হাওজা নিউজ এজেন্সি: নাইম কাসেম জোর দিয়েছেন যে হিজবুল্লাহ একটি মুক্তি আন্দোলন হিসেবে কাজ করছে, যা লেবাননের স্বাধীনতা রক্ষা, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রতিরোধ ও জাতীয় ঐক্যের অগ্রাধিকার
শেখ নাইম কাসেম বলেন, হিজবুল্লাহ লেবাননের অভ্যন্তরে এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর আন্দোলন হিসেবে কাজ করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা লেবাননের অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা রক্ষায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনার ভিত্তিতে কাজ করছি। এ জন্য আমরা অন্যান্য মিত্র ও প্রতিনিধিদের সাথে সহযোগিতা করি।
তিনি লেবাননের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, ইসরায়েলি আক্রমণে ধ্বংস হওয়া অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং আইনের শাসন জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ।
ইসরায়েল ও মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান
হিজবুল্লাহর মহাসচিব স্পষ্ট করে বলেন যে সংগঠনটি যেকোনো ধরনের দখলদারিত্ব, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জোরপূর্বক বসতি স্থাপন এবং ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিরোধিতা করে। তিনি ইসরায়েলি শাসন ও আরব সরকারগুলোর মধ্যে সম্প্রীতির প্রচেষ্টাকে ‘ফিলিস্তিনি স্বার্থের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি আরও যোগ করেন, আমাদের অঞ্চল মার্কিন আধিপত্য ও ইসরায়েলি আগ্রাসনের শিকার। আমরা প্রতিরোধের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করব।
যুদ্ধের মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ কৌশল
সাম্প্রতিক সংঘাতের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শেখ নাইম কাসেম বলেন, হিজবুল্লাহ যুদ্ধের ফলাফল বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা করছে। তিনি উল্লেখ করেন, শহীদ, আহত ও বন্দিদের ত্যাগের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমরা আমাদের নীতি ও কার্যক্রম পর্যালোচনা করছি যাতে ভবিষ্যতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
হিজবুল্লাহর অপরিবর্তিত নীতি
সাক্ষাৎকারের শেষে শেখ নাইম কাসেম স্পষ্ট করেন যে হিজবুল্লাহর প্রতিরোধ-ভিত্তিক নীতি অপরিবর্তিত থাকবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠাকালীন নীতিই আমাদের পথনির্দেশ করে। আমরা প্রয়োজনবোধে কৌশলগত সমন্বয় করব, কিন্তু লক্ষ্য অটুট রাখব।
পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট
হিজবুল্লাহ গত কয়েক দশক ধরে লেবাননে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সংগঠনটি ১৯৮২ সালে ইসরায়েলি দখলের বিরুদ্ধে গঠিত হয় এবং ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বর্তমানে এটি লেবাননের সংসদে উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্ব রাখে এবং ইরান ও সিরিয়ার কাছ থেকে সামরিক ও রাজনৈতিক সমর্থন পায়।
ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ উত্তেজনা গত এক বছরে তীব্র হয়েছে, বিশেষ করে গাজা যুদ্ধের পর থেকে। হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলা চালিয়েছে, এবং ইসরায়েল লেবাননে হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে।
শেখ নাইম কাসেমের এই সাক্ষাৎকারে হিজবুল্লাহর অভ্যন্তরীণ সংস্কার, প্রতিরোধ কৌশল এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাদের অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। সংগঠনটি তাদের লক্ষ্য অর্জনে কূটনৈতিক ও সামরিক উভয় পথেই কাজ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। লেবাননের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে হিজবুল্লাহর ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, বিশেষ করে যদি দেশটির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের সমাধানে তারা সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
সূত্র: এখতেরাত (লেবাননি প্রকাশনা)
আপনার কমেন্ট