রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫ - ২০:৫১
হযরত ফাতিমা (সা.) এবং লাইলাতুল কদর

হযরত ফাতিমা (সা.) এবং লাইলাতুল কদর: ইমাম সাদিক (আ.)-এর ব্যাখ্যায় এক রহস্যময় সংযোগ

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, লাইলাতুল কদর (ফয়সালার রাত্রি) হলো সেই রাত, যেদিন পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছিল এবং মানুষের আগামী বছরের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। তবে, ইমাম জাফর আল-সাদিক (আ.)-এর এক অসাধারণ বর্ণনায় এই রাতকে হযরত ফাতিমা আল-যাহরা (সা.)-এর সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে, যা এই রাতকে এক গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য প্রদান করে।

তাফসির ফুরাত আল-কুফি-তে ইমাম আল-সাদিক (আ.) এই আয়াত সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন:

"নিশ্চয়ই আমি এটি অবতীর্ণ করেছি ফয়সালার রাতে।" (সূরা কদর: ১)

 "রাত্রি" (আল-লাইলাহ) দ্বারা বোঝানো হচ্ছে হযরত ফাতিমা (সা.), এবং "ফয়সালা" (আল-কদর) দ্বারা বোঝানো হচ্ছে সর্বশক্তিমান আল্লাহ।

অতএব, যে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে হযরত ফাতিমা (সা.)-কে চিনতে পেরেছে, সে-ই প্রকৃতপক্ষে লাইলাতুল কদর-এর বাস্তবতা উপলব্ধি করেছে।

কুরআন ও হাদিস থেকে মূল ব্যাখ্যা

 "তুমি কীভাবে জানবে, ফয়সালার রাত কী?" (কদর: ২)

এই বাক্যটি ইঙ্গিত করে যে লাইলাতুল কদরের প্রকৃত স্বরূপ মানুষের বোধগম্যের বাইরে এবং এটি বোঝার জন্য এক বিশেষ ধরণের আধ্যাত্মিক জ্ঞান প্রয়োজন।

"ফয়সালার রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।" (কদর: ৩)

ইমাম আল-সাদিক (আ.) ব্যাখ্যা করেছেন:
হযরত ফাতিমা (সা.) হাজার মুমিনের চেয়েও শ্রেষ্ঠ কারণ তিনি "উম্মুল মুমিনিন" (বিশ্বাসীদের জননী)।

"ফেরেশতারা এবং রূহ তাতে অবতীর্ণ হয় তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে, প্রত্যেক বিষয়ের ফয়সালার জন্য।" (কদর: ৪)

ইমাম আল-সাদিক (আ.) ব্যাখ্যা করেছেন:

 "ফেরেশতারা" দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে মুমিনরা আহলে বাইতের জ্ঞান ধারণ করে।

"রূহুল কুদুস" (পবিত্র আত্মা) দ্বারা বোঝানো হচ্ছে হযরত ফাতিমা (সা.) স্বয়ং।

"তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে প্রত্যেক বিষয়ের জন্য।" (কদর: ৪)

ফেরেশতাদের অবতরণ এবং পবিত্র আত্মার নাযিল হওয়া শুধু ফয়সালার জন্যই নয়; বরং তারা ঐশী আদেশ নিয়ে পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি (ওয়ালিয়্যুল্লাহ)-এর কাছে আসে।

 "এটি শান্তি, ভোরের উদয় পর্যন্ত।" (কদর: ৫)

ইমাম আল-সাদিক (আ.) ব্যাখ্যা করেছেন:

"শান্তি" দ্বারা বোঝানো হচ্ছে ইমাম মাহদি (আ.)। তাঁর পুনরাবির্ভাব অত্যাচারের সমাপ্তি ঘটাবে এবং ঐশী ভালো ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করবে।

উপসংহার: লাইলাতুল কদর, হযরত ফাতিমা (সা.)-এর জ্ঞান এবং ইমাম মাহদির (আ.)-এর পুনরাবির্ভাবের প্রস্তুতি

এই বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে লাইলাতুল কদর শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক রাতই নয় বরং এটি হযরত ফাতিমা (সা.)-এর জ্ঞানের প্রতীক এবং সৃষ্টির মধ্যে ঐশী নেতৃত্বের ভূমিকার পরিচায়ক।

প্রতিটি লাইলাতুল কদরে ফেরেশতারা ইমাম মাহদি (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ হন এবং তাঁর পুনরাবির্ভাবই হবে এই রাতের প্রকৃত ভোর (মাতলা আল-ফাজর)।

লাইলাতুল কদরকে প্রকৃতভাবে বুঝতে হলে হযরত ফাতিমা (সা.)-এর মর্যাদা এবং ইমামত ও ঐশী কর্তৃত্বের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে হবে।

সূত্র: তাফসির ফুরাত আল-কুফি, পৃষ্ঠা ৫৮১

লেখাসংগ্রহ ও অনুবাদ: আম্মার সাবিল

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha