রবিবার ২০ এপ্রিল ২০২৫ - ১৮:২৩
ইসলাম সৎকর্মের মূল্যায়নের ধর্ম  

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমীন আদেল বলেন, ওয়াকফ—এই ঐশী প্রথা এখন নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নাগালে এসেছে।  

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ওকাফ ও দাতব্য সংস্থার মুখপাত্র হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমীন আদেল "নগদ ওয়াকফ" বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ওয়াকফের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বলেন, এই ঐশী প্রথা বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে সকলের জন্য সহজলভ্য হয়েছে।  

ওকাফ সংস্থার সাংস্কৃতিক উপপ্রধান সমাজের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী দাতাদের নিয়তকে পরিচালিত করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, এই সংস্থার দুটি প্রধান দায়িত্ব রয়েছে: এক. পবিত্র স্থানসমূহের সেবা করা, দুই. ওয়াকফকারীদের উদ্দেশ্য সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন।  

তিনি মানব ইতিহাসে ওয়াকফের গভীর প্রোথিত শিকড়ের কথা উল্লেখ করে যোগ করেন, ইসলাম-পূর্ব যুগেও বিভিন্ন সমাজে ওয়াকফের প্রচলন ছিল। ইসলাম এই মহৎ প্রথাকে অনুমোদন ও কাঠামো দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের বহু দাতব্য কাজ জনগণের অংশগ্রহণ ও ওয়াকফের তহবিল দ্বারা পরিচালিত হয়।  

হুজ্জাতুল ইসলাম আদেল আরও বলেন, ইসলাম সৎকর্মের মূল্যায়নের ধর্ম। ওয়াকফ ইসলামী ফিকহের একটি স্বীকৃত বিষয়, যার ফলে দেশে এ পর্যন্ত ২৩০ হাজারেরও বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি নিবন্ধিত হয়েছে।  

ইসলামী বিধানে ওয়াকফের বৈচিত্র্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওয়াকফ সম্পত্তি সাধারণ ও বিশেষ বিভাগে বিভক্ত। ওয়াকফকারীদের ৮০৫ ধরনের নিয়ত অনুযায়ী এগুলো পরিচালিত হয়, যার মধ্যে সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলক, চিকিৎসা ও সহায়তামূলক কাজ অন্তর্ভুক্ত।  

ওকাফ সংস্থার মুখপাত্র জানান, দেশে বছরে গড়ে প্রায় ১,৫০০ নতুন ওয়াকফ নিবন্ধিত হয়। তবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে সকলের পক্ষে বড় অঙ্কের ওয়াকফ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই সীমিত আয়ের মানুষও যাতে এতে অংশ নিতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।  

হুজ্জাতুল ইসলাম আদেল ১৪০০ সালে মহান নেতার (রহবার) নগদ ওয়াকফের বৈধতা সংক্রান্ত ফতোয়ার কথা স্মরণ করে বলেন, মহান নেতা জোর দিয়েছেন যে টাকার মূল্যমান স্থায়ী হলে তা ওয়াকফ করা বৈধ। ফলে এখন শুধু জমি-জিরাত নয়, টাকাও ওয়াকফ করা যায়।  

তিনি বলেন, এটি বাস্তবায়নে প্রথমে কিছু মডেল ডিজাইন ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত নগদ ওয়াকফের আওতায় ২০টি প্রধান খাত নির্ধারণ করা হয়েছে, যা 'বাম' ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে মানুষের সহজলভ্য।  

তিনি উল্লেখ করেন, নগদ ওয়াকফের জন্য নির্বাচিত খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রীড়া, গবেষণা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈজ্ঞানিক কেন্দ্র, জ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, মেধাবী ব্যক্তিত্ব, পরিবেশ, মাদ্রাসা, শিক্ষার্থী, পবিত্র স্থান, মসজিদ, বন্দিমুক্তি, দরিদ্র, এতিম, সাংস্কৃতিক কাজ, প্রতিরোধ ফ্রন্ট, বিবাহ, চিকিৎসা, কুরআন ও আহলে বাইত (আ.)।  

ওকাফ মুখপাত্র জানান, গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৮.৬ বিলিয়ন টোমান নগদ ওয়াকফ সংগ্রহ করা হয়েছে। রমজান মাসে কুরআন, প্রতিরোধ ফ্রন্ট ও জ্ঞানভিত্তিক খাতকে লক্ষ্য করে ২৭ বিলিয়ন তুমানের বেশি তহবিল সংগ্রহ হয়েছে।  

তিনি ওয়াকফের টাকা বিনিয়োগ করে লভ্যাংশ থেকে ওয়াকফকারীদের উদ্দেশ্য পূরণের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন, জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানিগুলোকে সহায়তাও দেওয়া হবে, যাতে মূলধন সংরক্ষিত থাকে এবং ওয়াকফ বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha