হাওজা নিউজ এজেন্সি: মার্কিন বিমান হামলার তীব্রতা বৃদ্ধি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-সমর্থিত বাহিনীর হুদাইদা বন্দরে স্থল আক্রমণের গুঞ্জনে ইয়েমেন পরিস্থিতি অপ্রত্যাশিত মোড় নিতে পারে।
মার্কিন-আমিরাতি কৌশল ও হুদাইদার গুরুত্ব
২০২৫ সালের ১৫ মার্চ থেকে ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলা তীব্র হয়েছে, যার লক্ষ্য আনসারুল্লাহ (হুতি) প্রতিরোধকে দুর্বল করা এবং লোহিত সাগরে পশ্চিমাদের আধিপত্য বজায় রাখা। এতে ইয়েমেনের সামরিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বেসামরিক হতাহতের পাশাপাশি মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমিরাত-সমর্থিত ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্তর্বর্তী পরিষদ (STC) এর সশস্ত্র গোষ্ঠী হুদাইদা বন্দর দখলের জন্য স্থল আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মার্কিন বিমান সহায়তায় এই অভিযান সফল হলে, ইয়েমেনের লোহিত সাগরে প্রবেশের একমাত্র প্রধান পথ নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে পশ্চিমা মিত্রদের হাতে।
হুদাইদা বন্দর: ইয়েমেনের প্রাণকেন্দ্র
ইয়েমেনি সরকার-নিয়ন্ত্রিত হুদাইদা বন্দর কেবল বাণিজ্যিক গেটওয়ে নয়, দেশটির ৮০% মানবিক সহায়তা প্রবেশের প্রধান পথ। এই বন্দর দখল বা অবরুদ্ধ হলে ইয়েমেনে খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি চরমে পৌঁছাবে, যা বর্তমান দুর্ভিক্ষকে আরও ভয়াবহ করবে। জাতিসংঘ ইতিমধ্যে সতর্ক করেছে যে হুদাইদায় আক্রমণ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
আঞ্চলিক শক্তির দ্বন্দ্ব
- সংযুক্ত আরব আমিরাত: STC-কে সমর্থন করে লোহিত সাগরে নিজের প্রভাব বাড়াতে চায় এবং সৌদি আরবের সাথে প্রভাব প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে চায়।
- সৌদি আরব: ইয়েমেনে আট বছরের যুদ্ধের পরাজয়ের পর নতুন কোনো সামরিক অভিযানে জড়াতে অনিচ্ছুক। রিয়াদ আনসারুল্লাহর সাথে আলোচনার পথে হাঁটছে।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: ইসরায়েলি স্বার্থ রক্ষায় লোহিত সাগরে নৌ চলাচল নিশ্চিত করতে চায়, কিন্তু ইয়েমেনে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চাইছে না।
প্রতিরোধের শক্তি ও আনসারুল্লাহর ভূমিকা
আল-আকসা তুফান অভিযান প্রমাণ করেছে যে আনসারুল্লাহ লোহিত সাগরে প্রতিরোধ অক্ষের মূল স্তম্ভ। গত এক বছরে ৩৫০টিরও বেশি অভিযানের মাধ্যমে তারা ইসরায়েলগামী জাহাজের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে এবং ইলাত বন্দরকে অকার্যকর করেছে। মার্কিন হামলা সত্ত্বেও তাদের সামরিক সক্ষমতা অব্যাহত রয়েছে।
সম্ভাব্য পরিণতি
১. মানবিক বিপর্যয়: হুদাইদা দখল হলে ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষ ও রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব বাড়বে, যা আন্তর্জাতিক সমালোচনার জন্ম দেবে।
২. আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা: সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে সৌদি আরব, ওমান ও ইরান সরাসরি প্রভাবিত হবে।
৩. জ্বালানি বাজার অস্থির: বাব আল-মান্দাব প্রণালী অকার্যকর হলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বাড়তে পারে।
৪. প্রতিরোধের শক্তিশালীকরণ: আনসারুল্লাহর জনসমর্থন বাড়বে এবং তারা ইসরায়েল-মার্কিন লক্ষ্যবস্তুতে আরও হামলা চালাবে।
হুদাইদা আক্রমণ মার্কিন-আমিরাতি জোটের জন্য একটি উচ্চঝুঁকিপূর্ণ কৌশল, যা ইয়েমেনে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ ও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা ডেকে আনতে পারে। রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া এই সংকটের অবসান সম্ভব নয়। আনসারুল্লাহর সাথে আলোচনা এবং ইয়েমেনের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করাই একমাত্র টেকসই পথ।
সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, পার্সটুডে, জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় (OCHA)
আপনার কমেন্ট