মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫ - ১১:১৫
গাদীর আজকের সমাজে ঐক্য ও ন্যায়বিচারের বার্তা পুনর্জীবিত করে

সারি শহরের ‘মাদ্রাসা ইলমিয়া আল-জাহরা (সা.)’-এর শিক্ষক সাইয়্যেদা আতিয়া খাতেমি বলেছেন: গাদীর দিবস আজকের সমাজে ঐক্য, ন্যায়বিচার, সংহতি ও শান্তির বার্তা পুনরুজ্জীবিত ও সক্রিয় করে তোলে এবং সকলের জন্য সহমর্মিতা ও অগ্রগতির একটি সুস্পষ্ট পথ উন্মুক্ত করে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, সাইয়্যেদা আতিয়া খাতেমি বলেন: ঈদে গাদীর একটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় ঘটনা, যা হিজরি দশম সালের ১৮ই জিলহজ তারিখে সংঘটিত হয়েছিল। এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) হযরত আলী (আ.)-কে মুসলিম উম্মাহর নেতা ও উত্তরসূরি হিসেবে ঘোষণা করেন। এই ঘটনাটি মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী গাদীর খুম নামক স্থানে সংঘটিত হয় এবং এর পরেই ‘আয়াত একমাল’ (আজ আমি তোমাদের দ্বীন পূর্ণ করলাম...) নাযিল হয়, যা ইসলামের পূর্ণতা ঘোষণা করে।

তিনি আরও বলেন: গাদীরের বার্তা হল যোগ্যতা ও ইলাহি নির্দেশনার ভিত্তিতে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা; হযরত আলী (আ.)-কে নেতা হিসেবে মনোনয়ন এরই প্রতীক। এই নীতি আজকের সমাজে ব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্বাচনে একটি মডেল-যা যোগ্যতা ও নৈতিকতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। গাদীর একইসাথে ইসলামী উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। আজকের বিভাজিত সমাজে গাদীরের ঐক্যবদ্ধকারী বার্তায় ফিরে যাওয়া খুবই কার্যকর হতে পারে।

তিনি বলেন: গাদীর সামাজিক ন্যায়বিচার ও বঞ্চিতদের পক্ষে দাঁড়ানোর একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে, যা আজকের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মতো বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। গাদীরের ঘটনা ধর্ম ও রাজনীতির সংযোগকেও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে-যেখানে ধর্মের সমাজ ও রাজনীতিতে সক্রিয় উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, যাতে সমাজে ন্যায় ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত হয়।

তিনি আরও বলেন: গাদীর একটি পূর্ণাঙ্গ মডেল ইসলামী জীবনযাপনের জন্য-যা তাকওয়া ও মানবিক পূর্ণতার আলোকে মানুষকে দৈহিক, বৌদ্ধিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করে। এই ঘটনাটি ইসলামী সমাজে ঐক্য, নৈতিকতা, জ্ঞান, অর্থনীতি ও ক্ষমতার ভিত্তি এবং একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সমাজ গঠনের মূল নিয়ম হিসেবে বিবেচিত হয়।

খাতেমি উল্লেখ করেন: সামাজিক দায়িত্ব ও জনগণের অংশগ্রহণ গাদীরের আরেকটি বার্তা। সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি রাজনৈতিক ও সামাজিক ভবিষ্যতে অংশগ্রহণমূলক ভূমিকা রাখে এবং সমাজের বিষয়ে উদাসীন না থাকা-এটা গাদীরের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, যা আজকের দিনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও সচেতন দাবি উত্থাপনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়।

তিনি আরও বলেন: গাদীরের গুরুত্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের জন্য সহজ ও আকর্ষণীয় কন্টেন্ট তৈরি, ইন্টার‌্যাক্টিভ ক্যাম্পেইন, অনলাইন প্রতিযোগিতা ও সম্পর্কিত সফটওয়্যার প্রকাশের মাধ্যমে বার্তাগুলোকে আরও ব্যাপক ও প্রভাবশালী করে তুলতে পারে।

শেষে এই আলেমা বলেন: গাদীর, যা শিয়া মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব, বিশ্বাস, নৈতিকতা ও নেতৃত্বের মূলনীতিগুলোর সঙ্গে পুনঃসংযোজনের এক সুযোগ। যদি মুসলমানরা বিভেদ নয়, বরং পারস্পরিক মিলের ওপর গুরুত্ব দেন, তাহলে এই দিনটি ঐক্য ও সংহতি শক্তিশালী করার এক উৎকৃষ্ট উপলক্ষ হয়ে উঠতে পারে।

অতঃপর আতিয়া খাতেমি বলেন:

গাদীর শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং তা একটি বাস্তবমুখী আদর্শ-যা যোগ্য নেতৃত্ব, দায়িত্ববোধ, ঐক্য, ন্যায়বিচার ও ধর্ম-রাজনীতির সমন্বয়কে সামনে আনে, এবং প্রতিটি বিষয়ই আজকের সমাজে বাস্তবায়নযোগ্য ও অনুপ্রেরণাদায়ক।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha