হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানি ক্যালেন্ডারের দ্বিতীয় মাসের প্রথম দিনটি জড়িয়ে আছে শেখ মুসলেহ উদ্দিন সাদী শিরাজির স্মৃতির সাথে। এই দিনটি ইরানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও প্রভাবশালী কবি ও সাহিত্যিককে স্মরণ করার দিন, যার গদ্য ও পদ্য উভয়ই সংস্কৃতি ও সাহিত্যানুরাগী প্রতিটি ইরানির জন্য গর্বের বিষয়।
শেখ সাদীর সাহিত্যে প্রেমের উচ্চমার্গীয় অবস্থান
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও সাহিত্য সমালোচক ড. হোসেইন মোহাম্মাদী মোবারেজ বলেন, শেখ সাদী শুধু শব্দচয়নে অসাধারণ নন, বরং তাঁর কবিতা ও গদ্যে উচ্চমার্গীয় চিন্তার প্রকাশ ঘটেছে। এই বিখ্যাত ইরানি কবিকে প্রেমের কবি হিসেবে চেনে সবাই। তবে প্রেমের রয়েছে বিভিন্ন স্তর—জাগতিক প্রেম ও ঐশ্বরিক প্রেম। সাদী উভয় ক্ষেত্রেই মানবিক দর্শন ও তাওহিদী দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন।
তিনি আরও যোগ করেন, মজার বিষয় হলো, সাদীর প্রেমের গজলগুলোতে, যা দেখতে জাগতিক প্রেমের মতো মনে হয়, সেখানেও আমরা গভীর চিন্তার ছাপ দেখতে পাই। সাদী জোর দিয়েছেন যে প্রকৃত প্রেমের উৎস হলো আল্লাহর ইবাদত ও স্বর্গীয় ভালোবাসা।
শেখ সাদীর রচনায় জীবনদর্শন
এই গবেষক আরও উল্লেখ করেন, শেখ সাদীর মধুর ভাষার রচনাগুলো কেবল সাহিত্য নয়, বরং জীবনবোধের শিক্ষায় পরিপূর্ণ। বিশেষ করে পরিবার ও দাম্পত্য জীবনের ক্ষেত্রে সাদীর দর্শন হলো সম্মান ও স্থায়ী প্রেমের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলা। তবে সাদীকে শুধু প্রেমের কবি হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখা ঠিক হবে না। তাঁর রচনায় রাজনীতি, শাসনব্যবস্থা ও মানবিক দর্শনের গভীর উপলব্ধি রয়েছে, যা আজও আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক।
শেখ সাদী: আশার পতাকাবাহী
ড. মোবারেজ বলেন, শেখ সাদীর সময় ছিল যুদ্ধ, লুণ্ঠন ও হতাশার কাল। তবুও তিনি কবিতা ও গদ্যে বার্তা দিয়েছেন—কোনো অবস্থাতেই আশা হারানো যাবে না।
ইরানের ইতিহাসে অমর এই কবি ও দার্শনিক
লেখক ও সাংস্কৃতিক গবেষক ড. হামিদ হোনারজু বলেন, সাদী এমন এক কবি ও দার্শনিক যিনি ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের প্রেমিকদের তাঁর মধুর বাক্যের ছায়াতলে একত্র করেছেন।
তিনি আরও বলেন, সাদীর ভ্রমণকাহিনীগুলো শুধু কল্পনাপ্রবণ নয়, বরং হিকমত ও শিক্ষায় পরিপূর্ণ। তিনি মরক্কো, সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন, আর এই অভিজ্ঞতাগুলোই তাঁর 'বুস্তান' কাব্যে স্থান পেয়েছে।
অন্ধকার যুগে আশার আলো
হোনারজু স্মরণ করিয়ে দেন, শেখ সাদী বেঁচে ছিলেন ইরানের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার ও রক্তাক্ত সময়ে, যখন মোঙ্গলদের রক্তপাত থামেনি। তবুও তিনি ছিলেন আশার বার্তাবাহক।
প্রতিবেদক: সৈয়দ মোহাম্মদ মেহদী মুসাভী
আপনার কমেন্ট