হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হিজাব বা নারীর পর্দা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি পূর্ববর্তী ধর্ম যেমন ইহুদী, খ্রিস্টান ও জরথুস্ত্রীয় ধর্মেও ছিল। ঐতিহাসিক দলিল ও ধর্মীয় পাঠ্য থেকে জানা যায় যে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও সমাজে পর্দা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।
প্রশ্ন: আপনি বলছেন যে ইহুদি, খ্রিস্টান ও জরথুস্ত্রীয় ধর্মে পর্দা বা হিজাব ছিল — এ দাবির পেছনে কী ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে?
উত্তর: প্রথমেই বলা দরকার, পর্দা বা শালীন পোশাক — সেটা পুরুষ বা নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই — একটি প্রাকৃতিক এবং বিশ্বজনীন বিষয়। তাই প্রায় প্রতিটি সমাজে সম্পূর্ণ নগ্নতা নিন্দনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এবং মানুষ সাধারণত পশুর বিপরীতে কাপড় পরে। মতপার্থক্য রয়েছে কেবল পর্দার পরিমাণ ও রূপে, মূল ধারণাটিতে নয়।
ইসলাম-পূর্ব যুগের ইরানি নারীদের ছবি ও খ্রিস্টান চার্চের চিত্রকর্মে নারীদের পর্দা বা আবরণের চিত্র দেখা যায়। যদিও এই ধর্মগুলোর সমস্ত প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ এখন আমাদের হাতে নেই বা অনেকটাই বিকৃত হয়েছে, তাই কোনো নির্দিষ্ট বিধান না পাওয়া মানেই সেটি আদিতে ছিল না — এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো কঠিন।
মানব জাতির সৃষ্টি থেকেই হিজাবের উপস্থিতি
কোরআনে বলা হয়েছে, আদম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া যখন নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার পর তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ পেল, তখন তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদের ঢেকে ফেললেন:
"তাদেরকে প্রতারণার মাধ্যমে পথভ্রষ্ট করল। তারা যখন গাছের ফল আস্বাদন করল, তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশিত হলো এবং তারা জান্নাতের পাতা দ্বারা নিজেদের আবৃত করতে লাগল..." (সূরা আ'রাফ, ২২)
প্রাচীন ইরানে হিজাব
প্রাচীন ইরানের শিল্পকর্ম ও চিত্রে দেখা যায়, নারীরা প্রায় সম্পূর্ণ আবৃত থাকতেন।
গ্রিসে হিজাব
গ্রিসে নারীদের জন্য কঠোর পর্দা প্রথা চালু ছিল:
নারীরা একাকী বাইরে যেতে পারতেন না;
তারা কেবল আত্মীয়স্বজন বা ধর্মীয় উৎসবে অংশ নিতে পারতেন, তাও আবৃত অবস্থায় ও তত্ত্বাবধানে;
গৃহের অন্তঃপুরে তাদের রাখা হতো;
অতিথি এলে স্ত্রীদের দেখা যেত না।
জরথুস্ত্রী ধর্মে হিজাব
জরথুস্ত্রের যুগে ইরানি নারীদের পূর্ণ পর্দা পালন করার প্রমাণ পাওয়া যায়। ইতিহাসবিদ উইল ডুরান্ট লেখেন:
জরথুস্ত্রের সময়ে নারীরা উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ও সমাজে চলাচলে স্বাধীন ছিলেন;
তবে দারিয়ুসের পর ধনী পরিবারের নারীরা ধীরে ধীরে সমাজ থেকে গুটিয়ে পড়েন;
গর্ভবতী, হায়েজ চলাকালীন নারীকে আলাদা রাখা হতো, যা পরবর্তীতে ইসলামি পর্দা প্রথার ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়;
স্বামী থাকা নারীরা এমনকি তাদের পিতা বা ভাইয়ের সামনেও যেতে পারতেন না।
যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন যে, প্রাচীন ইরানে নারীর কোনো চিত্র পাওয়া যায় না, এটা হয়তো অতিরঞ্জিত। তবে যেসব চিত্র পাওয়া গেছে, সেগুলোতে নারীদের পর্দাশীল অবস্থাতেই দেখানো হয়েছে — যা ইসলামী পর্দার কাছাকাছি।
ইহুদি ধর্মে হিজাব
ইহুদি ধর্মে নারীদের পর্দা কঠোরভাবে আরোপ করা হতো:
নারীর মাথা খোলা থাকলে বা জনসমক্ষে চুল কাটা বা উচ্চস্বরে কথা বললে, স্বামী তাকে কোনো দেনমোহর ছাড়াই তালাক দিতে পারতেন।
তামার ও ইহুদার ঘটনা (বাইবেল, উদ্ভব ৩৮): তামার তাঁর বিধবা পোশাক খুলে মাথায় চাদর জড়িয়ে নিজেকে আড়াল করে রাস্তার পাশে বসে থাকেন — যেন কেউ তাঁকে চিনতে না পারে। এটি হিজাব বা আত্মগোপনের একটি নিদর্শন।
খ্রিস্টান ধর্মে হিজাব
খ্রিস্টধর্মের শুরুতে নারীদেরও পর্দা ছিল:
চার্চে নারীদের চুল খোলা অবস্থায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল;
কারণ, লম্বা চুলকে কামনার বস্তু হিসেবে দেখা হতো এবং এমনকি ফেরেশতারাও বিভ্রান্ত হতে পারে বলে মনে করা হতো।
উইল ডুরান্ট আরও লেখেন:
সম্ভ্রান্ত নারীরা দীর্ঘ লিনেনের পোশাক পরতেন, তার ওপরে লম্বা আবরণ থাকত যা পা পর্যন্ত যেত;
আরেকটি পাতলা জামা তারা পরতেন যা ব্যক্তিগত পরিবেশে আলগা থাকত, কিন্তু অপরিচিতদের সামনে আঁটসাঁট হতো।
এখনো কিছু ইহুদি সম্প্রদায় নারী রাবাইয়ের বিপক্ষে, এবং খ্রিস্টধর্মে অনেক সন্ন্যাসিনী পূর্ণ পর্দা পালন করেন।
ইসলাম ধর্মে হিজাব
ইসলামে নারীর পর্দা অপরিচিত পুরুষের সামনে আবশ্যক। এটি নারীকে মর্যাদা ও নিরাপত্তা প্রদান করে এবং সমাজে নৈতিক পরিবেশ রক্ষা করে। কোরআনে নারীদের জন্য পর্দা করা ফরজ করা হয়েছে।
আপনার কমেন্ট