হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, কোমের ‘হওযায়ে ইলমিয়াহ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকমণ্ডলীর প্রধান আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ হাশেম হুসেইনি বুশেহরী, ক্বোমের ইসলামি শিক্ষার শতবর্ষ পুনঃপ্রতিষ্ঠা উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। তিনি ইসলামের সংরক্ষণে আলেমদের ভূমিকা এবং হজ শেইখের অবদান সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন। বক্তব্যের সারাংশ নিচে দেওয়া হলো:
সম্মানিত ইমাম রেজা (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিনের অভিনন্দন
বক্তব্য শুরু করার আগে, আমি আন্তরিক ও বিনীতভাবে আপনাদের, আলেমসমাজ, মনীষীগণ, আয়াত ও হুজ্জাতদের প্রতি ইমাম আলী ইবনে মূসা রেজা (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিন উপলক্ষে অভিনন্দন জানাই।
রাহবারের বার্তা: হাওযাগুলোর জন্য এক নতুন রূপরেখা
সম্মেলনে উপস্থিত সকল আলেম ও সম্মানিত বোনদের উপস্থিতির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। পাশাপাশি সম্মেলনের আয়োজক মণ্ডলী, বিশেষত হাওযার পরিচালক ও শূরা সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অতিথিদের উপস্থিতিও আমি অত্যন্ত সম্মানিতভাবে স্বাগত জানাই।
তিনি বলেন, রাহবারের বার্তা যেন "হাওযাগুলোর দ্বিতীয় রূপরেখা"। ইমাম খোমেইনির (রহঃ) ঐতিহাসিক বার্তার পরে এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা। এতে বহু মূল্যবান ও কৌশলগত পরামর্শ রয়েছে যা শুধু ক্বোম নয়, বরং বিশ্বব্যাপী সকল ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্রের জন্য গুরত্বপূর্ণ।
রাহবার: সমস্যা চিহ্নিতই নয়, সমাধানও দিয়েছেন
রাহবার শুধু সমালোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং প্রতিটি সমস্যার যথাযথ সমাধানও দিয়েছেন। বার্তাটি ধাপে ধাপে, অতীত ইতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং হাওযা ও ইসলামী সরকারের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক—সবই সুনিপুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
হাজ শেইখের ঐতিহাসিক ভূমিকা
হাজ শেইখ আব্দুলকারীম হায়রীর কর্ম শুধু ধর্ম ও নৈতিকতার ক্ষেত্রেই নয়, বরং রাজনীতি ও সমাজেও এক বিপ্লব এনেছিল। আজকের ইসলামি প্রজাতন্ত্র যেন তাঁর সময়ের সংগ্রামের এক ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি।
রাহবার বলেছিলেন:
“এই বিপ্লব, হজ শেইখের আন্দোলনের ফল।”
ইমাম খোমেইনি বলেছিলেন:
“হাওযার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।”
এমনকি রেজাখান স্বীকার করেছিলেন:
“আমি সকলের সঙ্গে লড়াই করতে পারলেও, কোমের শেইখের মোকাবিলা করতে পারিনি।”
আলেমগণ: ঈমানের প্রহরী
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন:
“আমাদের আলেমগণ ইবলিস ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে সীমান্তরক্ষী।”
তারা শয়তানের প্রভাব থেকে সমাজকে রক্ষা করেন।
হাজ শেইখ ছিলেন ঈমানের প্রহরী ও দূরদর্শী নেতা
কোমে হাওযার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছিল ঐ ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতারই অংশ, যা আহলুল বাইত (আ.)-এর যুগ থেকে চলে এসেছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘাত-প্রতিঘাতে হওযা দুর্বল হয়ে পড়লেও, রেজাখানের শাসনকালে কিছু আলেম সিদ্ধান্ত নেন, এক দূরদর্শী নেতার হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে হবে। তিনজন ব্যক্তির মধ্য থেকে হজ শেইখ হায়রীকেই নির্বাচিত করা হয়, তাঁর অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের কারণে।
হাজ শেইখের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসমূহ
১. পবিত্রতা ও তাকওয়া: তিনি ছিলেন সর্বাধিক পরহেযগার।
২. বড় আলেমদের আস্থা: তিনি ছিলেন মিরজা শিরাজি ও শেইখ ফজলুল্লাহ নূরির শাগরেদ।
৩. উচ্চতর জ্ঞান: তিনি সামরা, কারবালা, নাজাফ—সব জায়গায় স্বীকৃত ছিলেন।
৪. পরিচালনার অভিজ্ঞতা: ইরাকে হওযা পরিচালনায় সফল ছিলেন।
৫. রাজনৈতিক সচেতনতা: ইতিহাসবিদরা ভ্রান্তভাবে ভাবেন তিনি রাজনীতি বিমুখ ছিলেন, অথচ তিনি গভীরভাবে রাজনীতির অবস্থা বুঝতেন এবং বিদেশি হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ ছিলেন।
৬. জনবান্ধবতা: সাধারণ জীবনযাপন, বিনয় ও জনতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তাঁর অন্যতম গুণ ছিল।
আপনার কমেন্ট