, হতে পারে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম। আর নারীরা যেন অন্য নারীদের উপহাস না করে, হতে পারে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অপরের দোষ খোঁজ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমান আনার পর ফাসেক নামে ডাকা কতই না নিকৃষ্ট! আর যারা তওবা করে না, তারাই জালিম।

উপহাস করা এবং অশোভন ও মন্দ নামকরণ নিষেধ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

সূরা হুজরাতের ১১ নং আয়াত “অন্যকে উপহাস করা এবং অশোভন নাম বা উপাধি দেওয়া” সম্পর্কে আলোচনা করে।

এই আয়াতটি আমাদের বর্তমান জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। যদিও কুরআনের সকল আয়াতই জীবনে প্রায়োগিক গুরুত্ব রাখে, তবে এই আয়াতটি বিশেষভাবে এমন কিছু আচরণের প্রতি ইঙ্গিত করে যা দুর্ভাগ্যবশত তরুণ-তরুণী, ছেলে-মেয়ে এবং বড়দের মধ্যে ব্যাপকভাবে দেখা যায়।

অনেক মানুষ এই অনুচিত আচরণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন না হয়েই তা করে থাকে।

আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে বলেন:
یَا أَیُّهَا الَّذِینَ آمَنُوا؛
হে মুমিনগণ!

এটি মুমিনদের প্রতি সম্বোধন, যারা ইসলামে বিশ্বাসী।

এরপর তিনি বলেন:
لَا یَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ؛
কোনো সম্প্রদায় যেন অন্য সম্প্রদায়কে উপহাস না করে।

এই বাক্যটি স্পষ্টভাবে কোনো সম্প্রদায়কে উপহাস করতে নিষেধ করে, তা সে বাঙালি ও অবাঙালি কি়ংবা পাহাড়ি বা অন্য কোনো সম্প্রদায়ই হোক। এটি নির্দেশ করে যে কুরআনের দৃষ্টিতে কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে উপহাস করা নিন্দনীয় এবং “ঈমানের চেতনা” এর সাথে সাংঘর্ষিক।

এরপর আল্লাহ তাআলা উপহাস না করার যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করেন:
عَسَیٰ أَنْ یَکُونُوا خَیْرًا مِنْهُمْ؛
হতে পারে তারা (যাদের উপহাস করা হচ্ছে) তাদের (উপহাসকারীদের) চেয়ে উত্তম।

অন্য কথায়, যাদের উপহাস করা হচ্ছে, তারা এমন কিছু ইতিবাচক গুণাবলী রাখতে পারে যা উপহাসকারীদের অজানা।

একইভাবে নারীদের ক্ষেত্রেও এই বিধান প্রযোজ্য:
وَلَا نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ؛
এবং কোনো নারী যেন অন্য নারীকে উপহাস না করে।

এই আয়াতটি স্পষ্টভাবে ব্যক্তিগত, সামাজিক বা জাতিগত পর্যায়ে অন্যকে উপহাস করা নিন্দনীয় আচরণ হিসেবে উল্লেখ করে, যা মানুষের সম্পর্ক নষ্ট করে এবং মুসলমান ও মুমিনদের ঐক্য ও সংহতি ধ্বংস করে।

অশোভন ও মন্দ নামের পরিবর্তে সুন্দর নাম দেওয়া উচিত

আয়াতের অন্য অংশে “দোষ খোঁজা” সম্পর্কে বলা হয়েছে:
وَلَا تَلْمِزُوا أَنْفُسَکُمْ؛
এবং তোমরা একে অপরের দোষ খোঁজ করো না।

দুর্ভাগ্যবশত কিছু লোক সবসময় অন্যের দোষ খোঁজে এবং অপেক্ষা করে কে কোন ভুল করে, যাতে তাকে তিরস্কার করতে পারে।

এই আচরণটি শুধু গিবতই নয়, বরং দোষ খোঁজাও বটে এবং এটি ব্যক্তির উপর একটি বড় সামাজিক দায়িত্ব চাপায়। যখন দোষ খোঁজার খবর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কানে পৌঁছায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই পূর্বের ইতিবাচক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।

এগুলো কুরআন কারীমের নির্দেশনা, যারা কুরআন তিলাওয়াত করে এবং রমজান মাসে আল্লাহর সওয়াবের আশা করে। মনে রাখতে হবে যে কুরআনের সওয়াব এর আয়াতগুলোর উপর আমল করার মাধ্যমেই পাওয়া যায়।

আয়াতের অন্য অংশে নামকরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে:
وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ؛
এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না।

এই আয়াতে যেসব নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেগুলো আসলে এর বিপরীত আচরণকে উৎসাহিত করে। অর্থাৎ মন্দ নামের পরিবর্তে সুন্দর নাম দেওয়া উচিত।

এরপর আল্লাহ তাআলা বলেন:
بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِیمَانِ؛
ঈমান আনার পর (কাউকে) ফাসেক নামে ডাকা কতই না নিকৃষ্ট!

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম, ইমামগণ এবং কুরআনে বিশ্বাসী, তার পক্ষে এমন নাম বা উপাধি দেওয়া উচিত নয় যা ফাসেকি ও নিন্দনীয় আচরণের ইঙ্গিত দেয়।

আয়াতের শেষে বলা হয়েছে:
و من لم یتب فأولئک هم الظالمون؛
আর যারা তওবা করে না, তারাই যালিম।

এর অর্থ হলো, যদি কেউ এই নিন্দনীয় আচরণ থেকে তওবা করে, তবে আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করবেন, কিন্তু যদি তওবা না করে, তবে সে জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এবং আমরা জানি যে কুরআনে জালিমদের ব্যাপকভাবে নিন্দা করা হয়েছে।

আমরা আশা করি যে এই নিন্দনীয় বৈশিষ্ট্যগুলো ত্যাগ করে, যেগুলো থেকে আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে নিষেধ করেছেন, আমরা যেন জালিমদের অন্তর্ভুক্ত না হই এবং এই ঐশী নির্দেশনা মেনে চলার ইতিবাচক ফলাফল লাভ করতে পারি।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha