হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, নতুন দিল্লি, ১৯ মে।
জান্নাতুল বাকি’র পবিত্র মাজারসমূহ ধ্বংসের এক শতাব্দী পূর্তিতে মাওলানা জলাল হায়দার নকভি রচিত ‘জান্নাতুল বাকি: ইতিহাস, বাস্তবতা ও প্রামাণ্য দলিল’ শীর্ষক বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় ওখলা’র বাবুল ইলম-এ।
এই উপলক্ষে অধ্যাপক আখতারুল ওয়াসে বলেন, “জান্নাতুল বাকি আমাদের বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি বিষয় এবং এটি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট মাজহাবের সমস্যা নয়। সেখানে আহলে বায়েত (আঃ), সাহাবায়ে কেরাম এবং মুত্তাহারাত উম্মাহাতুল মুমিনিনদের কবরসমূহ ধ্বংস করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “মাওলানা জলাল হায়দার নকভিকে অভিনন্দন জানাই, যিনি এই বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি গবেষণাধর্মী কাজ করেছেন। আমি জানি তিনি ভারতের মাটিতে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইমাম খোমেনির কুদস আন্দোলনকে জীবিত রেখেছেন এবং একইভাবে জান্নাতুল বাকি ইস্যুতে তাঁর কণ্ঠস্বর তুলে ধরছেন।”
বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে মাওলানা কাজী সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আসকারি বলেন, “মাওলানা জলাল হায়দার সাহেবের এই বইটি একটি মাইলফলক। শিরোনাম থেকেই বোঝা যায়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী গ্রন্থ।”
মাওলানা মোহাম্মদ আলী মোহসিন তকভি বলেন, “এই বইটি সময়ের দাবি ছিল। এক সময় ৮ শাওয়াল উপলক্ষে মাহফিল ও প্রতিবাদ হতো। আজ, জান্নাতুল বাকি প্রসঙ্গকে নতুন করে জাগিয়ে তোলার জন্য গবেষণার মাধ্যমেও কাজ হচ্ছে, যা প্রশংসনীয়।”
মাওলানা রইস আহমদ জারচভি বলেন, “মাওলানা জলাল হায়দার সাহেবকে অভিনন্দন জানাই। তিনি বড় একটি কাজ করেছেন। বইটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে লেখা হয়েছে, যা সচেতনতা সৃষ্টি করে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে—লেখবে কে, যদি পাঠক না থাকে? যে জাতির বই পড়ার চেতনা নেই, তাদের ইতিহাসও মনে থাকে না।”
মাওলানা মাকসুদুল হাসান কাসেমি বলেন, “প্রথমেই আমি লেখক মাওলানা জলাল হায়দার সাহেবকে অন্তরের গভীর থেকে অভিনন্দন জানাই। এক শতাব্দী আগে যখন জান্নাতুল বাকি ধ্বংস করা হয়েছিল, তখন দারুল উলুম দেওবন্দের মুফতিরা সম্মিলিতভাবে এর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন।”
মাওলানা হায়দার আব্বাস নোগানভি বলেন, “এই বইয়ের প্রকাশে অংশ নিতে পারা আমার জন্য গৌরবের। আমি সেই দিনটিও মনে করতে পারি, যেদিন জলাল সাহেব জামিয়া আল মুন্তাজির-এ ভর্তি হয়েছিলেন। আমি তখন ভাবিনি, তিনি এই আন্দোলনকে এত দূর এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এই বইটি একদিন মাইলফলক হয়ে থাকবে। এমন একটি দিন আসবে, যেদিন জান্নাতুল বাকি পুনরায় নির্মিত হবে এবং এই বইটি সেখানে রাখা হবে।”
মাওলানা আদিল ফারাজ নকভি বলেন, “মাওলানা জলাল হায়দার সাহেব এই মহৎ গবেষণাধর্মী কাজ সম্পন্ন করে প্রশংসার যোগ্য হয়েছেন। এই বইটি জান্নাতুল বাকি আন্দোলনের একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর।”
তিনি বলেন, “জান্নাতুল বাকি ধ্বংসের পর পুরো ইসলামী বিশ্ব, বিশেষ করে ভারত থেকে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া এসেছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেসব আওয়াজ নিস্তেজ হয়ে আসে। তবে এই বইয়ের মাধ্যমে আন্দোলনটি আবার নতুন রূপ পাবে।”
নিজ বইয়ের পরিচিতি দিতে গিয়ে মাওলানা জলাল হায়দার নকভি বলেন, “গত বছরগুলোতে ধ্বংসের বার্ষিকীতে নানা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু জান্নাতুল বাকি ধ্বংসের শতবর্ষে একশো বছরের ইতিহাসকে সংক্ষিপ্ত হলেও প্রামাণ্যভাবে একত্র করা প্রয়োজন ছিল। আমরা এই কাজটি করেছি এবং সফল হয়েছি।
খিলাফত কমিটির প্রতিবেদন এবং শিয়া কনফারেন্সের আন্দোলনসহ ১৯২৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এক শতাব্দীর দুঃখের ইতিহাসকে একত্র করা সহজ কাজ ছিল না, কিন্তু আল্লাহর শোকর যে তা সম্ভব হয়েছে। আমরা প্রাচীন ও সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের কাজ এতে অন্তর্ভুক্ত করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “মাওলানা আদিল ফারাজ, মাওলানা সাজ্জাদ রাব্বানি, মাওলানা তালিব হুসাইন এবং ‘নূর হিদায়াত ফাউন্ডেশন, লখনউ’— এদের সবাইকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, যাদের সহায়তা প্রতিটি ধাপে আমার সঙ্গে ছিল।”
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট আলেম ও বুদ্ধিজীবীরা অংশগ্রহণ করেন। শুরুতে মাওলানা তালিব হুসাইন পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন খ্যাতনামা বক্তা মাওলানা জিনান আসগর মোলাই। এই অনুষ্ঠান অল ইন্ডিয়া শিয়া কাউন্সিল-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়।
আপনার কমেন্ট