হাওজা নিউজ এজেন্সি: কিছু বর্ণনা ও প্রচলিত ধারণায় হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)’কে কেবল একজন গৃহিণী ও গৃহস্থালির কাজে নিবেদিত নারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়; অথচ ঐতিহাসিক দলিল ও নির্ভরযোগ্য ইসলামী সূত্রগুলো তাঁর একটি ভিন্ন ও অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা তুলে ধরে।
ফাদাক: কৃষিজমির চেয়ে বেশি কিছু
ফাদাক ছিল খাইবার ও মদিনার নিকটবর্তী একটি উর্বর অঞ্চল, যা ইহুদীদের সাথে রাসূল (সা.)-এর চুক্তির পর মুসলমানদের অধীনে আসে। কুরআনের আয়াত "وَآتِ ذَا الْقُرْبَی حَقَّهُ" (আর নিকটাত্মীয়কে তার প্রাপ্য দাও) অনুসরণ করে রাসূল (সা.) ফাদাক হযরত ফাতিমা (সা.)-কে দান করেন, যা সাক্ষী ও লিখিত দলিলসহ সম্পন্ন হয়।
ব্যবস্থাপনা ও আয়ের পরিমাণ
হযরত ফাতিমা (সা.আ.) ব্যক্তিগতভাবে ফাদাকের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করতেন। ঐতিহাসিক সূত্রমতে, ফাদাক থেকে বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ১২০,০০০ স্বর্ণমুদ্রা বা ২৪,০০০ দিনার। কিছু সূত্রে উল্লেখ আছে, ফাদাক ছাড়াও তাঁর অন্যান্য সম্পত্তি থেকে বছরে ১০,০০০ দিনার আয় হতো। বর্তমান হিসাবে এ পরিমাণ শত শত কোটি টাকার সমতুল্য।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভূমিকা
ফাতিমা (সা.)-এর এই আয় ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাসে নয়, বরং দান-খয়রাত ও সমাজ উন্নয়নে ব্যয় হতো। মদিনার গরিবরা প্রতি বছর তাঁর ঘরে এসে ফাদাকের আয় থেকে তাদের অংশ নিতেন। তিনি সদাচারের সাথে এই সম্পদ বণ্টন করতেন।
ফাদাক: ন্যায়বিচার ও মজলুমিয়াতের প্রতীক
রাসূল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর শাসকগোষ্ঠী ফাদাক জবরদখল করে নেয়। হযরত ফাতিমা (সা.) তাঁর অধিকার ফিরে পেতে আপ্রাণ চেষ্টা চালান। এটি শুধু আর্থিক বিষয় ছিল না, বরং এতে নিহিত ছিল আহলে বাইতের মর্যাদা রক্ষার দাবি।
উপসংহার: হযরত ফাতিমা (সা.) কেবল গৃহিণী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যবস্থাপক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। সম্পদ ব্যবস্থাপনা, আয় উপার্জন ও তা সঠিক খাতে ব্যয় করার এই দিকগুলো তাঁর জীবনের কম আলোচিত অধ্যায়, যা ইসলামে নারীর ভূমিকা সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারে।
আপনার কমেন্ট